আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিপাইনের একটি নীরব শহর হঠাৎই জাতীয় স্পটলাইটে চলে এসেছে। এর কারণ, ওই শহরের মেয়রের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে যে, তিনি চীনের একজন এজেন্ট। শহরটির নাম বামবান। রাজধানী শহরের উত্তরে এই শহরে প্রচুর ধান উৎপাদন হয়। এর মেয়র অ্যালিস গুও। তিনি একজন যুবতী। সরকারি দায়িত্ব পালন করেন। শহরটির মেয়র তিনি। বয়স ৩৫ বছর। সবার কাছে তিনি শ্রদ্ধার পাত্রী।
আছে দীঘল কালো চুল। মুখে লেগে থাকে হাসি। কথা বলেন টাগালোগে। প্রকাশ্যে তিনি গোলাপি পোশাক পরতে ভালোবাসেন। তিনি বড় হয়েছেন শূকরের একটি খামারে। কিন্তু তার জীবনধারা দেখে কোনো সন্দেহ হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু এই মাসে সিনেটে তাকে সাক্ষ্য দিতে ডাকা হয়। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, তার শহরে পোগো নামের একটি অনলাইন ক্যাসিনো আছে। এটা জানতে পেরেছেন স্থানীয় আইনপ্রয়োগকারীরা। বাস্তবে সেই ক্যাসিনো হলো কেলেঙ্কারির কেন্দ্র। মার্চে সেখানে অভিযান চালায় কর্তৃপক্ষ। আটক করে ৭০০ কর্মীকে। এর মধ্যে ২০২ জন চীনা এবং ৭৩ জন বিভিন্ন দেশের। তাদেরকে দিয়ে অনলাইনে প্রেমিকা হিসেবে পোজ দিতে বাধ্য করা হতো।
ফিলিপাইন অফসোর গ্যাম্বলিং অপারেটরদের স্থান হয়ে ওঠে পোগো। এর ক্লায়েন্টদের মধ্যে আছেন মূল চীন ভূখণ্ডের লোকজন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট রড্রিগো দুতের্তের সময়ে এই ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠেছে। দুতের্তের প্রেসিডেন্টর মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২২ সালে। চীনের সঙ্গে তার ছিল এই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। কিন্তু বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোসের সময়ে দেখা গেছে এসব বাণিজ্যের নেপথ্যে আছে মানব পাচার এবং অনলাইনে অনিয়ম। এটা দেখার পর তার প্রশাসন পোগোর ওপর ঘনিষ্ঠ নজর রাখা শুরু করে। মিস অ্যালিস গুও’র এই কাহিনী এমন এক সময়ে প্রকাশ পেয়েছে যখন ম্যানিলা এবং বেইজিংয়ের মধ্যে অন্তরীপ নিয়ে উত্তেজনা আছে। পোগোর অবস্থান অ্যালিসের অফিসের একেবারে পেছনে। পোগো যে জমিতে অবস্থিত তার অর্ধেকের মালিকানা আছে অ্যালিসের। কিন্তু তিনি দাবি করেছেন, দুই বছর আগে মেয়র নির্বাচনের আগেই ওই সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়েছেন। প্রায় আট হেক্টর জমিতে এই স্থাপনা। সেখানে আছে মুদি দোকান, ওয়্যারহাউস, সুইমিংপুল এমনকি ওয়াইন সেল। জুয়া খেলার জন্য সারিবদ্ধভাবে সাজানো সব। এক লাইন দিয়ে সাদা টেবিল। তার ওপর কম্পিউটার সাজানো।
অ্যালিস গুও’র একটি হেলিকপ্টার আছে এবং তার নামে রেজিস্টার্ড আছে একটি ফোর্ড এক্সপেডিশন। কিন্তু জমির মতোই এসব তিনি অনেক আগে বিক্রি করে দেয়ার কথা জানিয়েছেন। এ নিয়ে সিনেটে শুনানির পর সিনেটর রিসা হোন্টভেরোস জানতে চেয়েছেন, মিস অ্যালিসের কি চীনভিত্তিক কোনো সম্পদ আছে কিনা, যেটা তার ব্যক্তিগত অথবা ব্যবসায় সংক্রান্ত। বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট মার্কোস এই মামলার ব্যাপারে তার ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কেউ তাকে চিনতো না। তিনি কোথা থেকে এসেছেন তা নিয়েই আমাদের বিস্ময় আছে। এ জন্য আমরা তার বিষয়ে তদন্ত করছি। আমাদের সঙ্গে আছে ব্যুরো অব ইমিগ্রেশন। কারণ, তার নাগরিকত্বও যাচাই করে দেখা হবে। সিনেটরদের প্রশ্নের জবাবে মিস অ্যালিস বলেছেন, তিনি কোনো বাচ্চা নন, তিনি পোগোসের রক্ষকও নন। মিস অ্যালিসের বিষয়ে খুব কমই জানা যায়, যা ফিলিপাইনের গ্রামীণ জীবনে অস্বাভাবিক। সেখানে স্থানীয় কর্মকর্তাদের থাকে রাজনৈতিক বংশের উত্তরাধিকার। এক্ষেত্রে মিস অ্যালিস নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে তার প্রথম মেয়াদে আছেন। নির্বাচন কমিশন বলেছে, তিনি ২০২১ সালে বামবানে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন। তার পারিবারিক নাম গুও। এটিও ফিলিপাইনে সাধারণ নয়। এমন নাম তাদের থাকে, যাদের চীনের সঙ্গে যোগসূত্র থাকে।
তবে স্পেনের ঔপনিবেশিকতার সময় ফিলিপাইন ও চীনের মধ্যে সাংস্কৃতিক গভীর সম্পর্ক ছিল কয়েক শতাব্দীর বাণিজ্যের কারণে। এ জন্য ওই দেশটিকে বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো চায়না টাউন বলা হয়। সিনেটরদের প্রশ্নের জবাবে মিস অ্যালিস গুও স্বীকার করেছেন তার বয়স যখন ১৭ বছর শুধু তখনই তিনি স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে নিবন্ধিত হয়ে জন্ম সনদ নিয়েছেন। এর কারণ, তিনি এমন একটি বাড়িতে জন্মেছেন, যা কোনো হাসপাতাল বা ক্লিনিকের কাছে ছিল না। তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি। তিনি আরও জানিয়েছেন, পারিবারিকভাবে পরিবারের ভেতরে তাকে স্কুলের পড়াশোনা করানো হয়েছে। তাকে বড় করা হয়েছে শূকরের একটি খামারে। তিনি যে স্কুলের অধীনে পড়াশোনা করেছেন এবং যেসব শিক্ষকের অধীনে পড়াশোনা করেছেন, তাদের কারও নাম তিনি বলতে পারেননি।
তিনি বলেছেন- তার পিতা একজন ফিলিপিনো। তিনি ব্যবসা করতেন। তাকে চীনা নাগরিক হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে। ম্যানিলার সম্প্রচার মাধ্যম জিএমএ নিউজের মতে, ২০২২ সালে নির্বাচনী প্রচারণাকালে তিনি বলেছেন- অনেকেই জানতে চান অ্যালিস গুও কে? আবার তিনিই এর জবাব দেন- আমি অ্যালিস গুও। বামবান থেকে এসেছি। আমার মা ফিলিপিনো এবং পিতা চীনের। তার শিক্ষা ও জন্ম নিয়ে অধিক পরিমাণে প্রশ্ন করেন মিস হোন্টিভেরোস। তার এই চাপাচাপিতে মিস অ্যালিস বলেন- আপনার এসব প্রশ্নের উত্তর আমি পরে দেবো। এখন নির্বাচন কমিশন ও সলিসিটর জেনারেল তদন্ত করে দেখছে মিস অ্যালিস বেআইনিভাবে সরকারি পদ দখল করে আছেন কিনা। যদি তা প্রমাণ হয়, তাহলে তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।