জ্বলনের বর্জ্য আমাদের গ্রহের বায়ুমণ্ডল দূষিত করে, এবং যতই সময় যাচ্ছে এরূপ অবস্থার ততই বেশি অবনতি ঘটছে। প্রতিটি মোটর গাড়ি বছরে বায়ুমণ্ডলে এক টন পরিমাণ অতি ক্ষতিকর পদার্থ নিক্ষেপ করে। তা প্রকৃতির মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে, সৌর রশ্মি আটকে রাখে, বড় বড় শহরের বায়ু বিষাক্ত করে তোলে।
পৃথিবীর পথে পথে চলছে ২৫ কোটিরও বেশি মোটর গাড়ি, আকাশে উড়ছে শত সহস্র বিমান, সমুদ্রগুলোতে চলাচল করছে হাজার হাজার জাহাজ, এবং প্রতিটি মোটর গাড়ি, প্রতিটি বিমান, প্রতিটি জাহাজ আকাশ মলিন করে। কিন্তু মানুষের অন্য উপায় নেই। সে নিরুপায়, কারণ তেল আর পেট্রলের মতো এত চমৎকার আর কোনো জ্বালানি মিলছে না।
তবে ভবিষ্যতে খুব সম্ভব মিলবে। এরূপ জ্বালানি হতে পারে হাইড্রোজেন। এমনকি মিখাইল লমনোসভও (প্রথম রুশ প্রকৃতিবিদ, কবি ও ইতিহাসবিদ) জানতেন যে হাইড্রোজেন আর অক্সিজেন মেলালে পাওয়া যায় পানি, নিঃসৃত হয় তাপ। এ ব্যাপারে আগ্রহী হলেন বিজ্ঞানী আর ইঞ্জিনিয়াররা। অনেকে মনে করেন যে হাইড্রোজেনই হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট জ্বালানি। প্রথমত, সাগর ও মহাসাগরের পানিতে তা সঞ্চিত আছে অতি বিপুল পরিমাণে। দ্বিতীয়ত, হাইড্রোজেন দহনের সময় কোথাও উবে যায় না। অক্সিজেনের সঙ্গে মিলিত হয়ে তা সেই একই পানি সৃষ্টি করে। সেই জন্য হাইড্রোজেন হচ্ছে সবচেয়ে নির্মল জ্বালানি।
হাইড্রোজেন ইঞ্জিনের নির্গমন চিমনি দিয়ে বের হবে অক্ষতিকর জলীয় বাষ্প। হাইড্রোজেন জ্বালানি কাজ করতে পারবে যেকোনো যানবাহনে, শিল্পে, বাড়িঘর গরম রাখবে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে। এখন রাসায়নিক পদ্ধতিতে হাইড্রোজেন উৎপন্ন করা হয় তেল থেকে। পদ্ধতিটি খুবই ব্যয়বহুল এবং তাতে হাইড্রোজেন মিলে কম। তবে অন্য একটি পদ্ধতিও রয়েছে—বৈদ্যুতিক পদ্ধতি। এর নাম ইলেকট্রলিজিস। পানির মধ্যে ছাড়া হয় প্রবল বিদ্যুৎ প্রবাহ। তা পানিকে বিভক্ত করে হাইড্রোজেন ও অন্যান্য অণুতে। হাইড্রোজেন হচ্ছে হালকা গ্যাস। তা ওপরিভাগে উঠে আসে এবং পানি থেকে লাফ মারে। ঠিক তখনই তাকে ধরে সিলিন্ডারে সংগ্রহ করা হয়।
ইলেকট্রলিজিসের জন্য অনেক বিদ্যুৎ প্রয়োজন। তাই আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিদ্যুৎ শক্তি থাকলেই আমরা ঠিকমতো হাইড্রোজেন নিষ্কাশন করতে পারি। আর সে পর্যাপ্ত অর্জিত হবে একমাত্র তখনই যখন পৃথিবীতে ঠিকমতো কাজ শুরু করবে পারমাণবিক ও থার্মোনিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো। তাহলে এরূপ একটি শিকল বা চেইন দেখা দিচ্ছে: নিউক্লিয়ার প্রক্রিয়া—বিদ্যুৎ—ইলেকট্রলিজিস—অক্সিজেন, ইঞ্জিনের জ্বালানি।
ইঞ্জিনিয়ার এমনকি ঠিকও করে ফেলেছেন, কার্যক্ষেত্রে এই চেইনটি কীরূপ দেখাবে। সাগর-মহাসাগরে নির্মিত হবে ভাসমান পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র। ওগুলোর বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হবে জলজ নিষ্কাশনের কাজে। প্রাপ্ত হাইড্রোজেন পাইপ মাধ্যমে প্রেরিত হবে স্থলে। কারখানায় এই হালকা গ্যাসকে পরিণত করা হবে তরল পদার্থে এবং পাইপ মাধ্যমে কিংবা সিলিন্ডারে করে যাদের প্রয়োজন তাদের দেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।