জুমবাংলা ডেস্ক : ক্লাসের মধ্যে মেধাবী মুখ হিসেবে পরিচিত দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র আবু তালহা। কয়েক মাস আগেও মায়ের হাতে মাখানো খাবার খেয়ে রোজ সকালে স্কুলে যেত সে; কিন্তু এখন সমবয়সিরা স্কুলে গেলেও যেতে পারে না তালহা। বুকভরা কষ্ট, আর মুখ ভরা হাসি নিয়ে সারাদিন বিছানায় শুয়ে মাথা ও বুকের যন্ত্রণায় কাতরাতে থাকে ছোট্ট এই শিশু।
হার্টে ছিদ্র নিয়ে জন্ম নেওয়া আবু তালহার চোখ বেয়ে অঝোরধারায় গড়িয়ে পড়ে পানি। চিকিৎসক দ্রুত সময়ের মধ্যে হার্টের ছিদ্রের অপারেশন করাতে বলেছেন। কিন্তু টাকার অভাবে পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার পাথরঘাটা পৌরপাড়া গ্রামের রঙ মিস্ত্রি জাকির হোসেন ও গৃহিণী লিমা খাতুনের দম্পতির বড় সন্তান আবু তালহা বন্ধ হয়ে গেছে চিকিৎসা। মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মেধাবী এই শিক্ষার্থী।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কখনো মাথা আবার কখনো বুক চেপে ধরে কান্না করছে আবু তালহা। মাঝে মাঝে বমি করছে। হচ্ছে শ্বাসকষ্টও। ছেলের এমন কষ্ট দেখে পাশে বসে মা লিমা খাতুন অঝোরধারায় কান্না করছেন। দীর্ঘদিন ধরে হার্টের ছিদ্র নিয়ে বেড়ে ওঠা আবু তালহার শারীরিক অবস্থা ক্রমেই অবনতি হচ্ছে কিন্তু টাকার কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে দরিদ্র পরিবারটি।
জানা গেছে, জন্মের পরেই আবু তালহা অসুস্থ হয়। স্বজনরা পাবনার এক চিকিৎসককে দেখান। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে আবু তালহার হার্টে ছিদ্র রয়েছে। চিকিৎসকের এমন কথা শুনে ভয় পেয়ে যান বাবা-মা। পরে তাকে (আবু তালহা) ঢাকায় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নিয়ে যান।
সেখানে চিকিৎসক আবারো পরীক্ষা নিরীক্ষা করে একই কথা বলেন। আবু তালহার হার্টের ছিদ্র অপারেশন করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন হবে সাড়ে ৩ লাখ টাকা। টাকার অংক শুনে ছেলেকে নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন দরিদ্র বাবা জাকির হোসেন। এর মধ্যে কেটে গেছে প্রায় ৮ বছর।
টাকা জোগাড় করতে না পেরে আবু তালহার অপারেশন করানো সম্ভব হয়নি দরিদ্র বাবা-মায়ের পক্ষে। কিন্তু সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আবু তালহা ক্রমেই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। বাধ্য হয়ে ধারদেনা করে সম্প্রতি আবু তালহাকে আবারো ঢাকায় নেওয়া হয়। কিন্তু অপারেশনের টাকা জোগাড় করতে না পেরে ছেলেকে আবারো বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন অসহায় মা-বাবা।
এরই মধ্যে ছেলেকে চিকিৎসা করাতে গিয়ে লক্ষাধিক টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন রংমিস্ত্রি জাকির হোসেন। প্রতিদিন যা উপার্জন করেন সেই টাকা দিয়ে কোনো মতে সংসার চালান। এখন ছেলের চিকিৎসা করানো কোনোমতেই সম্ভব নয় বলে হাল ছেড়ে দিয়েছেন বাবা জাকির হোসেন; কিন্তু ছেলেকে বাঁচাতে আকুতি করছেন মা লিমা খাতুন। সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন তারা।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে মা লিমা খাতুন বলেন, সবাই যখন স্কুলে যায়, আমার ছেলে তখন স্কুলে যাওয়ার জন্য পাগলের মতো করে। পড়াশোনার প্রতি খুব আগ্রহ ওর। আল্লাহ কেন আমাদের মতো গবিবকে এই পরীক্ষার মধ্যে ফেললেন? প্রধানমন্ত্রী ও সমাজের বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ আপনারা এগিয়ে আসুন। আমার ছেলেকে বাঁচান।
ভাঙ্গুড়া পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জহুরুল ইসলাম বলেন, সত্যিই পরিবারটি দরিদ্র। তাদের পক্ষে এত টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়। টাকার অভাবে অপারেশন না করিয়ে ঢাকা থেকে আবু তালহাকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে এলে শিশুটির হার্টের অপারেশন করা সম্ভব হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।