লাইফস্টাইল ডেস্ক : কথায় বলে মন ভালো তো শরীরও চাঙ্গা। তাই স্পেনের বার্সেলোনার দুটি হাসপাতালে রোগীদের মানসিক স্বাস্থ্য ভালো করার জন্য নেয়া হয়েছে অভিনব এক উদ্যোগ। রোগীদের মনকে প্রফুল্ল করতে দেয়া হচ্ছে থেরাপি ডগের সঙ্গ। আদুরে প্রাণীগুলোর মায়াভরা উপস্থিতিতে স্বস্তিবোধ করছেন রোগীর স্বজন ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও।
বাড়ি পাহারা দেয়ার জন্য কুকুর পোষেন অনেকেই। তবে কোভিড কালীন সময়ে কুকুর পোষার একটা বড়ো কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল নিঃসঙ্গতা। একাকীত্ব দূর করতে, বিষাদমুক্ত হতেই অনেকে দ্বারস্থ হয়েছিলেন সারমেয়ের কাছে। বিশ্বাস করা খানিকটা কঠিন হলেও, সাম্প্রতিক বেশ কিছু গবেষণাতেও উঠে এসেছে এমন তথ্য।
কুকুরের অনুষঙ্গই নাকি মন ভালো করে দেয় মানুষের। এমনকি বহুক্ষেত্রে শুধু মানুষের শারীরিক চিকিৎসার কাজেও সাহায্য করে কুকুর। অনেকক্ষেত্রে হাসপাতাল, বৃদ্ধাশ্রম, লাইব্রেরি, এমনকি স্কুলেও বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুর রাখা হয় মানুষের সাহায্যের জন্য। তাদেরকে বলা হয় ‘থেরাপি ডগ’।
স্পেনের বার্সেলোনার ডে মা হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তির দ্বিতীয় দিন ভিদা ও লু নামের দুটো কুকুরকে দেখে আনন্দে কেঁদে ফেলেন জোয়েল বুয়েনো নামের এক রোগী। তার ভাষায়, ওদেরকে দেখে আমার নিজেরটার কথা মনে পড়ছিলো। ওরা আমাকে চেনেও না। অথচ মুহূর্তেই কতো আপন করে নিয়েছে।
রক্ত জমাট বাধার রোগে আক্রান্ত হয়ে চারদিন থেকে হাসপাতালে রয়েছেন তিনি। জোয়েল বুয়েনো বলেন, যে কোন কিছুর চেয়ে আপনাকে বেশি ভালোবাসে এমন কেউ থাকার অনুভূতি সত্যিই অসাধারণ। ওরা একবার আপনাকে ভালোবাসলে আপনার জন্য সবকিছু করতে পারে।
বার্সেলোনার দে মা হাসপাতাল ও অ্যাফিনিটি ফাউন্ডেশন রোগীদের মানসিক স্বাস্থ্যোন্নতির জন্য পরীক্ষামূলকভাবে এই থেরাপি ডগের কর্মসূচি চালু করেছে। এ সম্পর্কে ওক রোগী বলছিলেন, চিকিৎসকরা যখন জানালেন কতোদিন হাসপাতালে থাকতে হবে তার কোন ঠিক নেই, আমি খুবই হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু যখন জানলাম, মাঝে মাঝে কুকুরের সঙ্গ পাবো তখন থেকে আর খারাপ লাগছে না। এই উদ্যোগ অসাধারণ।
প্রাথমিক অবস্থায় এই প্রোগ্রামের আওতায় রোগীদের প্রতি সপ্তাহে দুইবার ১৫ থেকে ২০ মিনিট থেরাপি ডগের সঙ্গে কাটানোর সুযোগ দেয়া হচ্ছে। সেখানকার চিকিৎসকরা বলেন, এখন পর্যন্ত এটি পরীক্ষামূলক অবস্থায় আছে। আমরা ধারণা করছি, প্রাণীরা রোগীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর বেশ ইতিবাচক প্রভাব রাখে।
শুরু রোগীরা না, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে অক্লান্ত পরিশ্রম করা স্বাস্থ্যকর্মীরাও ক্লান্তি ভুলে যাচ্ছে আদুরে থেরাপি ডগের সান্নিধ্য পেয়ে। প্রতি মুহূর্তে দুশ্চিন্তায় ঠাসা হাসপাতালে নিরীহ প্রাণীগুলো ছড়িয়ে দিচ্ছে স্বস্তি। তারা বলেন, রোগী, হাসপাতালের স্টাফ, রোগীদের স্বজন, চিকিৎসক সহ সবার মনে ইতিবাচক প্রভাব রাখছে কুকুরগুলো। অনেকেই আসছে, আদর করছে। এতে তাদের দৈনিক মানসিক চাপ কমছে।
জানা যায়, ডগ থেরাপির আগে ও পরে রোগীদের শরীর থেকে সালিভা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার মাধ্যমে গবেষণা চালানো হচ্ছে। যার ফলাফলও মিলছে নিমেষেই। মজার বিষয় হল, এই বিশেষ শব্দবন্ধটির জন্ম হয়েছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষলগ্নে। এরপর থেকে খেরাপি ডগ বিষয়টি ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।