জুমবাংলা ডেস্ক : আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটের আকার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৮ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) বাজেটের চেয়ে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া আগামীর বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ৫ দশমিক ৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হতে পারে। আর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার হতে পারে ২ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের মূল এডিপি বাজেট ছিল ২ দশমিক ৬৫ লাখ কোটি টাকা। নতুন অর্থবছরের বাজেট নিয়ে অর্থনৈতিক সমন্বয় পরিষদের বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে অর্থ এবং পরিকল্পনা বিভাগকে বাজেট প্রস্তুতির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বাজেটে স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খবর অর্থ বিভাগ সূত্রের।
জানা গেছে, আগামী জুনে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ প্রথম বাজেট উপস্থাপন করবেন। আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার লক্ষ্যে একটি নিয়ন্ত্রণমূলক বাজেট প্রণয়ন করতে যাচ্ছেন অর্থ উপদেষ্টা। পাশাপাশি আর্থিক খাতে সুশাসনও নিশ্চিত করতে চান তিনি। বিনিয়োগ বাড়াতে বাজেটে উন্নয়ন ও রাজস্ব ব্যয়ে উল্লেখযোগ্য কাটছাঁটের পরিকল্পনাও রয়েছে তার।
প্রতি বছর বাজেট বাস্তবায়নে তেমন জোর না দিয়েও আকার বাড়িয়েছে পতিত শেখ হাসিনার সরকার। এতে শুধুমাত্র আকারের দিক থেকেই প্রতি বছর রেকর্ড করেছে বিগত সরকার। সেই তুলনায় আগামী অর্থবছরে বাজেটের আকার বাড়ছে না। একই সঙ্গে এ বছর আগেভাগে বাজেট সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা।
এদিকে, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) তাদের ঋণের শর্তে বলেছে, ২০২৬-২৭ অর্থবছরের মধ্যে সার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বকেয়া ভর্তুকি পরিশোধ করতে হবে। সুষ্ঠুভাবে আর্থিক ব্যবস্থাপনার স্বার্থে ভর্তুকি বকেয়া না রাখার শর্ত দিয়েছে সংস্থাটি। ফলে সরকার ভর্তুকিতে বরাদ্দ বাড়াবে। সার, বিদ্যুতের বকেয়াসহ ভর্তুকির প্রায় পুরোটাই চলতি অর্থবছরেই পরিশোধ করবে সরকার। এ জন্য সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে প্রায় ৭৫ হাজার কোটি টাকা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি রোধে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে সরকারি ব্যয়েও সাশ্রয়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় ধরনের কাটছাঁট হচ্ছে। এ ছাড়া অর্থবছরের শুরু থেকে আন্দোলন ও পরে আগস্টে ক্ষমতার পালাবদলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পাশাপাশি প্রশাসনে রদবদলের ধাক্কায় উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ধীরগতি রয়েছে।
সাধারণত পরিচালন বাজেট থেকে ভর্তুকির অর্থ পরিশোধ করা হয়। আর উন্নয়ন বাজেটের আওতায় এডিপির বিভিন্ন প্রকল্প সরকারি ও দাতা সংস্থার যৌথ অর্থায়ন, শুধু দাতাদের অর্থায়ন, শুধু সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব অর্থে বাস্তবায়ন হয়। উন্নয়ন বাজেটের সরকারের নিজস্ব বেঁচে যাওয়া অর্থের প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বাবদ পরিশোধ করবে অন্তর্বর্তী সরকার।
জানা গেছে, গত দুই অর্থবছরের বরাদ্দের চেয়ে বেশি চাহিদা থাকায় সার, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বাবদ প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকার বকেয়া রয়ে গেছে। একই সঙ্গে চলতি অর্থবছরে এ খাতে ৪০ থেকে ৪৫ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকি পরিশোধের প্রয়োজন হবে। চলতি অর্থবছরই যতদূর সম্ভব ভর্তুকি বাবদ পাওনার পুরোটাই পরিশোধ করতে চায় সরকার। এ জন্য বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি), বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি), পেট্রোবাংলা, বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করে তাদের কত ভর্তুকি বকেয়া, চলতি অর্থবছরে কত প্রয়োজন হবে, সব তথ্য নেওয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ভর্তুকি বাবদ ৭৫ থেকে ৮০ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হতে পারে।
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে সার ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ ছিল ৪৭ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ বাড়িয়ে ৭৫ হাজার কোটি টাকা করা হচ্ছে। ভর্তুকি-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে বিল দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ভর্তুকির পুরোটাই পরিশোধ করা হলেও বাজেট ঘাটতি ৫ শতাংশের বেশ খানিকটা নিচে থাকবে বলেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রাথমিক হিসেবে উঠে এসেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।