জুমবাংলা ডেস্ক : একটি রাজনৈতিক (আওয়ামী লীগ) দল ক্ষমতায় আসলে আর ক্ষমতাসীন দলের হাই লেভেলের কারো সাথে সম্পর্ক থাকলে কিভাবে মানুষের ভাগ্য রাতারাতি বদলে যায় পাল্টে যায় তার উজ্জ্বলতম উদাহরণ হল বগুড়া জেলা পরিষদের সদস্য মাহফুজা খানম লিপি এবং তার স্বামী বগুড়া সদর উপজেলার সদ্য সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সুফিয়ান সফিক দম্পতি।
ছাত্র রাজনীতির উজ্জ্বল ক্যারিয়ার একনিষ্ট ছাত্রলীগ নেতা নেত্রী হিসেবে দুজনের বৈবাহিক জীবন আওয়ামী রাজনীতির লোকদের কাছে তারা খুবই পরিচিত ও উজ্জ্বল মুখ। অপরদিকে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও বর্তমানে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এবং মাহফুজা খানম লিপির বাড়ি জয়পুরহাটে হওয়ায় এবং তারা দুজন কথিত আত্মীয় হিসেবে প্রচার থাকায় বগুড়া সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি পদ পেতে, প্রথমে শাখারিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান তারপর বগুড়া সদর উপজেলা চেয়ারম্যান পদে দলের মনোনয়ন পেতে এবং দলীয় প্রভাবে জোরজবরদস্তি করে করে জয়ী হতে অসুবিধা হয়নি। সফিক ও তার স্ত্রী লিপি কেউ আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ছিলেন না এটা জানিয়েছেন তার রাজনৈতিক সহকর্মী, বন্ধু, এলাকাবাসী ও স্বজনরা।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় ফেরা (৯৬ এর পর) শুধু দলীয় পদবীর জেরেই স্বচ্ছল হয়ে যান তারা। সফিকের ঘনিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছেন, প্রথমে শাখারিয়ায় ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদের ভোটে তিনি ৪৭ লাখ টাকা খরচ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেন। এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে সাড়ে সাত বছর দায়িত্বকালে শুধুই অর্থ লুটপাট করেন অভিযোগ এলাবাসীর।
এসময় নিজ এলাকায় যাকেই প্রতিদ্বন্দি¦ মনে করেছেন, তাকেই হুমকি ও মামলা দিয়ে এলাকাছাড়া করেছেন বাড়ি পুড়িয়েছেন কমপক্ষে ৬টি। আর্মস ক্যাডারদের পৃষ্টপোষকতাও করেছেন। বেশি বাড়াবাড়ি ও ইউএনওর কার্যালয় ভাঙচুরের কারনে জেল খাটেন। তবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা স্বপন এবং জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি (বর্তমানে মরহুম) মমতাজ উদ্দিনের স্নেহছায়ায়ার কারনে দ্রুত বের হয়ে যান। ২০১৯ সাল থেকে সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচন পর্যন্ত ৫ বছর সময়কালীন পর্যন্ত উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে পুরো প্রতিষ্ঠানটিকে দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেন তিনি।
নিজে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থাকা স্বত্ত্বেও মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রীদের বঞ্চিত করে নিজ স্ত্রী মাহফুজা খানম লিপিকে বগুড়া জেলা পরিষদের সদস্য পদে জিতিয়ে এনেছেন। এই ক্ষেত্রে ব্যবহার করেছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবু সাঈদ মাহমুদ আল স্বপনের নাম। ফলে ক্ষমতার এই অপব্যবহারকে বগুড়ার বঞ্চিত নেত্রীদের কেউ চ্যালেঞ্জ করতে সাহস করেননি। গত বছর তার চিহ্নিত আর্মস ক্যাডার ও বগুড়া পৌরসভার ওয়ার্ড কাউন্সিলর লুৎফর রহমান মিন্টু ও কুখ্যাত সন্ত্রাসী গিয়াস মেম্বার রোহান চৌধুরী নামের এক তরুণকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করলে সফিক চেয়ারম্যান প্রকাশ্যে মিডিয়ার সামনে ঘোষণা দেন, মিন্টু তার লোক, সেই এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল না। তার এই ভূমিকা এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সঞ্চার করে। এলাকাবাসী জানায়, বগুড়া, জয়পুরহাট ও ঢাকায় তার ও স্ত্রীর নামে কমপক্ষে বাড়ি, ফ্লাট, জমি রয়েছে যার মূল্য ৫০ কোটি টাকা।
এছাড়া দুজনেই দলীয় প্রভাব ও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ৪টি করে মোট ৮টি স্কুল কলেজের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন দীর্ঘদিন। এই প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বাণিজ্য করেও কামিয়েছেন কোটিকোটি টাকা। এইসব পরিষ্কার ও স্বচ্ছ অভিযোগ দুর্নীতি কমিশনে দেওয়া হলে ক্ষমতার প্রভাবে দুদক কর্মকর্তারা অগ্রসর করতে সাহসী হয়নি বলে অভিযোগ করে তারা বলেছেন এখনতো দুদক প্রসিড করতে পারে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে সফিক লিপি দম্পতি বাড়ি ছেড়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যান। ক্ষুব্ধ জনতা তার ও তার আর্মস ক্যাডার মিন্টু ও গিয়াস মেম্বারের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট এবং অগ্নিসংযোগ করে। এলাকাবাসী এই ঘটনাকে প্রকৃতির প্রতিশোধ বলে বর্ণনা করেন। সূত্র : ইনকিলাব
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।