ধর্ম ডেস্ক : হাদিসশাস্ত্রের উজ্জ্বল নক্ষত্র হজরত আবু হুরায়রা (রা.), যিনি প্রিয় নবীজি (সা.)-এর অসংখ্য হাদিস বর্ণনা করেছেন। হাদিসের পাতায় তাঁর নাম ইলমপিপাসু ছাত্রদের মনে তাঁর ভালোবাসা বৃদ্ধি করে। তালিবে ইলমের মনে প্রশ্ন জাগে কিভাবে এত হাদিস বর্ণনা করলেন আবু হুরায়রা (রা.)। সে প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তিনি নিজেই।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, (সন্দেহ করে) মানুষজন বলে যে আবু হুরায়রা বেশি হাদিস বর্ণনা করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর কাছে সবারই প্রত্যাবর্তন করতে হবে। এবং তারা আরো বলে, মুহাজির ও আনসারদের কী হলো যে তারা আবু হুরায়রার মতো এত হাদিস বর্ণনা করে না।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমার মুহাজির ভাইদের বাজারে ব্যবসা-বাণিজ্য এবং আনসার ভাইদের তাদের ক্ষেত-খামার ও বাগানের কাজকর্ম ব্যতিব্যস্ত রাখত।
আমি ছিলাম একজন মিসকিন লোক। পেটে যা জোটে, খেয়ে না খেয়ে তাতেই তুষ্ট হয়ে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর দরবারে পড়ে থাকতাম। তাই লোকেরা যখন অনুপস্থিত থাকত, আমি হাজির থাকতাম। লোকেরা যা ভুলে যেত, আমি তা স্মরণ রাখতাম।
একদিন নবী (সা.) বলেন, তোমাদের যে কেউ আমার কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার চাদর বিছিয়ে রাখবে এবং আমার কথা শেষ হলে চাদরখানা তার বুকের সঙ্গে মেলাবে, তাহলে সে আমার কথা কখনো ভুলবে না। আমি আমার চাদর নবী (সা.)-এর কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিছিয়ে রাখলাম। সে চাদর ছাড়া আমার গায়ে আর কোনো চাদর ছিল না। নবী (সা.)-এর কথা শেষ হওয়ার পর আমি তা আমার বুকের সঙ্গে মেলালাম। সেই সত্তার কসম! যিনি তাঁকে সত্য দিয়ে প্রেরণ করেছেন, আজ পর্যন্ত আমি তাঁর একটি কথাও ভুলিনি।
আল্লাহর কসম! যদি আল্লাহর কিতাবের এ দুটি আয়াত না থাকত, তবে আমি কখনো তোমাদের নিকট হাদিস বর্ণনা করতাম না। (তা এই) ‘নিশ্চয়ই যারা আমার নাজিলকৃত উজ্জ্বল নিদর্শনাবলি ও হিদায়াতকে গোপন করে, যদিও আমি কিতাবে তা মানুষের জন্য সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেছি, তাদের প্রতি আল্লাহ লানত বর্ষণ করেন এবং অন্য লানতকারীরাও লানত বর্ষণ করে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৯-১৬০) (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৩৫০)
এই হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা (রা.)-এর অধিক হাদিস বর্ণনার দুটি মৌলিক রহস্য উন্মোচিত হয়েছে,
এক. ইলম অন্বেষণে আবু হুরায়রা (রা.)-এর দৃঢ়তা, লেগে থাকা বা কঠোর পরিশ্রম।
দুই. নবীজি (সা.)-এর বিশেষ দোয়া ও তাওয়াজ্জুহ। তিনি নবীজি (সা.)-এর নির্দেশনামতো নবীজির কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত চাদর বিছিয়ে রেখেছিলেন এবং নবীজি (সা.)-এর কথা শেষ হওয়ার পর তা বুকে জড়িয়ে নিয়েছেন। এই কাজের বরকতে মহান আল্লাহ তাঁর স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করে দিয়েছেন। নবীজি (সা.) থেকে শোনা প্রতিটি কথা তাঁর স্মৃতিতে গেঁথে দিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এটা ছিল নবীজি (সা.)-এর মুজিজা, যার বরকতে আবু হুরায়রা (রা.) এত হাদিস মুখস্থ রাখতে পেরেছেন এবং বর্ণনা করেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।