বিনোদন ডেস্ক : দেশের শোবিজ অঙ্গন নতুন এক বিতর্কের মুখোমুখি। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী অরিন্দম রায় দীপকে গ্রেপ্তারের সূত্র ধরে মাদক সংযোগের অভিযোগে আলোচনার কেন্দ্রে চলে এসেছেন তিন জনপ্রিয় অভিনেত্রী—তানজিন তিশা, মুমতাহিনা টয়া ও সাফা কবির। এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে ভারতীয় কণ্ঠশিল্পী সুনিধি নায়েকের নামও, যিনি বাংলাদেশের খ্যাতিমান সংগীতশিল্পী সায়ান চৌধুরী অর্ণবের সাবেক স্ত্রী। তবে সম্প্রতি অর্ণবের সঙ্গে তার বিচ্ছেদ হয়েছে এমন কথা বিভিন্ন মিডিয়ায় শোনা যায়।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সকাল থেকে এই পরিচিত শিল্পীদের নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
একটি দৈনিকে প্রকাশিত খবরের সূত্র ধরে জানা গেছে, এই শিল্পীরা নাকি নিয়মিত মাদকের অর্ডার করতেন একটি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে। যা জানা গেছে গ্রেপ্তার হওয়া অরিন্দম রায় দীপের ফোন থেকে। অভিযোগ, এই তারকারা সিসা, এমডিএমএ, এলএসডি, কুসসহ বেশ কিছু মাদক গ্রহণ করেন নিয়মিত। মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ঘিরে বিশেষ অনুসন্ধান চালাচ্ছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (নারকোটিক্স)। ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ে এ বিষয়ে প্রতিবেদনও পাঠানো হয়েছে।
ঘটনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নারকোটিক্সের সহকারী পরিচালক রাহুল সেন একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দীপকে গ্রেফতারের পর তার কাছ থেকে আমরা কয়েকজন প্রথম সারির অভিনেত্রী ও মডেলের মাদক সম্পৃক্ততার প্রমাণ পেয়েছি। এ বিষয়ে এখনও তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এমন মন্তব্য আর প্রতিবেদনের তথ্য ধরে দিনভর চলছে শিল্পীদের নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা। বিষয়টি নিয়ে শিল্পীদের আত্মপক্ষ সমর্থন কিংবা প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাচ্ছিল না। বিপরীতে তাদের কোনও প্রতিক্রিয়া বা মন্তব্য ছাড়াই দেশের বেশির ভাগ গণমাধ্যম, সোশ্যাল মিডিয়া ও ইউটিউবে প্রকাশ হচ্ছে খবরটি।
এদিন সন্ধ্যায় এই বিষয়ে মুখ খোলেন অন্যতম অভিযুক্ত অভিনেত্রী মুমতাহিনা টয়া। তিনি একটি সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘খবরটি আমিও জানতে পেরেছি আজ (১৯ নভেম্বর) সকালে পত্রিকার মাধ্যমে। এ বিষয়ে এখনও কোনও তথ্য-প্রমাণ কিংবা কোনও তদন্ত কর্মকর্তার সঙ্গে আমার কথা হয়নি। অফিসিয়ালি এ বিষয়ে কেউ আমাকে কিছু জানায়নি। অথচ সবাই আমার ছবি ও নাম দিয়ে এমন একটি খবর প্রকাশ করে চলেছেন। কেউ আমাকে এ বিষয়ে একটাবার জিজ্ঞেসও করেননি।’
টয়া অনুরোধের সুরে বলেন, ‘নিশ্চিত না হয়ে, মিডিয়া ট্রায়াল করবেন না প্লিজ। একটা বিচারাধীন বিষয়ে আমি যে আগ বাড়িয়ে কথা বলবো, সেই সুযোগও নেই। কারণ আমি জানিই না আসলে ঘটনাটা কী ঘটেছে।’
এই বলে তিনি এ বিষয়ে আর কোনও মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
আরেকটি সংবাদমাধ্যমকে টয়া বলেন, অরিন্দম রায় দীপ নামের কাউকে তিনি চেনেন না। কোনো দিন তার সঙ্গে পরিচয়ও হয়নি।
একপর্যায়ে পালটা প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, আপনারা আমার বিরুদ্ধে এতবড় গুরুতর অভিযোগ কোথায় পেলেন। আমি অবশ্যই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাছে বিষয়টি জানতে চাইব।
এছাড়া বক্তব্য জানার জন্য সাফা কবির ও তানজিন তিশার মোবাইলে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা ফোন ধরেননি।
খবরে প্রকাশ, অরিন্দম রায় দীপ নামের ওই ব্যক্তিকে মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগে গত ১৭ অক্টোবর ঢাকা বিমানবন্দরে গ্রেপ্তার করা হয়। মাদকসহ গ্রেপ্তার হওয়া দীপকে জিজ্ঞাসাবাদের সূত্র ধরে বেরিয়ে আসে সাফা, টয়া, তিশা ও সুনিধির নাম। রয়েছে তথ্য-প্রমাণাদি।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, একটি বিশেষ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে তারা নিয়মিত মাদক সংগ্রহ করছিলেন। ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের অ্যাডমিন অরিন্দম রায় দীপ।
নারকোটিক্স বলছে, মাদক সম্পৃক্ততার অভিযোগে আগে থেকেই দীপের ওপর বিশেষ নজরদারি করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে তার গতিবিধি অনুসরণের ধারাবাহিকতায় ১৭ অক্টোবর ঢাকা বিমানবন্দরে গ্রেফতার হন দীপ। এ সময় তার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ সিসা, এমডিএমএ, এলএসডি ও কুসসহ বেশ কিছু মাদক উদ্ধার করা হয়। পরে নারকোটিক্সের একটি বিশেষায়িত টিম দীপকে ২ দিনের রিমান্ডে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, মাদক ব্যবসার বিষয়ে মৌখিক স্বীকারোক্তির একপর্যায়ে দীপের মোবাইল ফোনের কললিস্ট ও হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিং পরীক্ষা করা হয়। এতে জনপ্রিয় কয়েকজন অভিনেত্রীর মাদক সম্পৃক্ততার তথ্য মেলে। এমনকি তাদের পক্ষ থেকে দেওয়া মাদকের অর্ডার সংক্রান্ত কয়েকটি সুনির্দিষ্ট হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটিং রেকর্ডও পাওয়া যায়।
উক্ত গণমাধ্যমের হাতে আসা কয়েকটি চ্যাটিং রেকর্ডে দেখা যায়, ২৩ এপ্রিল সাফা কবির তার মোবাইল নম্বর থেকে ৩টি এমডিএমএ অর্ডার দেন। এ জন্য দীপের হোয়াটসঅ্যাপে তিনি সংক্ষেপে লেখেন ‘ই’ দিতে পারবা আমাকে ৩টা।’ পালটা বার্তায় দীপ লেখেন দাঁড়াও বলি। সাফা লেখেন ‘ওকে’।
এরপর দীপ লেখেন কীভাবে নিবা? যাওয়ার পথে? সাফা লেখেন ‘আমি চেষ্টা করব।’ এছাড়া ৫ সেপ্টেম্বর আরেক চ্যাটিংয়ে মাদকের অর্ডার দেন অভিনেত্রী টয়া। তিনিও সাংকেতিক ভাষায় লেখেন ‘ই’ লাগবে ৫টা। ফিরতি বার্তায় দীপ লেখেন ‘ফর বাংলা ফ্রুট?’ (সম্প্রতি কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত প্রাইভেট পার্টি)। এরপর টয়া লেখেন ‘ইয়াপ (ইয়েস)।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।