জুমবাংলা ডেস্ক : শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে নিয়োগ পেয়েছেন প্রায় সাত লাখ। তাদের সঙ্গে ওই সময়ে পদোন্নতি পাওয়া আরও সাড়ে তিন লাখের বেশি যোগ হবে। সবমিলিয়ে সরাসরি নিয়োগ ও পদোন্নতির মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারের ‘সুবিধাভোগী’ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যাটা দাঁড়ায় ১০ লাখ ৫০ হাজার ৬৮৩ জনে, যা প্রশাসনে হিমালয়ের মতো বিশাল এক খাম্বা। শূন্য পদ বাদে বর্তমানে কর্মরত মোট ১২ লাখ ৩১ হাজার সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর মধ্যে তাদের খুঁজে বের করতে গেলে লোম বাছতে কম্বল উজাড় হওয়ার জোগাড় হবে বলে মনে করছেন প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা।
আওয়ামী লীগ সরকারের ‘সুবিধাভোগী’ এই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে শুরু করে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয় ৬ লাখ ৪৮ হাজার ৯৯৯ জনকে। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নিয়োগের হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে আগের ১৪ বছরের গড় হিসাব ধরলে ওই অর্থবছরে নতুন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৪৬ হাজার ৩৫৭ জনকে। অন্যদিকে ২০০৯-১০ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত সময়ে পদোন্নতি পান ৩ লাখ ৩১ হাজার ৬৩৯ জন। সর্বশেষ ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পদোন্নতির হিসাব পাওয়া যায়নি। তবে আগের ১৪ বছরের গড় হিসাব ধরলে ওই অর্থবছরে পদোন্নতি পান আরও ২৩ হাজার ৬৮৮ জন।
জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতে গত ১৫ বছরে প্রায় সবই দলীয় বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিছু লোক ঢুকে পড়েছে যারা কোনোমতেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন না। তারা নানা কায়দা-কানুন করে চাকরিতে ঢুকেছে। কিছু লোক টাকার বিনিময়ে ঢুকেছে। প্রশাসনের জানামতে ভিন্নমতের লোকদের চাকরিতে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আওয়ামী লীগের বাইরে যেন কেউ ঢুকতে না পারে সেজন্য দফায় দফায় তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। বিশেষ করে ক্যাডার সার্ভিস ও কিছু নন-ক্যাডার সার্ভিসে নিয়োগ দেওয়ার আগে দুটি সংস্থাকে দিয়ে প্রার্থীর তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এরপরও সন্দেহ হলে জেলা প্রশাসন পুনরায় তদন্ত করেছে। সাধারণ চাকরিপ্রার্থীদের বলতে হয়েছে তারা আওয়ামী লীগ সমর্থক। আর লিখিত বা মৌখিক পরীক্ষায় যত ভালো করুক না কেন জামায়াত ও বিএনপি নেতাকর্মীদের জন্য চাকরিতে ঢোকা ছিল লোককাহিনি বেহুলা-লক্ষ্মীন্দরের বাসরঘরে প্রবেশের মতোই কঠিন।
অমানবিক আউটসোর্সিং : আমলারা নীতিনির্ধারকদের যেভাবে বুঝিয়েছেন সেভাবেই চলেছে। ভালোমন্দ খতিয়ে দেখা হয়নি। আউটসোর্সিং নীতিমালা করার সময়ই বলা হয়েছে এ নীতিমালা টিকবে না। কর্মচারীকে অভুক্ত রেখে সরকারের সাশ্রয় করার নীতি প্রশ্নবিদ্ধ হবে। তাছাড়া সরকার যেখানে মধ্যস্বত্বভোগীদের যন্ত্রণা থেকে সাধারণ মানুষকে মুক্তি দিতে চায় সেখানে কে নতুন করে মধ্যস্বত্বভোগীদের সুযোগ করে দিয়েছে সে প্রশ্নও উঠবে। আমলারা সেই সময়ের সরকারপ্রধানকে বুঝিয়েছিলেন, সরকারের খরচ কমাতে হবে এবং সেবার মান বাড়াতে হবে। এ কারণে আউটসোর্সিং পদ্ধতি উপযোগী। কিন্তু এ পদ্ধতিতে একজন কর্মচারী ঈদের সময় বোনাস পাবেন না, বছর শেষে তার বেতন বাড়বে না, তিন বছর পর চাকরি থাকবে না এসব অসুবিধার কথা আড়াল করা হয়েছে।
এই অমানবিক আউটসোর্সিংয়ের চাকরি নিতে গিয়েও চাকরিপ্রার্থীদের মাথাপিছু ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা ঘুষ দিতে হয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাদের। কারণ তারাই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিংয়ের আওতায় জনবল সরবরাহ করতেন। সেই আউটসোর্সিং কর্মচারীরা এখন রাজপথে মিছিল করছেন। তাদের ঘুষ দিয়ে চাকরি নেওয়ার দুর্দশার কাহিনি বলে বেড়াচ্ছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।