
এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা এখনো অপরিবর্তিত। উন্নতি–অবনতির কোনো লক্ষণ স্পষ্ট নয় বলে জানিয়েছে দলীয় নেতারা ও চিকিৎসকরা। দেশি–বিদেশি বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে চলছে তার চিকিৎসা।
রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। শারীরিক পরীক্ষার ধারাবাহিকতা গতকাল বুধবারও অব্যাহত ছিল। তবে তার অবস্থায় কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে জানিয়েছেন দলীয় নেতারা এবং চিকিৎসকরা।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কালবেলাকে জানান, “ম্যাডামের অবস্থা অপরিবর্তিত। আগের মতোই আছেন। উন্নতি বা অবনতি কোনোটাই বলা যাচ্ছে না।”
চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের একজন চিকিৎসক বলেন, খালেদা জিয়ার অবস্থা বর্তমানে স্থিতিশীল। তিনি জানান, ডাকলে খালেদা জিয়া কিছুটা সাড়া দেওয়ার চেষ্টা করছেন, তবে এটাকে আশাব্যঞ্জক উন্নতি বলা যাচ্ছে না। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটার ওঠানামা করছে, যা চিকিৎসকদের উদ্বেগে রাখছে।
প্রতিদিন রাতেই মেডিকেল বোর্ডের নিয়মিত দেড় ঘণ্টার বৈঠক হয়, যেখানে দেশি-বিদেশি অন্তত দেড় ডজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক যুক্ত থাকেন। লন্ডন ক্লিনিকের খ্যাতনামা চিকিৎসকরাও অনলাইনে যুক্ত হয়ে পরামর্শ দিচ্ছেন।
খালেদা জিয়া গত ২৩ নভেম্বর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য এভারকেয়ার হাসপাতালে যান। সেদিনই মেডিকেল বোর্ডের পরামর্শে তাকে ভর্তি রাখা হয়। ২৭ নভেম্বর তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয় এবং তখন থেকে তিনি নিবিড় পর্যবেক্ষণে আছেন।
তার চিকিৎসায় বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, কাতার, সৌদি আরব, পাকিস্তান ও ভারতের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও সহায়তা দিচ্ছেন। চীনের ১০ সদস্যের একটি চিকিৎসক দলও যুক্ত রয়েছে মেডিকেল বোর্ডের সঙ্গে।
চিকিৎসকরা বলছেন, এখনই কোনো ‘নিশ্চিত’ অগ্রগতির কথা বলা সম্ভব নয়—তবে সকলেই তার সুস্থতার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে ড. ইউনূস: অসুস্থ খালেদা জিয়াকে দেখতে গতকাল সন্ধ্যায় এভারকেয়ার হাসপাতালে যান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাকে স্বাগত জানিয়ে সরাসরি খালেদা জিয়ার কাছে নিয়ে যান। এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদার ও ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনও ছিলেন।
এর আগে দুপুরে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের খোঁজ নিতে হাসপাতালে যান অন্তর্বর্তী সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। পরে তার একজন ব্যক্তিগত কর্মকর্তা বলেন, ম্যাডাম (ফরিদা আখতার) বিএনপি চেয়ারপারসনকে দেখতে গিয়েছিলেন। উনি সিসিইউর ভেতরে গেয়েছিলেন। উনার সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসন রেসপন্স করেছেন। ইশারায় সালামের জবাব দিয়েছেন। তিনি আরও জানান, বেলা ১টা ৩৮ মিনিটে খালেদা জিয়ার শারীরিক খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার এভারকেয়ার হাসপাতালে প্রবেশ করেন। দুপুর ১টা ৫০ মিনিটে তিনি বের হয়ে আসেন। এই সময়ে খালেদা জিয়ার চিকিৎসক ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন উপদেষ্টা।
যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বিল ঢাকায়: খালেদা জিয়ার চিকিৎসা সহায়তায় যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বিল ঢাকায় এসেছেন। গতকাল সকালে বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান বলে জানান বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রিচার্ড বিল ঢাকায় নেমে প্রথমে একটি হোটেলে যান। তিনি দুপুরে এভারকেয়ার হাসপাতালে যান।
খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া ও ছাগল সদকা: খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় দেশবাসীর কাছে দোয়া-প্রার্থনা অব্যাহত রয়েছে। নেতাকর্মীরা তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ছেন এবং গরু-ছাগল সদকা করছেন। গতকাল বিকেলে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির উদ্যোগে মিরপুরের সিটি ক্লাবে পল্লবী ও রূপনগরের নেতাকর্মীসহ স্থানীয়দের নিয়ে দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। এতে মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল হকসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামনায় মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দানে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের আয়োজনে দোয়া মাহফিল হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ।
এদিকে খালেদা জিয়ার সুস্থতা কামানায় ও জানের ছাদকায়ে জারিয়া হিসাবে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মো. আইয়ুব হোসেন মুকুলের উদ্যোগে হিজলা মাদ্রাসা ও এতিমখানা, কালিগঞ্জ মহৎপুর রওজাতুল জান্নাত হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা এবং আশাশুনি কলিমাখালী এতিমখানায় এতিমদের মাঝে ছাগল উপহার দেওয়া হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



