জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত আইডিয়াল কলেজে গত এপ্রিলে নিয়োগপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোবাশ্বের হোসেনকে নিয়ে শুরু হয়েছে নানা বিতর্ক। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ভারতীয় নাগরিক হয়েও নিজেকে বাংলাদেশি দাবি করে দীর্ঘদিন ধরে আইডিয়াল কলেজ ও অন্য একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন।
ভারতীয় নাগরিক হিসেবে তিনি প্রাথমিক স্কুল থেকে স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গে লেখাপড়া করেছেন। এ ছাড়া তথ্য গোপন করে এমপিওভুক্তও হন মোবাশ্বের হোসেন।
কলেজ সূত্রে জানা যায়, গত ১৪ মার্চ কলেজের পরিচালনা অ্যাডহক কমিটির সভায় তাঁর স্কুল থেকে স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত ভারতীয় একাডেমিক সনদ এবং লেখাপড়ার সময় নাগরিকত্বের পরিচয়ের বিষয়ে জোরালোভাবে প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। পরবর্তী সভায় তাঁকে কমিটির সামনে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলে অ্যাডহক কমিটি। পরে ২৫ মার্চের সভায় তাঁর যাবতীয় ব্যাখ্যা ও প্রশ্নোত্তর পর্যালোচনা শেষে ১ এপ্রিল থেকে পরবর্তী ছয় মাসের জন্য ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে তাঁকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব প্রদান করা বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করে সভায় উপস্থিত কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য এই সিদ্ধান্তে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ প্রদান করেন।
দায়িত্ব গ্রহণ করেই মোবাশ্বের হোসেন অ্যাডহক কমিটির সভাপতিকে ‘ম্যানেজ’ করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের মেয়াদ ছয় মাসের পরিবর্তে ‘পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত’ লিখে নতুন একটি নিয়োগপত্র তৈরি করেন। আনুষঙ্গিক কাগজপত্রসহ নতুন তৈরি এই নিয়োগপত্র গোপনে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। বিষয়টি জানাজানি হলে উপাচার্য বরাবর একই তারিখে ও স্মারকে দুটি নিয়োগপত্রের বৈধতা বিষয়ে অভিযোগ দায়ের করেন শিক্ষক প্রতিনিধি। এ বিষয়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় পত্রটিকে ‘বিধি মোতাবেক না হওয়ায়’ তা বাতিল ঘোষণা করে পত্র জারি করে।
এই প্রতিবেদকের হাতে আসা শিক্ষা সনদ ও অন্যান্য দলিল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মোবাশ্বের হোসেন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ১৯৮১ সালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পুবার পান্ডুক দিননাথপুর হাইস্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ১৯৮৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের বোলপুর কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রসায়ন বিষয়ে বিএসসি এবং ১৯৮৯ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড পাস করেন। ১৯৯০ সালে তিনি ঢাকায় এসে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে ঢাকার বংশাল এলাকায় মিল্লাত উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদান করেন।
এরপর ১৯৯১ সালে তিনি তৎকালীন জগন্নাথ সরকারি কলেজে নৈশকালীন কোর্সে (জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হয়ে রসায়ন বিষয়ে এমএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। এমএসসি নৈশকালীন কোর্সে ভর্তির সময় তিনি ভারতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিএসসির সনদ জমা দেননি। তাঁর বিএসসি ও বিএড ডিগ্রির সাময়িক সনদ ১৯৯৫ সালে ইস্যু করা হয়। কিন্তু ১৯৯৪ সালে তিনি মিল্লাত উচ্চ বিদ্যালয় থেকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে সরকারি এমপিওভুক্ত হয়ে সুবিধাপ্রাপ্ত হন। এমপিওভুক্তির আবেদনপত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘরে শুধু পরীক্ষার নাম, পাসের সাল আর ফলাফল থাকায় কৌশলে ভারতীয় সনদের বিষয়টি গোপন করা হয়। এরপর আইডিয়াল কলেজে প্রভাষক পদে যোগ দেওয়ার সময়ও তাঁর দেওয়া বায়োডাটাতে শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘরে শুধু পরীক্ষার নাম আর ফল উল্লেখ করেন, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করেননি।
অনুসন্ধানে জানা যায়, মোবাশ্বের হোসেন ২০০৬ সালে প্রথমবার বাংলাদেশের পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। ২০০৬ সালেই ঢাকার আগারগাঁও থেকে ইস্যু করা পাসপোর্টে পূর্ববর্তী কোনো পাসপোর্টের তথ্য বা রেকর্ড ছিল না। পরে তিনি বেশ কয়েকবার পাসপোর্ট নবায়ন করেছেন, এমআরপি ও ই-পাসপোর্টও গ্রহণ করেছেন।
তাঁর পাসপোর্টে উল্লেখিত স্থায়ী ঠিকানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোবাশ্বের হোসেনের পরিবার টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার সদর ইউনিয়নের দেলদুয়ার গ্রামে ১৯৯০ সালের পর থেকে বসবাস করে আসছেন। তাঁর বাবা সেখানে ‘ভারতীয় মওলানা’ নামে পরিচিত। ২০০১ সালে ওই ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান মো. আবু সাঈদ মিয়া স্বাক্ষরিত একটি প্রত্যয়নপত্র অনুসারে তিনি ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা এবং জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। সেই চেয়ারম্যান জীবিত না থাকায় সনদটি যাচাই করা যায়নি।
আইডিয়াল কলেজে মোবাশ্বের হোসেনের নিয়োগের সময় অধ্যক্ষের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. শামসুল আলমকে তাঁর নিয়োগের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, যাচাই-বাছাই করেই নিয়োগ বোর্ড তাঁকে নিয়োগ দিয়েছিল।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মোবাশ্বের হোসেনের সঙ্গে গত ঈদের আগে যোগাযোগ করলে তিনি ঈদের পর কথা বলতে চান। ঈদের পর তাঁর বক্তব্য নিতে যোগাযোগ করলে গত ২ জুলাইয়ের পর কথা বলতে পারবেন বলে জানান। পরে একাধিক দিন দেখা করলেও সময় চেয়ে কালক্ষেপণ করেন। একসময় তিনি এসব বিষয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন না বলে জানান।
কলেজের বর্তমান অ্যাডহক কমিটির সভাপতি নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, সঠিক প্রক্রিয়ায় তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আমাদের বিচার্য বিষয় ছিল কে ভালো শিক্ষক ও প্রশাসন চালাতে পারবেন। সেই হিসাবেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতকাল তিনি চাকরি করেছেন, তখন কেউ কোনো অভিযোগ করল না কেন? কমিটির সভায় তাঁর নিয়োগের বিষয়ে মাত্র একজন নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছেন। আমার কাছে মনে হয়েছে মোবাশ্বের হোসেন বাংলাদেশের নাগরিক। সূত্র : সমকাল
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।