বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : বৈদ্যুতিক গাড়ি জ্বালানি সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। প্রযুক্তি উন্নয়নের এ যুগে গ্যাস বা ডিজেলের পরিবর্তে ব্যাটারিতে চলে এমন যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া মোটেও আশ্চর্যজনক নয়। তবে জিএম থেকে ফোর্ড এবং এর বাইরেও বেশ কয়েকটি বড় গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি নতুন নতুন মডেলের বৈদ্যুতিক গাড়ি বাজারে এনেছে। বাজারে চাহিদাও বেড়ে চলেছে এই উন্নত প্রযুক্তিটির। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী এক দশকের মধ্যেই হয়তো যুক্তরাজ্যে ডিজেল ও পেট্রলচালিত গাড়ি নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। পরিবেশ সুরক্ষায় উন্নত দেশসহ বাংলাদেশেও ইতিমধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহৃত হয় এমন যানবাহনের সংখ্যা কমানোর চিন্তা শুরু করেছে সরকার। তাই রয়েছে বৈদ্যুতিক গাড়ির সুবিধা-অসুবিধাসহ নানান প্রশ্ন।
সুবিধা
পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি : বৈদ্যুতিক গাড়িতে কোনো প্রকার জ্বালানি শক্তির ব্যবহার না হওয়ায় গাড়ি থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ হয় না। তাতে করে পরিবেশের ওপর কোনো প্রভাব পড়ে না। ফলে পরিবেশ রক্ষায় এই গাড়িগুলো বেশ ভূমিকা রাখে। তাই পরিবেশ দূষণ রক্ষায় এই গাড়িগুলো তুলনাহীন।
যাতায়াত খরচ কম : বর্তমানে বৈদ্যুতিক গাড়িগুলোতে যে ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়, তা আকারে ছোট কিন্তু বেশি বিদ্যুৎ ধারণ করতে পারে। আর তাই বৈদ্যুতিক গাড়িগুলো একবার চার্জে ২০০ থেকে ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত পথ পাড়ি দিতে পারে। সাধারণত বৈদ্যুতিক গাড়িতে প্রতি কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে খরচ হয় ৪ থেকে ৮ টাকা, যা অন্যান্য জ্বালানি খরচের প্রায় অর্ধেক। শুধু তা-ই নয়, এই গাড়িগুলো একবার চার্জ দিয়ে স্বল্প দূরত্বে প্রায় এক সপ্তাহের মতো ব্যবহার করা সম্ভব।
শব্দদূষণ হয় না : ইঞ্জিনের বদলে মোটরের শক্তিতে গাড়ি চলায় শব্দ অনেকটা কম হয়। বেশির ভাগ বৈদ্যুতিক গাড়িই নিঃশব্দে পথ চলতে পারে। তবে রাস্তায় গাড়ির উপস্থিতি বোঝানোর জন্য কৃত্রিম শব্দ ব্যবহারের সুবিধাও রয়েছে অনেক বৈদ্যুতিক গাড়িতে।
অসুবিধা
গাড়ির দাম বেশি : কনজিউমার রিপোর্টের বিশ্লেষণ অনুসারে, গ্যাসচালিত গাড়ির তুলনায় বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম ১০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত বেশি হয়ে থাকে। বিআরটিএর নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো পুরনো বৈদ্যুতিক গাড়ি দেশে আমদানি করা যাবে না। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দামও তুলনামূলকভাবে বেশি হয়ে থাকে।
দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বেশি : বৈদ্যুতিক গাড়িতে চার্জ শেষ হয়ে গেলে চার্জারের মাধ্যমে ব্যাটারি চার্জ করা হয়। তাই ভালো মানের সার্কিট ব্রেকার বা নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকলে যে কোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।
চার্জ করার সময় ও খরচ : বৈদ্যুতিক গাড়ির জ্বালানি গ্যাসের দামের তুলনায় প্রায় অর্ধেক হয়ে থাকে। তবে রয়েছে কিছু এককালীন খরচ। ব্যাটারি চার্জ হতে সময় লাগে প্রায় ৮ থেকে ১৪ ঘণ্টা। অন্যান্য বড় গাড়ির ক্ষেত্রে সময় লাগে প্রায় ২৪ ঘণ্টার বেশি। তা ছাড়া গাড়ির বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চার্জিংয়ের সময়ও বাড়তে থাকবে। বাসায় গাড়ি চার্জ দেওয়ার জন্য ফাস্ট-চার্জিং পয়েন্ট স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে। এটি বসাতে এককালীন মোট খরচ হবে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ব্যাটারি চার্জের খরচ ইলেকট্রিসিটি বিলের সঙ্গেই যুক্ত হবে। সে হিসাবে বছরে বাড়তি ইলেকট্রিসিটি বিল দিতে হবে ৬০ হাজার পাউন্ড থেকে ৭৫ হাজার টাকা।
ব্যাটারি নষ্ট : বৈদ্যুতিক গাড়ির প্রাথমিক শক্তি বলা হয় ব্যাটারিকে। সাধারণভাবে গাড়ির পুরো ব্যাটারি একবারে নষ্ট হয় না, ধীরে ধীরে নষ্ট হয়। তবে অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় ২ লাখ কিমি পর্যন্ত ব্যাটারির ওয়ারেন্টি দিয়ে থাকে। বাংলাদেশে ব্যাটারির সেল সহজলভ্য নয়। তাই প্রতিস্থাপন করার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। এ ছাড়া প্রতিটি ব্যাটারির থাকে একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ। তার পরেই ব্যাটারি বদলাতে হয়। ব্যাটারির মূল্যও বেশি, যা একটি গাড়ির খরচ বাড়িয়ে দিতে পারে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।