Active Galactic Nuclei কী? কৃষ্ণগহ্বর গবেষণায় এটি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ব্ল্যাকহোল

জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞানে আগ্রহী অথচ ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বরের কথা শোনেনি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। মহাকর্ষের শক্তি সেখানে আলোর বেগের চেয়েও বেশি। ফলে সেখান থেকে পালাতে পারে না কোনো কিছুই। যে খাঁচার ভেতরে অচিন পাখি একবার ঢুকলে আর বেরোতে পারে না—সহজ কথায় তা-ই কৃষ্ণগহ্বর।

ব্ল্যাকহোল

কোয়াসার শব্দটা একটু কম শোনা গেলেও এটা মোটামুটি পরিচিত শব্দ। মহাকাশে মানুষের দেখা সবচেয়ে দূরবর্তী উজ্জ্বল জিনিস এই কোয়াসার। কিন্তু জিনিসটা আসলে কী? বিশাল কোনো নক্ষত্র? সুপারনোভার মতো কিছু? কোয়াসারের ব্যাপারটা বুঝতে হলে সেই কৃষ্ণগহ্বরের কাছেই আবার ফিরে যেতে হবে। যে প্রশ্নটা থেকে শুরু করা যায়, তা হলো কৃষ্ণগহ্বর কোথায় থাকে?

কৃষ্ণগহ্বর থাকে মূলত গ্যালাক্সির কেন্দ্রে। এমনকি আমাদের মিল্কিওয়ের কেন্দ্রেও বিপুল ভরের এক কৃষ্ণগহ্বর আছে। এদের ভর মোটামুটি মিলিয়ন থেকে বিলিয়নখানেক সৌরভরের সমান হয়। আগেই বলেছি, এর ভেতরের প্রবল মহাকর্ষীয় টান আলোকেও আটকে ফেলে, গিলে নেয় অনায়াসে।

আমাদের সৌভাগ্য, এই রাক্ষুসে খিদের দৌরাত্ম্য আসলে তার চারপাশের ঘটনা দিগন্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। তবে ঘটনা দিগন্তের বাইরেও এর কিছুটা প্রভাব তো পড়েই (আসলে অনেক বেশিই পড়ে। ভুলে গেলে চলবে না, সূর্য যেমন তার ভর দিয়ে সৌরজগতকে ধরে রেখেছে, তেমনি একটা গ্যালাক্সির সবকিছুকে ধরে রাখে কৃষ্ণগহ্বর)।

এই প্রভাবের ফলেই কিছু কৃষ্ণগহ্বরের ঘটনা দিগন্তের একটু বাইরে চারপাশজুড়ে জমা হয় গ্যাসের দলা, ধুলাবালু এবং মহাকাশে ভেসে বেড়ানো পাথরখণ্ড। মথ যেমন আলোর বুকে আত্মাহুতি দেয়, তেমনি এরাও কৃষ্ণগহ্বরের বুকে আত্মবলি দেওয়ার অপেক্ষায় থাকে।

যখন এই গ্যাসের দলা বা চারপাশে জমা পদার্থের কিছু কৃষ্ণগহ্বরের ঘটনা দিগন্তের ভেতর পড়ে যায়, শক্তির রূপান্তর ঘটে। বস্তুটির মহাকর্ষীয় শক্তি বদলে যায় আলোতে। ফলে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে প্রচণ্ড উজ্জ্বলতা তৈরি হয়। এ ধরনের গ্যালাক্সির কেন্দ্রগুলোকে বলা হয় সক্রিয় গ্যালাক্সি কেন্দ্র (Active Galactic Nuclei)। এদের মধ্যে কেউ কেউ আবার বিপুল পরিমাণ পদার্থের কণা উগরে দেয়। এই কণারা মহাবিশ্বের মধ্য দিয়ে ছুট দেয় আলোর বেগে। এ ধরনের গ্যালাক্সি কেন্দ্রগুলোকেই বিজ্ঞানীরা বলেন কোয়াসার।

আসলে কোনো সক্রিয় গ্যালাক্সি কেন্দ্র যখন সোজা পৃথিবীর দিকে ফিরে থাকে এবং পদার্থের কণা উগরে দেয়, তাকে বলা হয় ব্ল্যাজার। কোয়াসার আর ব্ল্যাজারের মধ্যে এমনিতে আর কোনো পার্থক্য নেই। আমাদের পাঠ্যবইতে যদি কোয়াসার আর ব্ল্যাজারের কথা থাকত, তাহলে নিশ্চিতভাবেই একটা আপ্তবাক্য লেখা থাকত, সব ব্ল্যাজারই কোয়াসার, কিন্তু সব কোয়াসার ব্ল্যাজার নয়।