বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : প্রযুক্তি বিশ্বের সবচেয়ে বড় খেলোয়াড় কারা? সিলিকন ভ্যালি থেকে শেনজেন; এগুলোয় রয়েছে প্রযুক্তির বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ রূপদানকারী অসংখ্য কারিগর। এখানকার প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন নতুন উদ্ভাবন বাজারে আলোড়ন সৃষ্টি করে। এমনকি তারা পেয়েছে ব্যবসায়িক সফলতাও। প্রযুক্তি বেচে গড়েছেন সম্পদের বিশাল পাহাড়। এ সংস্থাগুলোকে নিয়ে এই রকমারি…
বিশ্ব ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে, প্রযুক্তির ওপর মানব সভ্যতার নির্ভরতা বাড়ছে। সেই সঙ্গে আধুনিক প্রযুক্তির জয়রথও এগিয়ে চলেছে। জীবন সহজ করতে নিত্যনতুন প্রযুক্তি নিয়ে হাজির হয়েছে বিশ্বের নামিদামি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো। পাশাপাশি প্রযুক্তি বিশ্বে বাড়ছে ধনী বা অতিধনী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সংখ্যা। তন্মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি টেক জায়ান্ট কেবল বিশ্বের বুকে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করতে পেরেছে। পাশাপাশি এ প্রতিষ্ঠানগুলো হয়ে উঠেছে বিশ্বের অন্যতম ধনবান এবং সম্পদশালী প্রতিষ্ঠান। যাদের সম্পদের মূল্য ছাড়িয়েছে লাখ কোটি ডলার অঙ্কের ঘর। আর সবই হচ্ছে প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্ভাবিত প্রযুক্তি বেচে। কয়েক দশক ধরে প্রযুক্তি অর্থনীতির প্রতিটি কোণে এসব টেক কোম্পানির প্রভাবও বেশ লক্ষণীয়। বিশ্বে প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং সমৃদ্ধির পাশাপাশি বিশ্বে এসব প্রতিষ্ঠানের আধিপত্যও দিন দিন বেড়ে চলেছে। বৈদ্যুতিক গাড়ি, স্মার্টফোন, সফটওয়্যার, ক্লাউড সার্ভিস, সোশ্যাল মিডিয়া- কোথায় নেই এসব টেক কোম্পানির পদচারণা! টেকনোলজি, স্টক মার্কেট কিংবা প্রযুক্তিশিল্পের শেয়ারবাজার- এমনকি বিশ্বের দীর্ঘমেয়াদি অর্থনীতির অন্যতম খেলোয়াড়ও তারা। এসব মেগা টেক কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- মাইক্রোসফট, অ্যাপল, অ্যালফাবেট (গুগল), অ্যামাজন, মেটা প্ল্যাটফরম এবং টেসলার মতো খ্যাতনামা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। যাদের বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই আজকের বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এবং ক্লাউড পরিষেবাকে কাজে লাগিয়ে অর্থবিত্তের মালিক বনে যাচ্ছে। এখানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পর্কে জানানো হলো- যারা সম্পদের নিরিখে অতিধনী প্রতিষ্ঠানের কাতারে এসে দাঁড়িয়েছে। তালিকার শীর্ষ ১০-এ আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটটি টেক জায়ান্ট। ২০২৪ সালে সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে মাইক্রোসফট করপোরেশন। প্রথমবারের মতো তাদের সম্পদের বাজার মূল্য ৩ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে। দীর্ঘদিনের প্রতিযোগী অ্যাপলকে পেছনে ফেলে মাইক্রোসফটের বাজার মূল্য এখন ৩ লাখ কোটি ডলার। তারা আজকের বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান টেক কোম্পানি। একইভাবে ৩ লাখ কোটি ডলার বাজার মূল্যের কাছাকাছি রয়েছে অ্যাপল। তারা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মূল্যবান টেক কোম্পানি। ছয়টি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের সম্পদের বাজার মূল্য লাখ কোটি ডলারেরও বেশি। সেসব প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে- মাইক্রেসফট করপোরেশন, অ্যাপল, এনভিডিয়া, অ্যামাজন, অ্যালফাবেট (গুগল) এবং মেটা প্ল্যাটফরম। পরবর্তীতে হাজার কোটি ডলার বাজার মূল্যের প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি (টিএসএমসি), টেসলা, ব্রডকম এবং দক্ষিণ কোরিয়ার স্যামসাং গ্রুপ।
২০ লাখেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে অ্যাপল
♦ সিইও : টিম কুক
♦ প্রতিষ্ঠাকাল : ১৯৭৬ সাল
♦ দেশ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
দুই নম্বরে প্রযুক্তির রাজা অ্যাপল। প্রযুক্তিবাজারে অ্যাপল বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ টেক কোম্পানি। এটি একটি বিখ্যাত আমেরিকান বহুজাতিক প্রযুক্তি কোম্পানি। ২০১১ সালের ৯ আগস্ট অ্যাপলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস সিইও পদ থেকে পদত্যাগ করার মাত্র ১৫ দিন আগে এটি বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান কোম্পানিতে পরিণত হয়। গত এক দশকে অ্যাপল ভালোভাবে প্রযুক্তিবাজারে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করেছিল। অ্যাপল মূলত আইফোন, আইপ্যাড, ট্যাবলয়েড, ম্যাক, এয়ারপডস এবং অ্যাপল ওয়াচের মতো অনুষঙ্গগুলো বিক্রি করে থাকে। বিশ্বে অ্যাপলের ডিভাইসগুলোর চাহিদা বেশ পরিলক্ষিত। তার পরও গত ত্রৈমাসিকে অ্যাপল ১১৯ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে। অ্যাপলের সফটওয়্যারের মধ্যে রয়েছে ম্যাক ওএস এবং আইওএস অপারেটিং সিস্টেম, আইটিউন্স মিডিয়া প্লেয়ার, সাফারি ওয়েব ব্রাউজার, আইলাইফ। সঙ্গে রয়েছে প্রফেশনাল এপ্লিকেশন- ফাইনাল কাট প্রো, লজিক প্রো এবং এক্সকোড। পাশাপাশি অ্যাপলের অনলাইন সেবার মধ্যে রয়েছে আইটিউন্স স্টোর, আইওএস অ্যাপ স্টোর এবং ম্যাক অ্যাপ স্টোর, অ্যাপল মিউজিক ও আইক্লাউড। ১৯৭৬ সালে স্টিভ জবস, স্টিভ ওজনিয়াক এবং রোনাল্ড ওয়েন ব্যক্তিগত কম্পিউটার ডেভেলপ ও বিক্রির জন্য অ্যাপল ইনকরপোরেটেড প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আজকের বিশ্বের সেই প্রতিষ্ঠানটি কোটি কোটি গ্রাহকের মন জয় করে নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ কেবল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৫০ রাজ্যে ২০ লাখেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে অ্যাপলের মতো টেক কোম্পানির উপস্থিতির কারণে। অ্যাপলের বার্ষিক আয় প্রায় ১৭৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। আধুনিক প্রযুক্তির অনেক ডিভাইসের প্রতি মানুষের আগ্রহ তৈরি করেছে অ্যাপল। তাই তো প্রযুক্তির সিংহাসনে আজও অ্যাপল দৃঢ় অবস্থানে। ঠিক এ কারণে হয়তো একে টেক বিশ্বে এগিয়ে রাখছেন প্রযুক্তিবিদরা।
৩ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে মাইক্রোসফটের বাজার
♦ সিইও : সত্য নাদেলা
♦ প্রতিষ্ঠাকাল : ১৯৭৫ সাল
♦ দেশ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
সবার ওপরে মাইক্রোসফট করপোরেশন। এটি একটি বহুজাতিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রেডমন্ড, ওয়াশিংটনে অবস্থিত এদের সদর দফতর। বিশ্বের বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির বাজার মূল্য ৩ লাখ কোটি ডলার ছাড়িয়ে গেছে। দীর্ঘদিনের প্রতিযোগী অ্যাপলকে পেছছে ফেলে মাইক্রোসফট করপোরেশন আজকের বিশ্বের সবচেয়ে ধনী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। ১৯৭৫ সালে বিল গেটস এবং পল অ্যালেন মাইক্রোসফট প্রতিষ্ঠা করেন। তখন থেকে মাইক্রোসফট কম্পিউটার সফটওয়্যার শিল্পে চমক দেখিয়ে আসছে। বিশ্বের বৃহৎ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটির কর্মিসংখ্যা ২ লাখ ২১ হাজার। বছরের পর বছর এই কর্মীরাই প্রতিষ্ঠানের সুনাম এবং অবস্থান ধরে রেখেছেন। মাইক্রোসফট করপোরেশনের ‘উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম’ আজ এতটাই বিস্তৃত যে, বিশ্বব্যাপী ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন (২ হাজার ৪০০ কোটির বেশি) গ্রাহককে পরিষেবা দিয়ে থাকে। এর বাইরেও মাইক্রোসফটের অন্যান্য পরিষেবার মধ্যে রয়েছে- ভোক্তা ইলেকট্রনিক্স পণ্য, কম্পিউটার, হার্ডওয়্যার, গেমিং স্টুডিও এবং ক্লাউড পরিষেবা। এ ছাড়া মাইক্রেসফট অফিস বিশ্বের কোটি কোটি গ্রাহকের আয়ের উৎস। তারা এক্সেল, স্প্রেডশিট, পাওয়ারপয়েন্ট, টিম মিটিং পরিষেবাও দিয়ে থাকে। ২০২৩ সালে মাইক্রোসফট করপোরেশন ২১১ বিলিয়ন ডলার মুনাফা অর্জন করেছে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় এগিয়ে বিশাল বিত্তের মালিক অপরিচিত এনভিডিয়া
♦ সিইও : জেনশেন হুয়াং
♦ প্রতিষ্ঠাকাল : ১৯৯৩ সাল
♦ দেশ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
এনভিডিয়ার সঙ্গে আপনি খুব বেশি পরিচিত না-ও হতে পারেন। তবে এই সেমিকন্ডাক্টর কোম্পানিটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহারের জন্য বিশ্বে অন্যতম একটি মূল্যবান প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এনভিডিয়া করপোরেশন মূলত ক্যালিফোর্নিয়ায় অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রযুক্তি কোম্পানি। এরা প্রধানত গ্রাফিক্স প্রোসেসিং ইউনিট (জিপিইউ) এবং মোবাইলের জন্য চিপ তৈরি করে। ১৯৯৩ সালে তিন প্রযুক্তিবিদ ব্রেইনইল্ড হিসেবে বাজারে একটি চিপ নিয়ে আসে। প্রাথমিকভাবে তারা উন্নত কম্পিউটার গ্রাফিক্স এবং ভিজ্যুয়ালগুলো তৈরিতে মনোনিবেশ করে। সেই থেকে এনভিডিয়া প্রযুক্তি বিশ্বের অন্যতম কারিগর। ২০০০ সালের গোড়ায় তারা মাইক্রোসফটের এক্সবক্স কনসোলের জন্য চিপ তৈরির জন্য চুক্তি করেছিল। কিন্তু এনভিডিয়ার খ্যাতি বাড়ে কয়েক বছর পর। প্রতিষ্ঠানটি শক্তিশালী জিপিইউয়ের (গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট) পথপ্রদর্শক হিসেবে অত্যাধুনিক এআই অ্যালগরিদম এবং নিউরাল নেটওয়ার্ক চালানোয় খ্যাতি অর্জন করে; যা নিখুঁত বলে প্রমাণও হয়। বর্তমানে এনভিডিয়া কোম্পানির তৈরিকৃত গেটফোর্স জিপিইউ মূলত এএমডির তৈরিকৃত রেডনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বাজারজাত করা হয়। আজ এনভিডিয়ার উচ্চ-পারফরম্যান্সযুক্ত চিপগুলো সুপার কম্পিউটার, ডেটা সেন্টার এবং এআই মডেল প্রশিক্ষণ অ্যাপ্লিকেশনগুলোর জন্য একেবারে অপরিহার্য।
ই-কমার্স ব্যবসা অ্যামাজনের অর্থের প্রধান উৎস
♦ সিইও : অ্যান্ডি জেসি
♦ প্রতিষ্ঠাকাল : ১৯৯৪ সাল
♦ দেশ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অনলাইন প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন। প্রতিষ্ঠানটির সদর দফতর ওয়াশিংটন অঙ্গরাজ্যের সিয়াটলে। এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি ই-কমার্স ব্যবসায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। প্রাথমিকভাবে একটি অনলাইন বইয়ের দোকান হিসেবে তাদের কার্যক্রম শুরু করেছিল। পরে ডিভিডি, ভিএইচএস, সিডি, ভিডিও এবং এমপিথ্রি ডাউনলোড/স্ট্রিমিং, সফটওয়্যার, ভিডিও গেম, ইলেকট্রনিক্স, পোশাক, আসবাবপত্র, খাবার, খেলনা এবং গয়না ইত্যাদি নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসও বিক্রি করা শুরু করে। এক সময় এই অনলাইন শপিং ব্যবসা এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনে। ফলস্বরূপ আজকের বিশ্বের শপিং মলের বাইরেও অসংখ্য প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে সফলতা লাভ করেছে। মহামারিকালে অনলাইন শপিং ব্যাপক সফলতা পায়। ফলে মানুষের জীবন-জীবিকা আরও সহজ হয়ে ওঠে। ১৯৯৪ সালে জেফ বেজোস অনলাইন শপ অ্যামাজন প্রতিষ্ঠা করেন। এই ই-কমার্স মূলত একটি অতি-দক্ষ পণ্য বিতরণ পরিষেবা হিসেবে গত বছর ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় করেছিল। তবে আজকের অ্যামাজন কিন্তু সাধারণ অনলাইন শপিংয়ের চেয়েও অনেক বেশি এগিয়ে গেছে। তারা আজ ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যামাজন প্রাইম, নেতৃস্থানীয় এডব্লিউএস ক্লাউড কম্পিউটিং পরিষেবা, আলেক্সা ভয়েস অ্যাসিস্ট্যান্টস, টুইচ গেম স্ট্রিমিংসহ ুঅসংখ্য প্রযুক্তিসেবা দিয়ে থাকে।
সার্চ ইঞ্জিন গুগল থেকে নতুন অ্যালফাবেট
♦ সিইও : সুন্দর পিচাই
♦ প্রতিষ্ঠাকাল : ২০১৫ সাল
♦ দেশ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
বিখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি আগে ‘গুগল’ নামে পরিচিত ছিল। ২০১৫ সালে গুগল পুনর্গঠনের মাধ্যমে অ্যালফাবেট ইনক. প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মূলত গুগলের তত্ত্বাবধানকারীরা মূল কোম্পানি হিসেবে অ্যালফাবেট ইনকরপোরেটেডকে বাজারে নিয়ে আসে। গুগল এবং গুগলের বেশ কয়েকটি প্রাক্তন সহায়ক সংস্থার মূল কোম্পানি হয়ে ওঠে অ্যালফাবেট। গুগলের দুই সহ-প্রতিষ্ঠাতা অ্যালফাবেটের শেয়ারহোল্ডার, বোর্ড সদস্য এবং নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে রয়ে গেছেন। রাজস্বের দিক থেকে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম প্রযুক্তি কোম্পানি এবং বিশ্বের অন্যতম মূল্যবান কোম্পানিতে রূপান্তরিত হয়। এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি আজকের প্রযুক্তি বিশ্বে অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অপারেটিং সিস্টেম থেকে ইউটিউব ভিডিও, এমনকি সেলফ-ড্রাইভিং উদ্যোগের সঙ্গেও জড়িত। এর বাইরেও অনলাইন বিজ্ঞাপন পরিষেবা, ক্লাউড কম্পিউটিং, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) সঙ্গেও সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানটি। এসব পরিষেবা থেকে প্রতিষ্ঠানটির বার্ষিক আয়ও কম নয়; প্রায় ১৭০ বিলিয়ন ডলার। আশ্চর্যের বিষয় হলো- গুগলের মতো শক্তিশালী না হলেও অ্যালফাবেটের আয়ও অনেক। কারণ এটি অনলাইন ব্রাউজিং-অনুসন্ধানে এগিয়ে রয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগে বিশ্বের সেরা মেটা প্ল্যাটফরম
♦ সিইও : মার্ক জাকারবার্গ
♦ প্রতিষ্ঠাকাল : ২০০৪ সাল
♦ দেশ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
আগে এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি ‘ফেসবুক ইনকরপোরেটেড’ নামে বেশি পরিচিত ছিল। তবে এখন কেবল সোশ্যাল মিডিয়া টাইটান মেটা প্ল্যাটফরম ফেসবুক নয়, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এবং অন্যান্য অ্যাপ ও পরিষেবার তত্ত্বাবধান করে থাকে। ২০০৪ সালে মার্ক জাকারবার্গ হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির একটি রুমে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ‘ফেসবুক’ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পরে এই ফেসবুক বিশ্বজুড়ে কোটি কোটি মানুষের নতুন বন্ধুত্ব এবং বার্তা প্রেরণের মাধ্যম হয়ে ওঠে। সে সময় প্ল্যাটফরমটি দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়। আর মাত্র ছয় বছরে ৪০০ মিলিয়ন (৪ হাজার কোটি) ব্যবহারকারীর অ্যাপ্লিকেশন হয়ে ওঠে। মেটা সম্প্রতি ‘মেটাভার্স’ হিসেবে (ফেসবুক থেকে রিব্র্যান্ড) এর ওপর বেশি ফোকাস করছে। কোটি কোটি ব্যবহারকারীর সামনে ভেসে ওঠা অসংখ্য বিজ্ঞাপনই প্রতিষ্ঠানটির আয়ের প্রধান উৎস।
সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনে সেরা টিএসএমসি
♦ সিইও : সি. সি. উই
♦ প্রতিষ্ঠাকাল : ১৯৮৭ সাল
♦ দেশ : তাইওয়ান
সম্ভবত ‘টিএসএমসি’ নামটির সঙ্গে আপনি পরিচিত নন। কিন্তু এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বিশ্বের সেরা সেমিকন্ডাক্টর চিপ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে তাইওয়ান সেমিকন্ডাক্টর ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির (টিএসএমসি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাইওয়ানের প্রতিষ্ঠানটি সেমিকন্ডাক্টর বা চিপ জগতের অন্যতম প্রধান কারিগর। বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, এই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি স্মার্টফোন, ল্যাপটপ, মেডিকেল ডিভাইস এবং এমনকি যুদ্ধক্ষেত্রের মিসাইল সিস্টেমের ব্যবহৃত সবচেয়ে উন্নত মাইক্রোচিপগুলোর প্রায় ৯০ শতাংশ উৎপাদন করে থাকে। টিএসএমসির কর্মীরা অত্যন্ত নির্ভুলতার সঙ্গে মাইক্রোচিপগুলো তৈরি করে থাকে। এখানেই শেষ নয়, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি স্যামসাং, ইন্টেলের মতো প্রতিদ্বন্দ্বীকেও এগিয়ে নিয়ে গেছে। প্রতিটি বড় প্রতিষ্ঠানই টিএসএমসির চিপের ওপর নির্ভর করে।
বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদন করে ধনবান হচ্ছে টেসলা
♦ সিইও : ইলন মাস্ক
♦ প্রতিষ্ঠাকাল : ২০০৩ সাল
♦ দেশ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
টেসলা ইনকরপোরেটেড (আগের নাম টেসলা মোটরস) একটি আমেরিকান বৈদ্যুতিক যান এবং এনার্জিভিত্তিক পণ্য নির্মাতা সংস্থা। ২০০৩ সালে মার্টিন এবারহার্ড এবং মার্ক টারপেনিং (নিকোলা টেসলার নামানুসারে) এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানটি এককভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণে এগিয়ে আসে। ২০০৪ সালে ইলন মাস্ক একজন বিনিয়োগকারী হিসেবে টেসলা কোম্পানিতে যোগদান করেন এবং ২০০৮ সালে সিইও হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সেবার টেসলার প্রথম গাড়ি (রোডস্টার) বাজারে নিয়ে আসেন। যার মধ্যে ‘এস’, ‘থ্রি’, ‘এক্স’ এবং ‘ওয়াই’ মডেলের স্বয়ংক্রিয় গাড়িগুলো বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ২০২৩ সালে টেসলার শেয়ারের দাম ১০৭ শতাংশ বেড়ে যায় এবং ২০২৪ সালে আবারও নেমে আসে। উৎপাদন খরচ বাড়ছে, বাড়ছে প্রতিযোগিতা। তাই বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণের বিষয়ে টেসলা পুনর্বিবেচনা করছে।
সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনকারী আরেক প্রতিষ্ঠান ব্রডকম
♦ সিইও : হুক ই. টেন
♦ প্রতিষ্ঠাকাল : ১৯৬১ সাল
♦ দেশ : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
পরের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানটি হলো- সেমিকন্ডাক্টর এবং সফটওয়্যার প্রদানকারী বৃহৎ সংস্থা ব্রডকম ইনকরপোরেটেড। এটি সেমিকন্ডাক্টর নির্মাণের কোম্পানি। ১৯৯১ সালে কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর সদর দফতর ক্যালিফোর্নিয়ার আরভিনে। বিশ্বের ১৫টি দেশে ২০ হাজার কর্মী নিয়ে পরিচালিত প্রতিষ্ঠানটি বাজার মূল্য হিসেবে মেগা টেক কোম্পানিগুলোর চেয়ে অনেক ছোট। কিন্তু ব্রডকম হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার উভয় ক্ষেত্রেই উদ্ভাবনের দিক থেকে অন্য সবার প্রতিযোগী হয়ে উঠেছে। ৬০ বছরের ইতিহাসে তারাই প্রথম এলইডি ডট ম্যাট্রিক্স ডিসপ্লে, হোম ইন্টারনেটে সক্ষম তারের মডেম, আইবিএম মেইনফ্রেমের জন্য ফাইবার অপটিক, ডিজিটাল যান প্রযুক্তি এবং ৫জি রেডিও নিয়ে আসে। ব্রডকম সেমিকন্ডাক্টর, সফটওয়্যার এবং নিরাপত্তা সমাধানের নকশা, উন্নয়ন এবং সরবরাহ করে থাকে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।