বিনোদন ডেস্ক : বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী অভিনেত্রী অঞ্জু ঘোষ। ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ সিনেমা দিয়ে কোটি ভক্তের মন জয় করে নিয়েছিলেন তিনি। এরপর দুই বাংলা মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিনশো ছবিতে কাজ করেছেন তিনি। ক্যারিয়ারের তুঙ্গে থাকা অবস্থায় হঠাৎ সবকিছু ছেড়ে অন্তরালে চলে অঞ্জু। পর্দায় কেন তাকে আর নিয়মিত দেখা যায়নি, সম্প্রতি সে বিষয়েই মুখ খুলেছেন ওপার বাংলা জনপ্রিয় অভিনেতা চিরঞ্জিত। জানিয়েছেন, অঞ্জু ঘোষের আচার–আচরণে বাংলাদেশি মুসলমানের ছাপ থাকায় টলিউডে অনেকেই তার সঙ্গে কাজ করতে চাইতেন না!
সম্প্রতি কলকাতার গণমাধ্যমে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে অভিনেতা বলেন, আমি যখন অঞ্জুর সঙ্গে কাজ করেছি তখনো ওর ভীষণ ডিমান্ড ছিল। কিন্তু এখানে অনেকেই মনে করতেন, তিনি ঠিক আর চার–পাঁচটা হিন্দুর মতো নন। তার কথাবার্তা, হাঁটাচলা সবখানেই বাংলাদেশি মুসলমানের ছাপ ছিল। সেই জন্যই তিনি একজন বড় মাপের অভিনেত্রী হওয়া সত্ত্বেও অনেকেই তার সঙ্গে কাজ করতে চাইতেন না। কুণ্ঠা বোধ করতেন।
ক্যারিয়ারে একাধিক ব্যবসাসফল সিনেমা উপহার দেওয়ার পরেও আড়ালে চলে যান অভিনেত্রী। কেন তিনি সিনেমা থেকে সরলেন? চিরঞ্জিতকে এই প্রশ্ন করা হলে অভিমান নিয়ে অভিনেতার পাল্টা প্রশ্ন, তিনি সরে আসায় কি খুব কিছু আসে যায় দুই বাংলার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির?
ভারতীয় ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিনেমা থেকে দূরে সরে যাওয়ার পেছনে চাপা অভিমান নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে অঞ্জু ঘোষ বলেছিলেন, জাতি–জাতি করে একটা হিড়িক উঠেছিল–ও হিন্দু, ও মুসলমান! আমি এর মধ্যে পড়তে চাইনি। ক্যারিয়ারে ৩৫০ ছবিতে অভিনয় করেছি। তার মধ্যে ২০০টি ছবি ছিল বাংলাদেশের। হিন্দুর বাড়ির মেয়ে হয়েও সেই ২০০টা ছবিতেই কালেমা পড়ে অভিনয় করেছি। সেজেছি মুসলমানের বেটি। কিন্তু বাংলাদেশ আমাকে বলল, হিন্দুর বেটি। অন্যদিকে এখানে যখন এলাম আমার গোটা প্রেজেন্টেশন দেখে ভারত বলল, আমি মুসলমানের বেটি। ফলে হলো কী, আমি ওপারে সংখ্যালঘু, এপারেও সংখ্যালঘুই থেকে গেলাম।
প্রসঙ্গত, ১৯৮৭ সালে প্রধান নারী চরিত্রে সর্বাধিক ১৪টি সিনেমায় অভিনয় করেন অঞ্জু ঘোষ। মন্দার বাজারে যেগুলো ছিল ব্যবসা সফল। ১৯৮৯ সালে ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে জুটি বেঁধে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে হিট সিনেমা ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ উপহার দেন তিনি। ‘বেদের মেয়ে জোসনা’ ছবিতে কাজ করার আগে ‘চন্দন দ্বীপের রাজকন্যা’ ছবিতে অভিনয় করেন অঞ্জু ঘোষ। সেই ছবিটি ছিল বাংলাদেশে তৎকালীন সবচেয়ে সফল ছবি।
১৯৯৬ সালে হঠাৎই বাংলাদেশ ছেড়ে কলকাতায় চলে যান অঞ্জু ঘোষ। কাজ করতে শুরু করেন সেখানকার সিনেমায়। কিন্তু কেন তিনি বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন, সে উত্তর আজও মেলেনি। দীর্ঘ ২২ বছর পর সবশেষ ২০১৮ সালে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির উদ্যোগে এফডিসিতে এসেছিলেন অঞ্জু ঘোষ। কিছুদিন থাকার পর কলকাতায় ফিরে যান।
২০১৯ সালের জুনে বিজেপিতে যোগ দেন অঞ্জু ঘোষ। তখন তার নাগরিকত্ব নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। পরে বিজেপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, অঞ্জু ঘোষ জন্মসূত্রে ভারতীয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।