ইমানুল সোহান : তাপপ্রবাহ যতই স্থায়ী হচ্ছে ততই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি) দোকানে ভিড় করছে মানুষ। এই গরমে একটু স্বস্তিতে থাকতে উচ্চবিত্তের বিলাসিতা এসি এখন মধ্যবিত্তের প্রয়োজনীয়তায় রূপ নিয়েছে। তাই ঢাকার এসির শোরুমেগুলোতে ভিড় বেড়েছে উচ্চবৃত্ত-মধ্যবৃত্ত শ্রেণীর ক্রেতাদের। যারা পরিবারকে নিয়ে একটু স্বস্তিতে থাকতে কষ্ট হলেও পছন্দের নতুন এসি কিনছেন। তবে উল্টো চিত্রও দেখা গেছে। মধ্যবৃত্তের অনেকে দামের কারণে পুরনো এসি কেনায় ঝুঁকছেন।
তাদের অনেকে এসির শোরুমে নতুন এসি দেখলেও সাধ্যের মধ্যে না থাকায় ফিরে যাচ্ছেন। কারণ ঢাকা শহরের কয়েকটি এলাকায় পুরনো (রিকন্ডিশন) এসি পাওয়া যায়। যেখানে মাত্র ১৫ হাজার থেকে এসির দাম শুরু হয়। এই গরমে তাই রিকন্ডিশন এসির চাহিদাও বেড়েছে। বিশেষ করে স্বল্প তথা মধ্যবিত্তের অনেকেই এসব এসির দোকানো ভিড় করছেন।
মূলত রাজধানীর বারিধারা, যাত্রাবাড়ি, তেজগাঁওয়ের বিভিন্ন দোকানে স্বল্প দামে মিলে পুরনো এসি। বারিধারা নতুন বাজার জে ব্লগ এমনি একটি পুরাতন এসির দোকান। সেই দোকানো এসি কিনতে যান সালাম মুন্সি। তিনি বলেন, নতুন এসি ৫০ হাজারের নিচে পাওয়া সম্ভব নয়। তাই বাধ্য হয়ে পুরনো এসি দোকানো আসলাম। ভালো হলে এই দোকান থেকে এসি কিনবো।’
তিনি আরও বলেন, মাত্র ১৫ থেকে ৩০ হাজারের মধ্যে ভালো মানের রিকন্ডিশন এসি পাওয়া যাচ্ছে। তবে পুরনো এসিতে কিছুটা ঝুঁকি থাকে। তবে ব্রান্ডের এসি হলে ঝুঁকিটা কম। তাই অনেকেই কিনছেন। তাই আমিও নেওয়ার পরিকল্পনা করেছি।’
বারিধারা রিকন্ডিশন পুরনো এসি বিক্রেতা সাইফুল ইসলাম বলেন, সারা বছর তারা বাসাবাড়ি-অফিসে এসি ওয়াশ ও মেরামতে কাজ করেন। তবে এখন বিক্রির কাজটাই বেশি করছেন। সারা বছর রিকন্ডিশন এসির চাহিদা তেমন একটা না থাকলেও এপ্রিল, মে, জুন এই তিন মাসে তারা রিকন্ডিশন এসি সব থেকে বেশি বিক্রি করে থাকেন। এ সকল এসি তারা অফিস-বাসা-রেস্টুরেন্ট এবং অ্যাম্বাসীগুলো থেকে সংগ্রহ করে থাকেন। দেশে বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এক থেকে পাঁচ টনের এসি পাওয়া যাচ্ছে রিকন্ডিশন এ সকল এসির দোকানগুলোতে। যার দাম শুরু হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা থেকে।’
তিনি আরও বলেন, দেড় টনের ‘গ্রি’ এসি তারা বিক্রি করছেন ২৮ হাজার, দুই টনের ‘বাটারফ্লাই’ এসি ২৮ থেকে ৩০ হাজার, একটানের ‘মিনিস্টার’ এসি বিক্রি করছেন ১৬ হাজার টাকায়। ‘হায়ার’ দেড়টনের ইনভাটর এসি বিক্রি করছি ২৮ হাজার টাকায়। মার্কেটে যে এসিগুলার দাম ৬০ থেকে ১ লাখ টাকার মধ্যে আছে, সেগুলো আমরা তিন ভাগের একভাগ দামে বিক্রি করছি।
শুধু বাসাবাড়ি নয় অফিস-রেস্টুরেন্টের জন্য রিকন্ডিশন এসি ক্রেতারা আছেন বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তবে বাসাবাড়িতে ব্যবহারে জন্য এক থেকে দেড় টনের এসির চাহিদা বেশি।
তেজগাঁওয়ে পুরনো এসি বেচাকেনা করেন আব্দু্ল্লাহ। তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন অফিস-আদালত থেকে যেসব এসি সংগ্রহ করি, সেগুলো ভালো থাকে। আবার যারা বাসাবাড়ি শিফট করে বিদেশ চলে যায়, সে ক্ষেত্রেও সেগুলো ভালো থাকে। আবার অনেকে এসিতে সমস্যা দেখা দিলে বিক্রি করে দেয়। আমরা সব এসির ক্ষেত্রে নিজেরা আগে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করি যে এসিতে কোনও ধরনের সমস্যা আছে কি না। কারণ জেনেশুনে আমরা তো কারও ক্ষতি করতে পারি না। দিন শেষে আমাদের কাছ থেকে যারা এসি কেনে, আমরা তাদেরই সার্ভিস দিয়ে থাকি। এ ক্ষেত্রে তারা যদি কোনও সমস্যায় পড়ে, তাহলে তো আমাদের দায়ভার নিতে হবে।
রিকন্ডিশন্ড এসি কেনার ক্ষেত্রে যেসব বিষয় খেয়াল করা জরুরি:
১. দাম একটু বেশি হলেও সুপরিচিত ব্র্যান্ডের এসি কিনতে হবে। এ ক্ষেত্রে সেই ব্র্যান্ডের কিছুটা হলেও সুবিধা পাওয়া যাবে।
২. বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) মানচিহ্ন আছে কি না, তা নিশ্চিত হয়ে নেওয়া উচিত।
৩. ঘরের আকার অনুযায়ী এসি কিনতে হবে। টাকা বাঁচাতে বড় কক্ষের জন্য কম ক্ষমতার এসি কিনবেন না।
৪. বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ও আধুনিক প্রযুক্তির এসি কিনুন। এতে বিদ্যুৎ খরচ কমবে।
৫. পেশাদার টেকনিশিয়ানের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে।
৬. রিকন্ডিশন্ড এসি কেনার ক্ষেত্রে এসিতে কোনও সমস্যা আছে কি না, তা বিক্রেতার কাছ থেকে নিশ্চিত হতে হবে। সূত্র : দেশ রূপান্তর
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।