জুমবাংলা ডেস্ক : কয়েক বছর ধরে সনাতন পদ্ধতিতে চাষে খুলনা অঞ্চলে চিংড়ির উৎপাদন কম ছিল। জলবায়ু পরিবর্তন, রোগাক্রান্ত পোনাসহ নানা কারণে উৎপাদনের আগেই চিংড়ি মারা যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন চাষিরা। এ অবস্থায় চাষিদের জন্য আশার আলো হয়ে এসেছে ক্লাস্টার চাষ পদ্ধতি।
খুলনা অঞ্চলের পাঁচ জেলায় ৩০০টি স্থানে প্রথমবারের মতো এ পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে। এতে উৎপাদন তিনগুণ বৃদ্ধির আশা মৎস্য অধিদফতরের। আগামীতে এ পদ্ধতিতে চাষ আরও সম্প্রসারণের দাবি সংশ্লিষ্টদের।
জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি রোগমুক্ত পোনা না পাওয়া, ঘেরের গভীরতা কম থাকাসহ বিভিন্ন কারণে গত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে খুলনা অঞ্চলে চিংড়ি উৎপাদন ক্রমান্বয়ে কমছিল। এ কারণে একদিকে যেমন আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছিল কৃষক, তেমনি দেশের চিংড়ি রফতানি বাজারও সংকুচিত হয়ে আসছিল।
এ পরিস্থিতিতে চিংড়ির উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রথমবারের মতো খুলনা অঞ্চলে ক্লাস্টার পদ্ধতিতে গলদা ও বাগদা চিংড়ি চাষের উদ্যোগ নেয় মৎস্য অধিদফতর। সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিসারিজ প্রকল্পের আওতায় একই স্থানে ২৫টি চিংড়ি ঘের পাশাপাশি রেখে চাষ করা হচ্ছে। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর ও গোপালগঞ্জের মোট ২৮টি উপজেলায় ৩০০টি ক্লাস্টার গঠন করা হয়েছে। সনাতন পদ্ধতিতে হেক্টর প্রতি যেখানে চিংড়ি উৎপাদন হয় ৩০০ থেকে ৩৫০ কেজি, সেখানে এ পদ্ধতিতে চিংড়ি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা হেক্টর প্রতি এক হাজার কেজি। এপ্রিলে পোনা ছাড়ার পর এরই মধ্যে ঘেরগুলোতে চিংড়ি পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে। তাতে সন্তুষ্টির হাসি চাষির মুখে। তবে পুকুর খননে সরকারি সহায়তারও দাবি তাদের।
দাকোপ উপজেলার তিলডাঙা ইউনিয়নের এভাবে ঘের করছেন নিরঞ্জন মন্ডল। গত কয়েক বছর ধরে ঘের করে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, ঘেরের পিছনে যে টাকা ব্যয় করতাম, লাভ তো দূরে থাক, আসল টাকাই উঠতো না। মাছ পুষ্ট হয়ে ওঠার আগেই অর্ধেকের বেশি মাছ মারা যেত। তবে এ বছর মৎস্য অধিদফতর থেকে আমাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এখন একসঙ্গে ২৫টি ঘের আমরা পাশাপাশি রেখে চাষ করছি। এসব ঘেরের গভীরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে, মান সম্মত পোনা ছাড়া হয়েছে। এপ্রিলে পোনা ছাড়ার পর এখন অনেকটাই পরিপূর্ণ হয়ে উঠছে। আশা করছি আগের থেকে অন্তত তিনগুণ বেশি মাছ এবার আমাদের উৎপাদন হবে।
একই এলাকায় গলদা চিংড়ির চাষ করছেন আরেক চাষি মিহির রঞ্জন। তিনি বলেন, ‘ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি ঘের করলে আমাদের খরচ সামান্য বেশি হয়, তবে লাভ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেড়ে যায়। আমরা ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করে এখন সন্তুষ্ট।’
তাদের এ সাফল্যে ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষে আরও অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন। মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘এ পদ্ধতিতে আমার পাশের গ্রামের অনেকেই চিংড়ি চাষ করে লাভবান হয়ে উঠছে। অথচ এ বছরও পানির অভাবে আমাদের অনেক চিংড়ি মারা গেছে। আমি আগামীতে এ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করতে চাই।’
এ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষকে আরও সম্প্রসারণ করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।
দাকোপের পানখালি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাব্বির আহমেদ বলেন, আমাদের এ ইউনিয়নে একটি স্থানে ক্লাস্টার পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। কিন্তু এ ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ চিংড়ির ওপর নির্ভরশীল। এ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষকে যদি আরও সম্প্রসারণ করা যায়, তাহলে আমাদের ইউনিয়নের আরও অনেক চাষি উপকৃত হবে।
চিংড়ি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যেই এ প্রকল্প জানিয়ে মৎস্য অধিদফতর বলছে, সীমাবদ্ধতা দূর করে আগামীতে এ প্রকল্প আরও সম্প্রসারণ করা হবে।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব পাল বলেন, আমাদের কিছু সীমাবদ্ধতা আছে, সেসব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা এ চাষকে এগিয়ে নিচ্ছি। যেসব জায়গায় এ পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ হচ্ছে সেসব স্থানে তিনগুণেরও বেশি চিংড়ি উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। আগামীতে এ পদ্ধতি আরও বাড়ানোর লক্ষ আছে আমাদের।
চলতি বছর সারাদেশে সনাতন, উন্নত সনাতন ও উন্নত পদ্ধতি মিলে দুই লাখ ৬৩ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ করা হচ্ছে, যেখান থেকে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ২ লাখ ৯৫ হাজার মেট্রিক টন । যেখানে সবশেষ বছর সারা দেশে চিংড়ি উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার ২১ মেট্রিক টন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।