বিনোদন ডেস্ক : ভারতের পশ্চিমবঙ্গে জন্ম হলেও দেশভাগের পর চলে আসেন চট্টগ্রামে। ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনার পাট চুকিয়ে প্রকৌশলী হিসেবে যুক্ত হন ওয়াসায়। এরপর হঠাৎ করেই ১৯৬৮ সালে ‘ইডিপাস’ নাটকের মধ্য দিয়ে টেলিভিশন জগতে আত্মপ্রকাশ। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন টিভি নাটকের নিয়মিত অভিনেতা। প্রধান চরিত্রে অভিনয় না করেও জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছে যান তিনি। কথা হচ্ছে আবুল হায়াতকে নিয়ে। একুশে পদকপ্রাপ্ত এই বরেণ্য অভিনেতা, নাট্যকার ও নির্দেশকের জন্মদিন আজ। ১৯৪৪ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করা এই গুণী অভিনেতা আজ আশিতে পা দিয়েছেন।
জন্মদিন প্রসঙ্গে আবুল হায়াত বলেন, “আমার এবং আমার নাতনি নাতাশার বড় মেয়ে শ্রীষার জন্মদিন একই দিনে। নাতনির ১৪ আর আমার ৮০তম জন্মদিন; যে জন্য জন্মদিনের আনন্দ হয় দ্বিগুণ। এবার যেহেতু ৮০ বছরে পা রাখছি, তাই এবারের জন্মদিনটি একটু বিশেষভাবেই উদযাপন করবে সবাই। স্ত্রী শিরীন আগের দিনই কেক এনে জন্মদিনের প্রথম প্রহরকে আনন্দময় করে তোলার চেষ্টা করে।
এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। চ্যানেল আইয়ের ‘তারকাকথন’ অনুষ্ঠানে আজ হাজির হবো। ছোটবেলায় আমার জন্মদিন উদযাপন হয়েছে বলে মনে পড়ে না। রেওয়াজ তখন ছিল না। ওই দিন দোয়া-দরুদ পড়তেন বাবা-মা। আমাদের ভাগনি-ভাগনেদের জন্মদিনগুলো দেখতাম, বেশ ঘটা করে উদযাপন হতো। আমার জন্মদিন উদযাপিত হচ্ছে বুড়ো বয়সে [হাসি]। জন্মদিনের আনন্দের সঙ্গে একটু খারাপ লাগাও কাজ করছে।
আমার এই বিশেষ দিনে দুই মেয়ে বিপাশা আর নাতাশা পাশে নেই। তারা থাকলে জন্মদিন পরিপূর্ণ হতো। ধন্যবাদ আমার প্রাণের প্রিয় দর্শকের প্রতি। তাদের জন্যই এখনও আমি অভিনয়ের অনুপ্রেরণা পাই। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।”
অভিনয়ের স্বীকৃতিস্বরূপ আবুল হায়াত তৌকীর আহমেদ পরিচালিত ‘দারুচিনি দ্বীপ’ সিনেমায় অভিনয়ের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হয়েছিলেন। তবে তিনি মনে করেন, ১৯৭৪ সালে তিনি অভিনয়ের জন্য যে পুরস্কার পেয়েছিলেন সেটিই তাঁর জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন।
১৯৭৪ সালে তিনি আলী যাকেরের নির্দেশনায় মঞ্চে ‘বাকী ইতিহাস’ নাটকে অভিনয় করেছিলেন। তাতে অভিনয়ের জন্য তিনি ‘সিকোয়েন্স অ্যাওয়ার্ড ফর ন্যাচারালিস্টিক অ্যাক্টিং অন বাংলাদেশ স্টেজ’ অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছিলেন। এটিই তাঁর অভিনয় জীবনের সেরা পুরস্কার।
সারাজীবনের প্রাপ্তি হিসেবে তিনি দর্শকের ভালোবাসাকেই সেরা বলে মনে করেন। ‘ইডিপাস’-এর পর ‘এইসব দিনরাত্রি’, ‘বহুব্রীহি’, ‘অন্য ভুবনের ছেলেটা’, ‘দ্বিতীয় জন্ম’, ‘শেখর’, ‘অয়োময়’, ‘নক্ষত্রের রাত’, ‘আজ রবিবার’, ‘জোছনার ফুল’, ‘শুকনো ফুল রঙ্গিন ফুল’, ‘আলো আমার আলো’, ‘নদীর নাম নয়নতারা’, ‘খেলা’, ‘শনিবার রাত ১০টা ৪০ মিনিট’, ‘হাউজফুল’, ‘এফ এন এফ’সহ অসংখ্য দর্শকনন্দিত নাটকে অভিনয় করে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। তাঁকে বলা হয় টিভি নাটকের ইতিহাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় ‘বাবা’। শুধু অভিনয়েই নয়, নাট্যকার হিসেবেও নিজের প্রতিভার আলো ছড়িয়েছেন। পরিচালনা করেছেন ‘উন্মেষ’, ‘দিল দরিয়া’, ‘জোছনার ফুল’, ‘মনহৃদয়’, ‘হারানো সুর’, ‘শুকনো ফুল’, ‘রঙ্গিন ফুল’, ‘মধ্যাহ্নভোজ কি হবে’, ‘হাত বাড়িয়ে দাও’-এর মতো বহু আলোচিত নাটক।
সবশেষ চ্যানেল আইয়ের জন্য নির্মাণ করেন ‘পাগলা হাওয়ার বাদল দিনে’ নাটকটি। নাট্য জগতের পাশাপাশি চলচ্চিত্র জগতেও নিজেকে করেছেন সমৃদ্ধ। ১৯৭৩ সালে ঋত্বিক ঘটকের ‘তিতাস একটি নদীর নাম’ ছবিতে স্বল্প উপস্থিতির চরিত্রে প্রথম অভিনয় করেন। একই বছর ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’তেও তাঁকে দেখা যায়। ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘প্রাণের চেয়ে প্রিয়’, ‘প্রেমের তাজমহল’, ‘শঙ্খনীল কারাগার’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘জয়যাত্রা’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’, ‘অজ্ঞাতনামা’, ‘ফাগুন হাওয়ায়’সহ অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করে নিজের জাত চিনিয়েছেন তিনি। সাহিত্য জগতেও নিজের নাম লিখিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি বিজ্ঞাপনের মডেল হিসেবেও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। উপস্থাপক হিসেবেও প্রশংসিত হয়েছিলেন। ব্যক্তিজীবনে বিয়ে করেন ১৯৭০ সালে, স্ত্রীর নাম মাহফুজা খাতুন শিরিন।
তাঁর দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে নাট্য জগতের নন্দিত টিভি অভিনেত্রী বিপাশা হায়াত; ছোট মেয়ে অভিনেত্রী নাতাশা হায়াত। অভিনেতা ও নির্দেশক তৌকীর আহমেদ ও মডেল-অভিনেতা শাহেদ তাঁর জামাতা। জীবনে চাওয়া-পাওয়ার হিসাব করেছেন কখনও– জানতে চাইলে বলেন, ‘এমন প্রশ্নের উত্তরে আমি সব সময়ই বলি, জীবনে চেয়েছি কম, পেয়েছি বেশি। সাধারণ মানুষের ভালোবাসার কোনো অন্ত নেই জীবনে। আমি অত্যন্ত ভাগ্যবান, শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই আমাকে ভালোবাসেন। এ কারণেই আমি বেশি সুখী। সাংসারিক, অভিনয় জীবন আমার ধন্য। পরিপূর্ণ জীবনে সবার ভালোবাসা নিয়ে বাকি জীবনটা হাসি-খুশিতে কাটিয়ে দিতে চাই।’ জীবনকে চ্যালেঞ্জিং এবং মধুময় হিসেবে দেখেন আবুল হায়াত।
তিনি মনে করেন, বেঁচে থাকতে হলে কাজ করতে হবে। কাজ করা মানে আনন্দ করা। কাজের মধ্যে আনন্দ আর আনন্দের মধ্যে বেঁচে থাকা– এটাই জীবন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।