জুমবাংলা ডেস্ক : তীব্র গরমে যশোরে মহাসড়কের পিচ গলে যাওয়ার ঘটনা তদন্তে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ২টায় যশোর-নড়াইল মহাসড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে গলে যাওয়া পিচ পরীক্ষা করেন দুদক কর্মকর্তারা। এ সময় তাদের সঙ্গে সড়ক ও জনপদ বিভাগের কর্মকর্তারাও ছিলেন।
এক মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশজুড়ে চলছে তাপপ্রবাহ। এর মধ্যেও চলতি মৌসুমে যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এমন পরিস্থিতিতে গলে নরম হতে শুরু করে যশোর-নড়াইল আঞ্চলিক মহাসড়কের পিচ বা বিটুমিন। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেখানে অভিযোগ করা হয়, দুর্নীতির কারণে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সড়ক নির্মাণ করায় পিচ গলে যাচ্ছে।
সড়ক বিভাগের তথ্য মতে, চার মাস আগে এ মহাসড়কে কার্পেটিংয়ের কাজ করা হয়। তখন প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ কোটি ৫৫ লাখ ৫৬ হাজার টাকা। জানা গেছে দুদকের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নির্দেশে আজ এ মহাসড়কে বিভিন্ন পয়েন্টে সড়কের গলে যাওয়া পিচ পরীক্ষার করেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা। এ সময় তারা সড়কের কাজ নিম্নমানের বলে মন্তব্য করেন। একইসঙ্গে দ্রুত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলেও জানান। এ সময় দুদকের উপপরিচালক আল আমিন, সহকারী পরিচালক চিরঞ্জন নিয়োগী, সহকারী পরিদর্শক সাফিউল্লাহসহ সড়ক বিভাগের দুইজন সহকারী প্রকৌশলী ছিলেন।
যশোর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দুদকের উপপরিচালক আল আমিন বলেন, এ মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে পিচ পরীক্ষা করেছি। বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত লিপিবদ্ধ করে আমরা প্রধান কার্যালয়ে পাঠাবো। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি বলতে পারছি না।
সরেজমিনে মহাসড়কের যশোর অংশের ঝুমঝুমপুর এলাকায় দেখা গেছে, বৃহস্পতিবারও সড়কের পিচ গলে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যান চলাচলের সময় চাকায় লেগে যাচ্ছে সেই পিচ। আবার কোথাও কোথাও যানবাহনের চাকার দাগ বসে যাচ্ছে। এ সড়কে চলাচলকারীরা বলেন, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে সড়ক সংস্কারের সময়। সড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার অংশের অধিকাংশ জায়গার পিচ গলে যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
এদিকে তাপদাহে সড়কের পিচ গলে যাওয়াতে নির্মাণ সংশ্লিষ্টদের দায়ী করছেন স্থানীয়রা। মুরাদ হোসেন নামে স্থানীয় এক ব্যবসায়ী বলেন, রোদ-গরমে দুপুর থেকে রাস্তার পিচ গলতে শুরু করে। দুপুর গড়ানোর পর রাস্তার পিচ কাদা হয়ে যায়। ফলে রিকশার চাকা রাস্তায় আটকে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা নিরব হোসেন জানান, যশোর-নড়াইল মহাসড়ক নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। যেভাবে নির্মাণ করছে, এতে ভোগান্তিতে পড়ে। সড়কে হেঁটে চললে জুতা পিচের সঙ্গে আটকে যাচ্ছে। এর দায় হচ্ছে সড়ক ও জনপদ বিভাগের। আব্দুল্লাহ আল মামুন নামে এক ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই রোদে রাস্তায় হাঁটলে জুতার সোল পিচে আটকে যাচ্ছে। এত নিম্নমানের কাজ করেছে, যে ৪০ ডিগ্রী তাপমাত্রা গলে যাচ্ছে সড়কের পিচ। আমরা সুষ্ঠু তদন্ত করে এসব সড়ক ও জনপদ বিভাগের ঠিকাদার ও কর্মকর্তাদের শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, তারা সাধারণত সড়কে যে পিচ ব্যবহার করেন তা ৬০-৭০ গ্রেডের। এর গলনাঙ্ক ৪৮ থেকে ৫২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অর্থাৎ তাপমাত্রা ৪৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে এ পিচ গলার কথা। কিন্তু তার অনেক আগেই পিচ গলে যাচ্ছে।
পিচ গলার কারণ হিসেবে সওজর সংশ্লিষ্ট সূত্র বলেছে, তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির নিচে থাকলেও বাতাসের আর্দ্রতার কারণে অনুভূতির পরিমাণ আরও কয়েক ডিগ্রি বেশি হয়। সড়কের পিচের ওপরে এই তাপমাত্রা আরও প্রায় ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি থাকে। আর কালো হওয়ায় এই পিচ সূর্যের তাপও শোষণ করে বেশি। এছাড়া সড়কে চাকার ঘর্ষণের ফলে উৎপাদিত তাপও এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় পিচ গলে যেতে পারে। তবে এর বাইরে সড়কের কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।
এ বিষয়ে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া বলেন, যশোর-নড়াইল মহাসড়কের যেসব স্থানে বিটুমিন বেশি পড়েছে; গরমে সেখানকান বিটুমিন গলে যাচ্ছে। এজন্য গলে যাওয়া স্থানগুলোতে বালি ও নুড়িপাথর দেওয়া হচ্ছে; যাতে গলে যাওয়া পিচ আগের অবস্থায় ফিরে আসে। সড়কে নিম্নমানের কোন সামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, দুদক তদন্ত করছে। অনিয়ম হলে তাদের তদন্তে জানা যাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।