জুমবাংলা ডেস্ক : রাস্তার দুইধারে, ফসলের ক্ষেতের পাশে সবুজ ঝোপ। আপাতদৃষ্টিতে দেখে মনে হবে সবুজের সমারোহ। এই সবুজের মাঝে লুকিয়ে রয়েছে মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর আগাছা পার্থেনিয়াম। বিশেষ করে বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে কয়েক বছর যাবৎ এই গাছটি রাস্তার দুধারে, ক্ষেতের আইলে দেখা যাচ্ছে।
বিষাক্ত এই গাছ থেকে হতে পারে বিভিন্ন ধরনের রোগ। এই গাছের পাতা দেখতে অনেকটা গাজর গাছের মতো। স্থানীয় মানুষ একে ঝাও ফুল নামে চেনে। গাছগুলো সর্বোচ্চ ৩ থেকে ৪ ফুট লম্বা। ছোট ছোট ফুল দেখতে বেশ সুন্দর। যে গাছটি মানুষ, গবাদিপশু ও ফসলের ক্ষতি করতে পারে। অথচ স্থানীয় মানুষ কিংবা কৃষকদের বিশেষ কোনো ধারণা নেই এই আগাছা সম্বন্ধে।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কৃষকের ক্ষেতে আইলে ও কাঁচা-পাকা রাস্তার দুইধারে শোভা ছড়াচ্ছে বিষাক্ত এই পার্থেনিয়াম গাছ। সাদা ফুল ফুটে থাকায় গাছাটি বেশ সুন্দর দেখাচ্ছে। গ্রামের কেউ কেউ রাস্তার ধারে পার্থেনিয়াম গাছের মধ্যেই ছাগল-গরু চরাচ্ছেন (ঘাস খাওয়াচ্ছে)।
অনেকেই রাস্তায় থাকা আগাছা ভেবে পরিষ্কার করছে অসচেতনভাবে। তারা জানে না ক্ষতিকর পার্থেনিয়াম সম্পর্কে। দামুড়হুদা উপজেলা জুড়ে রাস্তার দু-ধারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে পার্থেনিয়াম গাছ। সাধারণ মানুষ কিংবা মাঠের কৃষকদের তেমন ধারণা নেই এই বিষাক্ত গাছ সম্পর্কে।
উপজেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্যে মতে, পার্থেনিয়াম একটি উদ্ভিদ জাতীয় গাছ। যে কোনো প্রতিকূল পরিবেশে এটি বাঁচতে সক্ষম। বিশেষ করে ফসলের ক্ষেত কিংবা রাস্তার দুধারে এ আগাছাটি বেশি জন্মে। বেঁচে থাকতে কোনো ধরনের যত্নের প্রয়োজন পড়ে না। খুব সহজেই প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারে। এটি উপমহাদেশীয় অঞ্চলের নিজস্ব উদ্ভিদ নয়। প্রতিবেশী দেশ থেকে দানাদার খাদ্য কিংবা গরুর ক্ষুরের মাধ্যমে বাংলাদেশে এসেছে।
বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এটি বেশি নজরে পড়ে সীমান্তবর্তী জেলার রাস্তার দু’ধারে। বর্তমানে বিভিন্ন জেলাতে রাস্তার পাশে ও ফসলের ক্ষেতে ছড়িয়ে রয়েছে। গাছটির আয়ুষ্কাল মাত্র তিন-চার মাস। এর মধ্যেই তিনবার ফুল ও বীজ দেয় গাছটি। ফুল সাধারণত গোলাকার সাদা ও পিচ্ছিল হয়। এ গাছ তিন-চার মাসের মধ্যে ৪ থেকে ২৫ হাজার বীজ জন্ম দিতে সক্ষম।
দামুড়হুদা উপজেলার খাঁনপাড়া গ্রামের কৃষক জামির হোসেন বলেন, এই আগাছাটির নাম ও এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে আগে কখনো শুনিনি। তবে বিভিন্ন ফসলের আইলে, রাস্তার দু’ধারে প্রচুর জন্মায়।
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি অফিসার শারমিন আক্তার বলেন, পার্থেনিয়াম গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। মানবদেহ এবং গবাদিপশুর জন্য এই উদ্ভিদ খুবই বিপজ্জনক। পার্থেনিয়াম গাছে হাজার হাজার ফুল থাকে। যে কারণে পরাগরেণু যদি বাতাসের মাধ্যমে মানুষ অথবা কোনো প্রাণীর শরীরে পড়ে সেখানে চর্মরোগ হতে পারে। এটির বীজ বাতাসের মাধ্যমে অনেক দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে যেতে পারে। সে কারণে এই আগাছাটি খুব দ্রুতই বংশবিস্তার করতে পারে। আগাছাটি কেটে পুড়িয়ে না ফেললে আবারও বংশবিস্তার করতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আগাছাটি মানুষের হাতে পায়ে লাগলে জায়গাটি লাল হয়ে ফুলে যায়। আক্রান্ত ব্যক্তির ঘনঘন জ্বর, অসহ্য মাথাব্যথা ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগতে থাকেন। এটি শুধু বিষাক্তই নয়, যে কোনো ধরনের ফসলের ব্যাপক ক্ষতিও করে। এই আগাছা থেকে ক্যান্সার হয় কিনা সেটা আমার জানা নেই। আগাছাটা নিয়ে গবেষণা চলছে। যদি কোনো ক্ষেতে পার্থেনিয়ামের বিস্তার ঘটে তাহলে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। পোড়াতে গেলে ফুলের রেণু দূরে উড়ে বংশবিস্তার করতে পারে। আবার ব্যক্তির নাকে মুখেও লাগতে পারে। এ ক্ষেত্রে সাবধানতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। বিভিন্ন মাঠ দিবস ও উঠান বৈঠকে আমরা প্রচারের মাধ্যমে কৃষকদের অবহিত করা এবং আগাছাটি নিধনের পরামর্শ দিয়ে থাকি।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক বিভাস চন্দ্র সাহা বলেন, পার্থেনিয়াম আমাদের দেশীয় আগাছা না। এটা পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে এসেছে। তবে এর ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা নেই। এটা আমাদের গবেষকরা বলতে পারবেন। এটা নিয়ে গবেষণা চলছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।