বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : প্রথমে তারা পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল ছেড়েছিল। একে একে সৌরমণ্ডলের সব গ্রহ-উপগ্রহ অতিক্রম করে। তারপর অনন্ত শূন্যের দিকে শুরু করে যাত্রা। ৪৬ বছর ধরে তারা নিরন্তর ছুটে চলেছে। কিন্তু কোথায় চলেছে? আসলে তাদের কোনো নির্দিষ্ট গন্তব্য নেই। অন্তত-অসীমের পথই তাদের গন্তব্য। তারা কখনও ফিরবে না। আর এভাবে নিরন্তর পথ চলতে থাকলে এক সময় তারা এতটাই দূরে চলে যাবে, মানুষ তাদের কাছ থেকে আর কোনো সংকেত পাবে না। হয়তো এক সময় আমাদের গ্যালাক্সি মিল্কিওয়ের বাইরেও চলে যেতে পারে।
এভাবে মহাশূন্যে ছুটে চলছে ভয়েজার-১ ও ভয়েজার-২। ১৯৭৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যাত্রা শুরু করে ভয়েজার-১। এর ১৬ দিন পর শূন্যে পাড়ি জমায় অপর ভয়েজারটি। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের পাশাদেনা থেকে তাদের উৎক্ষেপণ করে। অভিযানটির প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল চার বছরে তারা সৌরজগতের বিভিন্ন গ্রহ থেকে ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করবে। তখন বিজ্ঞানীদের অনেকেই ভাবেননি ৪৬ বছরের বেশি সময় ধরে চলতে থাকবে এ অভিযান।
এর মধ্যে বেশি পথ পাড়ি দিয়েছে ভয়েজার-১। বর্তমানে এটি পৃথিবী থেকে দুই হাজার চারশ কোটি কিলোমিটার দূরে। ভয়েজার-২ অতিক্রম করেছে দুই হাজার কোটি কিলোমিটার। দুই ভয়েজারের পথ এক নয়। দুটি ছুটে চলেছে ভিন্ন দিকে। ভয়েজার-১ সৌরমণ্ডলের শনিগ্রহের পাশ দিয়ে গেলেও ভয়েজার-২ এর যাত্রা ছিল নেপচুনের পাশ দিয়ে।
এ দুটি মহাকাশযানের সৌরজগতের সীমানা পার হওয়ার বিষয়টি এত সহজ ছিল না। তাদের অভ্যন্তরে থাকা শক্তি দিয়ে সেটা হয়তো সম্ভবও হতো না। এ ক্ষেত্রে অনন্ত মহাশূন্যের পথে সৌরজগতের গ্রহগুলোর অভিকর্ষ বলকে কাজে লাগিয়েছে তারা। এ বল কাজে লাগিয়ে গতি বাড়িয়েছে। ভয়েজার-১ যাত্রা শুরুর পর প্রথমে বৃহস্পতি গ্রহের পাশ দিয়ে যায়। এরপর শনি গ্রহকে অতিক্রম করে। এ যাত্রায় এ গ্রহ দুটির বেশ কয়েকটি উপগ্রহকেও এটি অতিক্রম করে। বিষয়টি এত সহজ ছিল না। বিজ্ঞানীরা নির্দিষ্ট সময়ে যাতে নির্দিষ্ট গ্রহ-উপগ্রহ অতিক্রম করতে পারে, সেভাবেই ভয়েজারদের উৎক্ষেপণ করেছিলেন।
পৃথিবী থেকে অনেক দূরত্বে চলে যাওয়ায় দুই ভয়েজারের সঙ্গে যোগাযোগে মাঝেমধ্যে কিছু সমস্যা হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার পাশাদেনায় নাসার জেট প্রোপালশন ল্যাবরেটরির ভয়েজার প্রকল্প ব্যবস্থাপক সুজানে ডড বলেন, ভয়েজাররা অনেকটা যমজ বোনের মতো। একজন কিছুটা শ্রবণ ক্ষমতা হারিয়েছেন। সহায়তার প্রয়োজন হয়। অন্যজনের সঙ্গে যোগাযোগ কিছুটা কঠিন হয়েছে। সময়ের বিবর্তনে এমনটা হয়। বয়স তো আর কম হলো না। তবে সে তুলনায় তাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা বেশ ভালো। পারমাণবিক জ্বালানি এ ‘বোন’দের শক্তির উৎস।
২০১২ সালে মানুষের তৈরি প্রথম কোনো বস্তু হিসেবে ভয়েজার-১ সৌর জগতের সীমানা অতিক্রম করে অনন্ত মহাশূন্যে পাড়ি জমায়। এ কারণে বছরটি মানব ইতিহাসে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তবে সৌরজগতের বাইরে বের হলেও এখনও তাদের আত্মার সম্পর্ক থেকে গেছে পৃথিবীর সঙ্গে। ধারণা করা হচ্ছে, যতক্ষণ না পর্যন্ত তারা দূরবর্তী অর্ট মেঘমালায় পৌঁছাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা সম্ভব হতে পারে। অর্ট মেঘমালায় পৌঁছাতে এদের সময় লাগবে ১৪ থেকে ২৮ হাজার বছর।
ভয়েজার-১ শুধু একটি মহাকাশযানই নয়। একটি কেবল বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহের তথ্য ও ছবি সংগ্রহের জন্য পাঠানো হয়নি। এটি মহাশূন্যে পাঠানো পৃথিবীর মানুষের প্রথম বার্তাবাহক। এর ভেতরে আছে গোল্ডেন রেকর্ড। বিস্ময়কর এ রেকর্ডটি পাঠানো হয়েছে পৃথিবীর বাইরের বুদ্ধিমান প্রাণীদের (যদি থাকে) জন্য। এতে বাংলাসহ ৫৫টি ভাষায় সম্ভাষণ অন্তর্ভুক্ত আছে। আছে পৃথিবীর নানা শব্দ– পাখির ডাক, নবজাতকের কান্না, নানা ভাষার গান। সূত্র: সিএনএন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।