কিশোরগঞ্জ (নীলফামারী) প্রতিনিধি: নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলায় নদী ভাঙ্গনে ১টি ব্রিজ, ২টি রাস্তা, ১টি এতিমখানা-মাদ্রাসা, ২টি মসজিদসহ প্রায় ৬ শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দেয়ায় বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আতঙ্কে অনেকের কাটছে ঘুমহীন রাত।
কয়েকদিনের টানা বষর্ণে হঠাৎ চারালকাটা ও ধাইজান নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভয়াবহ ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে এ উপজেলায়।
আজ শুক্রবার সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের কেশবা তেলীপাড়া গ্রামে নদী ভাঙ্গন বাড়ির কাছাকাছি এসে গেছে। যেকোন মুহূর্তে নদীগর্ভে যেতে পারে এখানকার ৫০টি পরিবারের বাড়িঘর। এ গ্রামে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে আরও ১০০টি বাড়িঘর। পার্শ্ববর্তী গ্রাম জুগিপাড়ায় নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে ৬০টি বাড়িঘর।
একই ইউনিয়নের রুপালী কেশবা গ্রামে আশরাফুল উলুম মাদ্রাসা-এতিমখানাসহ ৪০টি বাড়িঘর নদী ভাঙ্গনের হুমকিতে পড়েছে। কেশবা ময়দানপাড়া গ্রামে ঈদগাহ্ মাঠসহ ১০০টি বাড়িঘরও পড়েছে নদী ভাঙ্গনের কবলে। গদা বজলার মেম্বার বাড়ির সামনে বড়ভিটা-কিশোরগঞ্জ পাঁকা রাস্তা, সংলগ্ন মসজিদসহ ৪০টি বাড়িঘর নদী ভাঙ্গনে বিলীন হওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। রাস্তাটি ভেঙ্গে গেলে কয়েক হাজার লোকের চলাচলা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। এমনকি বড়ভিটা ইউনিয়নের সাথে কিশোরগঞ্জ উপজেলার যোগাযোগের সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে যাওয়ারও আশংকা দেখা দিয়েছে।
এদিকে চাঁদখানা ইউনিয়নের সরঞ্জাবাড়ী গ্রামে সরঞ্জাবাড়ী পুরাতন জামে মসজিদের কাছাকাছি ভাঙ্গন আসায় মসজিদটিসহ ১০টি বাড়িঘর নদীগর্ভে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। পার্শ্ববর্তী অবস্থিত সরঞ্জাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিও হুমকির মুখে পড়বে। একই ইউনিয়নের দক্ষিণ চাঁদখানা চাড়ালকাটা নদীর উপরে সারোভাসা ব্রিজের গোড়াসহ রাস্তাটি ভাঙ্গণের হুমকির মুখে পড়েছে। যেকোন মুহূর্তে রাস্তাটি ভেঙ্গে যেতে পারে। নদীগর্ভে ব্রিজের গোড়াসহ রাস্তাটি নদীগর্ভে গেলে চাঁদখানা ইউনিয়নের কয়েক হাজার লোকের কেল্লাবাড়ী ও তারাগঞ্জের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ে যাবে। এছাড়া ওই গ্রামের ২০০টি বাড়িঘর পড়েছেও ভাঙ্গনের হুমকিতে। এদিকে সরঞ্জাবাড়ী গ্রামে নদী ভাঙ্গণ মসজিদের কাছাকাছি আসায় এলাকাবাসী নিজেরাই বাঁশ দিয়ে পানির গতিপথ পরিবর্তন করায় ভাঙ্গণ সাময়িক বন্ধ করা গেছে। তারা জানান, সরঞ্জাবাড়ী পুরাতন জামে মসজিদ ভয়াবহ হুমকিতে রয়েছে। এখানে বাড়ি ঘরসহ একটি প্রাইমারি স্কুলের কাছাকাছি ভাঙ্গণ এসেছে।
কিশোরগঞ্জ সদর ইউপির তেলীপাড়া গ্রামের জেসমিন, মনজিলা, আঞ্জুয়ারা বেগম জানান, নদী ভাঙ্গণ ঘরের কাছাকাছি এসেছে। যেকোন সময় বাড়িঘর নদীতে ভেসে যেতে পারে। রাতে আমরা ঘুমাতে পারছি না। কখন বাড়িঘর নদীগর্ভে যাবে সে আতংকে। তারা জরুরীভাবে বাঁধ নির্মাণ করে বাড়িঘর রক্ষার দাবি জানান।
একই গ্রামের আব্দুল মজিদ জানান, আমার ১০ শতক জমি ছিল। ইতোমধ্যে ৯ শতক জমি নদীগর্ভে গেছে। অবশিষ্ট ১ শতক জমির উপর বাড়ি আছে। সেটিও নদীতে গেলে আমার বসবাস করার কোনও জায়গায় থাকবে না।
রুপালী কেশবা গ্রামবাসী জানান, নদী ভাঙ্গন রোধে জরুরীভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আশরাফুল উলুম মাদ্রাসাসহ এখানে ৪০টি বাড়ি ঘর নদীগর্ভে চলে যাবে।
অন্যদিকে কেশবা ময়দানপাড়াবাসী জানান, নদী ভাঙ্গন যেভাবে শুরু হয়েছে এতে বাড়ি ঘর ও ঈদগাহ মাঠটি রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
গদা গ্রামবাসী জানান, বজলার মেম্বারের বাড়ী সংলগ্ন নদী ভাঙ্গণে বড়ভিটা-কিশোরগঞ্জ রাস্তাটি হুমকির মুখে পড়েছে। নদী ভাঙ্গনে রাস্তাটি ভেঙ্গে গেলে কয়েক হাজার লোকের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে। এছাড়া মসজিদটি পড়েছে ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে। রাস্তা, মসজিদ ও বাড়িঘর ভাঙ্গন রোধে জরুরীভাবে বাঁধ নিমার্ণের দাবি জানান এলাকাবাসী।
চাঁদখানা ইউনিয়নের দক্ষিণ চাঁদখানা গ্রামবাসী জানান, নদী ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে সকাল বেলা সারোভাসা ব্রীজের গোড়ার দিকে ভাঙ্গন এসেছে। ব্রীজের গোড়াসহ ব্রীজ সংযোগ রাস্তাটি নদী ভাঙ্গনের কবলে যে কোন সময় পড়তে পারে। এটি ভেঙ্গে পড়লে ব্রীজটি যেমন হুমকীর মুখে পড়বে অন্যদিকে চাঁদখানা ইউনিয়নের কয়েক হাজার লোকের কেল্লাবাড়ী-তারাগঞ্জের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়বে।
চাঁদখানা ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজার রহমান হাফি জানান, সারোভাসা ব্রীজের গোড়াসহ চাঁদখানা ইউনিয়েনের সাথে যোগাযোগের রাস্তাটি নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। ভাঙ্গন ব্রীজের গোড়ার কাছাকাছি এসেছে। এছাড়া এ গ্রামের ২০০টি বাড়িঘর নদী ভাঙ্গনে নদীগর্ভে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।
সৈয়দপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডি মোফাখখারুল ইসলাম নদী ভাঙ্গনের বিষয়টি স্বীকার করে জুমবাংলাকে বলেন, নদী ভাঙ্গন এলাকাগুলো পরিদর্শন করে ভাঙ্গন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। দ্রুতই ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।
খবর পেয়ে নদী ভাঙ্গন এলাকাগুলো পরিদর্শন করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ্ আবুল কালাম বারী পাইলট, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল কালাম আজাদ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবুল কালাম আজাদ জুমবাংলাকে জানান, চাঁদখানা ইউনিয়নের সারোভাসা ব্রিজের গোড়াসহ রাস্তাটি, গদা রাস্তা, এতিমখানা ১টি, মসজিদ ২টিসহ ৬ শতাধিক বাড়িঘর ৭টি পয়েন্টে নদীগর্ভে যাওয়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসডি মোফাখ্খারুল সাহেব আমাদের সাথে সব এলাকা দেখেছেন। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হয়েছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ্ আবুল কালাম আজাদ জুমবাংলাকে বলেন, নদী ভাঙ্গন থেকে রাস্তা, ব্রিজ, প্রতিষ্ঠান, মসজিদসহ ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িঘর রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে বলা হয়েছে। তারা জরুরীভিত্তিতে ভাঙ্গন রোধে কাজ শুরু করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।