শরীরে ক্যান্সারের ঝুঁকি বৃদ্ধিকারী জিনের পরিবর্তন (মিউটেশন) থাকলেও তা জানতেন না এক শুক্রাণুদাতা। জিনগত এই পরিবর্তনের বিষয়ে না জেনেই দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে শুক্রাণু দান করে তিনি ইউরোপের ১৪টি দেশে অন্তত ১৯৭ শিশুর জন্ম দিয়েছেন। ইউরোপীয় ব্রডকাস্টিং ইউনিয়নের ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিজম নেটওয়ার্কের অনুসন্ধানে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) এই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসার পর বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। খবর বিবিসির।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসিসহ ১৪টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম এই বিষয়ে যৌথ অনুসন্ধান নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, ওই দাতার শুক্রাণু থেকে জন্ম নেওয়া কিছু শিশু ইতোমধ্যে মারা গেছে। যারা এই পরিবর্তিত জিন পেয়েছে, তাদের মধ্যে একেবারে সামান্য সংখ্যক শিশু সারাজীবন ক্যান্সার এড়াতে পারবে বলে নিশ্চিত করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
২০০৫ সালে ছাত্রাবস্থায় পারিশ্রমিক নিয়ে বেনামে শুক্রাণু দান শুরু করেন ওই ব্যক্তি। তিনি সুস্থ থাকলেও জন্মের আগেই তার শরীরের কিছু কোষের ডিএনএ পরিবর্তিত হয়। এই পরিবর্তনে টিপি৫৩ নামের জিনটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা শরীরকে ক্যান্সার থেকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
জানা গেছে, দাতার শুক্রাণুর প্রায় ২০ শতাংশে বিপজ্জনক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এই আক্রান্ত শুক্রাণু থেকে জন্ম নেওয়া শিশুরা লি-ফ্রাউমেনি সিনড্রোম নামের এক মারাত্মক জিনগত অবস্থায় ভোগে, যাতে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়। বিশেষ করে শৈশব ও যুব বয়সে এবং পরবর্তী জীবনে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে।
লন্ডনের ইনস্টিটিউট অব ক্যান্সার রিসার্চের অধ্যাপক ক্লেয়ার টার্নবুল এটিকে একটি ভয়াবহ রোগ নির্ণয় আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটি পুরো পরিবারকে আজীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়, যা অত্যন্ত বিধ্বংসী।
ডেনমার্কের ইউরোপিয়ান স্পার্ম ব্যাংক এই ঘটনায় গভীর সহানুভূতি প্রকাশ করেছে। তারা স্বীকার করেছে যে কিছু দেশে ওই দাতার শুক্রাণু অতিরিক্ত সংখ্যক সন্তানের জন্মে ব্যবহৃত হয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা যায়, বেলজিয়ামের মতো দেশে একজন দাতার শুক্রাণু সর্বোচ্চ ছয় পরিবার ব্যবহার করতে পারার নিয়ম থাকলেও, ওই দাতার মাধ্যমে ৩৮ নারী ৫৩ সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।
ফ্রান্সের রুয়াঁ ইউনিভার্সিটি হাসপাতালের ড. এদুইগ ক্যাসপার জানান, পরিচয় শনাক্ত হওয়া ৬৭ শিশুর মধ্যে ২৩ জনের শরীরে জিনের পরিবর্তন ঘটে এবং তাদের মধ্যে ১০ জন ইতোমধ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছে। তিনি বলেন, খুব অল্প বয়সেই কয়েকজন মারা গেছে।
এই ঘটনা আন্তর্জাতিক শুক্রাণু ব্যাংকের ব্যবহার এবং দাতার সংখ্যা সীমিত করার বিষয়ে আবারও কঠোর আইন প্রণয়নের দাবি তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লাইসেন্সপ্রাপ্ত ক্লিনিক থেকে শুক্রাণু নেওয়া নিরাপদ হলেও, সব ধরনের জিনগত রোগ আগে থেকে স্ক্রিনিংয়ে ধরা অসম্ভব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



