জুমবাংলা ডেস্ক : সম্প্রতি গার্মেন্টস পণ্যের আড়ালে মুড়ি, সেমাই ও পাঁচফোড়ন পাঠিয়ে বিদেশে অর্থ পাচার চেষ্টার অভিযোগ ওঠেছে এক রফতানিকারকের বিরুদ্ধে। আফ্রিকার দেশ মাদাস্কারে পাঠানোর আগেই নস্যাৎ হয়ে গেছে একটি অপচেষ্টা। তবে গত এক মাসে ৫শ কোটি টাকার এ রকম অন্তত ২০টি চালান আটকে দিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
গত শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর একটি প্রাইভেট আইসিডিতে কায়িক পরীক্ষার সময় একটি চালান জব্দ করে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সেই চালানের প্লাস্টিকের বস্তা উপুড় করতেই বের হয়ে আসে মুড়ি, সেমাই, গুঁড়ো মসলা ও পাঁচফোড়নের কয়েকটি প্যাকেট। সব মিলিয়ে যার দাম কোনোভাবেই এক হাজার টাকার বেশি নয়। গার্মেন্টস পণ্যের আড়ালে পাচার করা হচ্ছিল এসব পণ্য।
এটিই প্রথম নয়। গত এক মাসে এ ধরনের ২০টি চালান শনাক্ত করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। প্রতিটি চালানেই নির্ধারিত ওজনের চেয়ে ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পণ্য কম ছিল। যার মোট রফতানি মূল্য ৫শ কোটি টাকার বেশি। মূলত পণ্য রফতানির নামে কোটি কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অপচেষ্টা করছে চক্রটি।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের উপ-কমিশনার ব্যারিস্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্সি বলেন, প্রকৃতপক্ষে এখানে দেখা যাচ্ছে যে, অর্থ পাচারের উদ্দেশ্যে তারা এসব রফতানি কার্যক্রম চালানোর অপচেষ্টা করেছে।
পণ্য রফতানির আড়ালে অর্থ পাচারের সঙ্গে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে যেমন গার্মেন্টস মালিকরা রয়েছেন, তেমনি সহযোগী হিসেবে কাজ করছে বেশ কয়েকটি সিঅ্যান্ডএফ প্রতিষ্ঠানও। মূলত অপ্রচলিত দেশগুলোতে মোট পণ্য রফতানির ওপর ৪ শতাংশ হারে প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। এ চক্র একদিকে যেমন বিদেশে টাকা পাচার করছে, অন্যদিকে সরকারের কাছ থেকে প্রণোদনা হিসেবে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন,
এখানে যদি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট জড়িত থাকেন, তাহলে অবশ্যই দায় আমাদের রয়েছে। তবে কোনো রফতানি পণ্যের চালান আমাদের কাছে আসার আগে সেটির মধ্যে গার্মেন্টস পণ্য আছে কি নেই ,তা কি আমাদের জানা সম্ভব ?
বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘সব সময় রফতানি ক্ষেত্রে যদি এক্সপোর্ট অর্ডারগুলো, সব ডকুমেন্ট এবং ইএক্সপির মূল্যের তথ্যাদি একত্র করে উল্লেখ করা হয় এবং তা অব্যাহত রাখা হয়, তাহলে অর্থ পাচারের এসব জালিয়াতি রোধ করা সম্ভব।’
বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্যকে হুমকির মুখে ফেলতে একটি চক্র এ ধরনের পণ্য পাঠিয়ে স্যাবোটাজ করছে বলে মনে করছেন বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন,
সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার যে একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, এর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিজিএমইএর পক্ষ থেকে আমরা দাবি জানাচ্ছি।
এর আগে, শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ মার্চ এবং সেপ্টেম্বর মাসে দুটি অনুসন্ধানে ১৪টি প্রতিষ্ঠানের ৬৭৯ কোটি টাকা পাচারের তথ্য উদঘাটন করে। অপ্রচলিত বাজারে পণ্য রফতানির নামে অর্থপাচার করছেন ব্যবসায়ীরা। এর কারণে মূল গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের নানা ধরনের জটিলতায় পড়তে হচ্ছে এমনটিই অভিযোগ বিজিএমইএর।
গত ৪ সেপ্টেম্বর রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে, সদ্যবিদায়ী মাসে (আগস্ট) দেশের রফতানি আয় ৩.৮০ শতাংশ বেড়েছে। রফতানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭৮২.১৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর গত বছরের একই সময়ে রফতানি আয় হয়েছিল ৪ হাজার ৬০৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তবে এ বছরের আগস্টে পূরণ হয়নি রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা। এ সময় বাংলাদেশের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৮৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ লক্ষ্যমাত্রা থেকে আয় কম হয়েছে ১.৮১ শতাংশ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।