জুমবাংলা ডেস্ক : নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের ১০ হাজার ১৬১ টাকা বেতনের (মাস্টার রোল; অস্থায়ী) পিওন মোহাম্মদ উল্লাহ (৪০)। এক সময় ছিলেন বাসাবাড়িতে পেটেভাতে কাজ করা কর্মী। এখন তিনি অঢেল সম্পত্তির মালিক। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেটেলমেন্ট অফিসের দালালিকে পুঁজি করে দখল করেছেন ব্যক্তি নামীয় ও সরকারি খাসজমি। জমি দখল নিয়ে গতকাল তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভও করেছেন ভুক্তভোগীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নড়াইল শহরের ভওয়াখালীতে ১০ শতক জমির ওপর তার ৩ তলা আলিশান বাড়ি রয়েছে মোহাম্মদ উল্লাহর। শহরের প্রাণকেন্দ্র রূপগঞ্জ বাজারসহ পৌরসভায় বিভিন্ন মৌজায় নামে-বেনামে অঢেল সম্পত্তির মালিক তিনি। হাল রেকর্ডে (আরএস) তার নামে রেকর্ড হয়েছে কুড়িগ্রাম মৌজার জাতীয় মহাসড়ক ও রূপগঞ্জ বাজারের সরকারি খাস খতিয়ানের জমিসহ ব্যক্তিনামীয় প্রায় ২ একর জমি। সেটেলমেন্ট অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা, শহরের সন্ত্রাসী ও প্রভাবশালী ভূমি দস্যুদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন দুর্নীতির বিশাল সিন্ডিকেট।
নড়াইল সেটেলমেন্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, হাল (আরএস) রেকর্ডে ৪৬৫ ও ১৫৫নং খতিয়ানে সাবেক (এসএ) ২৪৮, ২৪৯ ও ২৪৭নং দাগসহ আর অন্তত ১৫টি দাগে ৩ একরের বেশি সরকারি ও ব্যক্তিনামীয় জমি ভওয়াখালী গ্রামের মোহাম্মদউল্লাহ ও কুড়িগ্রামের সন্তোষ কুমার আচার্য্যের কন্যা যুথিকা রানী মজুমদারসহ ভূমিদস্যুদের নামে রেকর্ড হয়েছে।
নড়াইল পৌর ভূমি অফিসের তহশিলদার (উপ-সহকারী ভূমি কমিশনার) মো. মোস্তাফিজুর রহমান মিলন বলেন, ‘আমরা সরকারি জমির হাল (আরএস) পর্চাসহ অন্যান্য তথ্যের জন্য সেটেলমেন্ট অফিসে চিঠি পাঠাচ্ছি। এখনো পর্চাসহ অন্যান্য তথ্য হাতে পায়নি।’
অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর মুন্সী হাফিজুর রহমানের জমিও মোহাম্মদ উল্লাহর নামে রেকর্ড হয়ে এসেছে। প্রফেসর মুন্সী হাফিজুর রহমানের লন্ডন প্রবাসী ছেলে পলাশ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি প্রবাসে থাকি। আমার বাবার বয়স হয়েছে, তিনি বাসা-বাড়িতেই অবসর কাটান। প্রতিনিয়ত জমিজমার বিষয়ে অফিসে গিয়ে খোঁজখবর রাখা বাবার পক্ষে সম্ভব নয়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমাদের নামীয় ৩০ শতক জমি মোহাম্মদ উল্লাহ তার নামে রেকর্ড করে নিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘মোহাম্মদউল্লাহ সেটেলমেন্ট অফিসে দালালি করেন। সেই সুবাদে অফিসের কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার সহযোগিতায় আমাদের মতোই স্বপন কুণ্ডুসহ আরও অনেকের জমি রেকর্ড করে নিয়েছেন।’
কলেজ সূত্রে জানা যায়, ১০ হাজার ১৬১ টাকা বেতনে নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে অফিস সহায়কের কাজ করেন মোহাম্মদ উল্লাহ। নামপ্রকাশ না করার শর্তে কলেজের একাধিক স্টাফ জানান, অধ্যক্ষের সঙ্গে মোহাম্মদ উল্লাহর সুসম্পর্ক থাকায় তার কলেজে আসা লাগে না। অধ্যক্ষের ব্যক্তিগত কাজ আর মাসিক বেতন নেওয়া ছাড়া মোহাম্মদ উল্লাহ কলেজে আসেন না।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোহাম্মদ উল্লাহর বাড়ি সদর উপজেলার আউড়িয়া গ্রামে। তার বাবা ইফসুফ মোল্যা নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে পিওনের চাকরি করতেন। সেই সুবাদে মোহাম্মদ উল্লাহ ও তার ভাই নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজে চাকরি পান।
নড়াইল সরকারি ভিক্টোরিয়া কলেজের অধ্যক্ষ খান শাহাবুদ্দিনের কাছে মোহাম্মদ উল্লাহর কলেজে অনুপস্থিতি ও সুসম্পর্কের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যেই তাকে কয়েকবার সতর্ক করেছি। এখন সে নিয়মিত কলেজে আসে। আমার সঙ্গে তার কোনো সুসম্পর্ক নেই।’
সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার ভূমি দেবাশীষ অধিকারী বলেন, ‘সরকারি খাস খতিয়ানের জমি আমরা রেজিস্টারভুক্ত করে সংরক্ষণ করি। সরকারি খাস খতিয়ানের জমি রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা করব। এসব জমি আত্মসাতের কোনো সুযোগ নেই।’
নড়াইল সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সেলিম হাসানের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি রেকর্ড কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে ছিলাম না। এখন শুধু বিতরণ চলছে। কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হলে আইনের আওতায় সুযোগ থাকলে তিনি প্রতিকার পাবেন।
এসব অভিযোগের বিষয়ে মোহাম্মদ উল্লাহর সঙ্গে মোবাইলে কথা হলে তিনি বলেন, জমিসংক্রান্ত সব বৈধ কাগজপত্র তার কাছে রয়েছে। সূত্র : দৈনিক বাংলা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।