আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চাকরি করতেন ব্যাংকে। কিন্তু সামান্য এই চাকরি করে মোটেই পোষাচ্ছিল না উচ্চাকাঙ্ক্ষী আমান শাহ আহমেদের। চোখের সামনে এত রিংগিত (মালয়েশিয়া মুদ্রা)। কিন্তু সে রিংগিত ছোঁয়া যাবে না! কেন যাবে না? নিজেকে প্রশ্ন করে সুদর্শন ওই ব্যাংক কর্মী শুরু করেন ‘সামান্য’ চুরি।
কথায় আছে- চুরি করা মহাবিদ্যা। সেই বিদ্যা ভালই রপ্ত করেছিলেন আমান। যে ব্যাংকে চাকরি করতেন, সেটির গ্রাহকদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে রিংগিত সরাতে শুরু করেন তিনি। তার এই চুরির ঘটনা যখন প্রকাশ্যে আসে, তখন মালয়েশিয়াজুড়ে হইচই শুরু হয়। ‘এক শতাংশের চোর’ বলে পরিচিত হয়ে ওঠেন আমান শাহ।
একসঙ্গে মোটা অংকের রিংগিত নয়। আমানের লক্ষ্য ছিল অনেকের থেকে অল্প অল্প করে রিংগিত নিয়ে বড়লোক হওয়ার। তাই গ্রাহকদের ব্যাংকের কার্ড ব্যবহার করে শুরু করেন সামান্য পরিমাণ চুরির কাজ।
কিন্তু সেই চুরি এতটাই সন্তর্পণে হতো, এতটাই ছোট করে হতো যে কোনও গ্রাহকের চোখেই পড়ত না। ‘এক শতাংশের চোর’ বলা হলেও ওই পরিমাণ অংকও সরাতেন না আমান। তিনি সরাতেন আরও কম অর্থ। কিন্তু কীভাবে হতো সেই চুরি?
বয়স মাত্র ২৫ বছর। ঝকঝকে চেহারা। চোখেমুখে বুদ্ধির ছাপ। আমান শাহ আহমদ চাকরি পেলেন মালয়েশিয়ার হকহুয়া ব্যাংকে। সালটা ১৯৯০। এমনই প্রাণবন্ত এবং হাসিখুশি এই যুবক যে প্রায় সব সহকর্মীর সঙ্গেই তার দুর্দান্ত সম্পর্ক। ‘মানি মার্কেট প্রসেসিং ডিপার্টমেন্ট’-এর প্রধান পদে থেকে বেশ ভালই বেতন পেতেন আমান। কিন্তু শুধু ভালয় তার চলবে না, তাই শুরু করেন চুরি!
তবে সরাসরি চুরি নয়। বুদ্ধিমান আমানের প্রতারণার পন্থাটাই ছিল ভিন্ন। এ জন্য তিনি একটা কম্পিউটার কোর্স করে ফেলেন।
নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রত্যেক গ্রাহকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে কিছু রিংগিত কেটে নেয় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। সেটির পরিমাণ হয় খুবই সামান্য। ব্যাংক কর্মী আমান ঠিক সেই জায়গাটা ধরেই শুরু করেন চুরি। গ্রাহকদের অ্যাকাউন্ট থেকে সামান্য অংকের অর্থ সরানো শুরু করেন তিনি।
গ্রাহকদের ব্যাংক কার্ড থেকে এক শতাংশেরও কম করে অর্থ সরাতে শুরু করেন আমান। সেই চুরির অংকটা এমনই ছিল যে গ্রাহকরা ভাবতেন সে সব ব্যাংকিং চার্জ!
টাকা সরানোর কাজটা যাতে ঘুণাক্ষরেও কেউ টের না পানয়, সেজন্যও রাস্তা বের করেন এই ব্যাংক কর্মী। একটি কম্পিউটার ভাইরাস নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন তিনি। ওই ভাইরাস ব্যবহার করে তৈরি করেন অফিশিয়াল মেসেজ। ব্যাংক থেকে অর্থ তুললে মোবাইল ফোনে মেসেজ পান গ্রাহক। সেই রকম মেসেজ তৈরি করে ফেলেন আমান।
একটি ভাইরাসের মাধ্যমে ব্যাংকের এক পদস্থ কর্মকর্তার কম্পিউটারের তথ্য হাতিয়ে নেন ওই আমান। সবাইকে বোকা বানিয়ে এভাবেই তিনি চালিয়ে যান প্রতারণার কাজ।
পরে ব্যাংকের যত কম্পিউটার আছে, সবগুলো থেকে গ্রাহকদের তথ্য হাতের মুঠোয় নিয়ে নেন তিনি।
এইভাবে একটু একটু করে রিংগিত সরাতে সরাতে ওই ব্যাংক কর্মী ধনবান হতে শুরু করেন। বদলে যেতে থাকে তার জীবনধারা। বদল আসে চলনেও।
ছোট থেকেই দামি গাড়ির শখ আমানের। চুরির অর্থে তিনি শখপূরণ শুরু করেন। একে একে ছয়টি দামি গাড়ি কিনে ফেলেন। থাকার জায়গাটাও বদলে ফেলেন। রীতিমতো নবাবি চালচলন আর কি।
শুধু গাড়ি-বাড়ি করে শখ মেটানোই নয়। আমান শাহ বুঝতে পেরেছিলেন যেভাবে তিনি চাকরি করছেন এবং যে চাকরি করেন, তা দিয়ে বেশি দিন চলবে না। এভাবে দিনের পর দিন সবার চোখে ধুলা দেওয়ায় তো মুশকিল। তাই অন্য কিছু কাজের ছক কষেন তিনি। পকেটে যখন চুরির মোটা অর্থ, তখন ঠেকায় কে? একটি বড় বিজ্ঞাপনী সংস্থা খুলে ফেলেন আমান।
চুরি করে বড়লোক হয়েছেন। তাই খুব সাবধানি ছিলেন বুদ্ধিমান আমান। কিন্তু বেশি অর্থের সঙ্গে লোভও চাড়া দেয়। এবার এল ক্ষমতার লোভ। পরিচিতির লোভ। সেই জালেই জড়িয়ে ধরা পড়েন ব্যাংক কর্মী থেকে ধনবান উদ্যোক্তা হয়ে ওঠা আমান।
দূর থেকে দেখলে আমানের উত্থান চমকপ্রদ। অল্প বয়সে ভাল চাকরি। সেখান থেকে উদ্যোক্তা। প্রচুর অর্থ। বিশাল সম্পত্তি। এমন একজন মানুষই তো অন্যদের অনুপ্রেরণা দিতে পারেন! টিভি শোয়ে ডাক পেলেন আমান। তার ইন্টারভিউ নিল মালয়েশিয়ার একটি টিভি চ্যানেল। আর তার পরেই পড়লেন ধরা।
আমানের ওই সাক্ষাৎকার দেখেন তার ছেড়ে আসা কর্মস্থলের লোকজন। দেখেন সেই ব্যাংকের ম্যানেজারও। অনেক দিন থেকেই সন্দেহ ছিল তার। আমান তার সাক্ষাৎকারে এমন কিছু কথা বলেছিলেন, যা শুনে ভাল লাগেনি ওই ব্যাংক ম্যানেজারের। তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন।
আসলে আমান ব্যাংক ছাড়ার আগেই বেশ কয়েকজন গ্রাহক অভিযোগ করেছেন। ব্যাংক ম্যানেজারের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। অভিযোগ জানানোর তিন দিনের মাথায় গ্রেফতার হন আমান।
তখন আমনের বয়স ২৬ বছর বছর। আদালত তাকে অপরাধী ঘোষণা করে। পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় ওই যুবককে। মূলত উপরে ওঠার শর্টকার্টই ধ্বংস করে আমানকে। তথ্যসূত্র: সিলিসস, জেমপাক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।