আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আকাশচুম্বী ভবনের শীর্ষে উঠে কোনো অবলম্বন ছাড়াই ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন কসরত দেখাতেন ৩০ বছর বয়সী রেমি লুসিডি। হাতে ক্যামেরা, সুরক্ষার জন্য নেই ব্যবস্থা– এ অবস্থায় তাঁর উঁচু উঁচু ভবনে ওঠার ভিডিও, ছবি দেখে দর্শকরাই ভয়ে শিউরে ওঠেন।
ক্রেন, সেতু, তোরণ এমনকি ট্রান্সমিটারে একইভাবে উঠে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন তিনি। এ জন্য ভক্তরা তাঁকে ‘ডেয়ারডেভিল’ (ডানপিটে) ডাকেন। এমনই এক দুঃসাহসিক কাজে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন এই ফরাসি যুবক।
সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানিয়েছে, স্টান্ট দেখাতে সম্প্রতি হংকংয়ের ‘ট্রেগুন্টার টাওয়ার’ কমপ্লেক্সে উঠছিলেন লুসিডি। কিন্তু ভারসাম্য রাখতে না পেরে ৬৮ তলা থেকে নিচে পড়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। পুলিশ জানায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘রেমি এনিগমা’ নাম ব্যবহার করতেন লুসিডি। গত ২৭ জুলাই সন্ধ্যায় ট্রেগুন্টার টাওয়ারে ৬৮ তলায় একটি পেন্ট হাউসের জানালায় তাঁকে শেষবারের মতো জীবিত দেখা গিয়েছিল।
জানা গেছে, হংকংয়ের ওই আবাসনের নিরাপত্তারক্ষীদের মিথ্যা বলে ভেতরে প্রবেশ করেছিলেন লুসিডি। এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে আবাসনের ৪০ তলায় যাচ্ছেন বলে জানান তিনি। কিন্তু যখন নিরাপত্তারক্ষীরা রেমির আসল মতলব বুঝতে পারেন, ততক্ষণে তিনি ৪৯ তলায় পৌঁছে গেছেন।
সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, লুসিডি ৪৯ তলায় পৌঁছে গেছেন এবং পরে সিঁড়ি দিয়ে ভবনের একেবারে ওপরে উঠছেন। কিন্তু অন্যরা ছাদে ওঠার পরও তাঁকে কেউ দেখতে পাননি বলে জানা গেছে। তবে রাত সাড়ে ৭টা নাগাদও তিনি জীবিত ছিলেন বলে জানা গেছে।
কারণ তখনই পেন্ট হাউসের বাইরের জানালায় তিনি ধাক্কা দিচ্ছিলেন। তার পরই এক নারী পুলিশে খবর দেন। কিন্তু পুলিশ আসার আগেই তিনি ভারসাম্য হারিয়ে নিচে পড়ে যান বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরে ঘটনাস্থলে তাঁর ক্যামেরা খুঁজে পায়
পুলিশ। এতে তাঁর এসব দুঃসাহসী কাজের ভিডিও রয়েছে।
২০১৬ সালে প্রথম আকাশচুম্বী ভবনে ওঠেন লুসিডি, তখন তাঁর বয়স ছিল ২৩ বছর। এর পর উঁচু উঁচু ভবনে ওঠার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন। তাঁর ইনস্টাগ্রাম পোস্টে বিভিন্ন দেশে উঁচু উঁচু ভবনে আরোহণ করার ছবি রয়েছে। গত বছর দুবাই, বুলগেরিয়া ও ফ্রান্সের উঁচু উঁচু ভবনের শীর্ষে আরোহণ এবং দাঁড়িয়ে থাকার ছবি ও ভিডিও রয়েছে। একটি ভিডিওতে তাঁকে ফ্রান্সের সবচেয়ে লম্বা চিমনিতে আরোহণ করতে এবং ৩০০ মিটার উঁচু কাঠামোতে কোনো জুতা ছাড়াই হাঁটতে দেখা গেছে।
দুই সপ্তাহ আগে বুলগেরিয়ার একটি উঁচু ভবনে উঠে ঝুলে থাকার ছবি পোস্ট করেন লুসিডি। ক্যাপশনে আমেরিকান লেখক গ্যারি কেলারের একটি বইয়ের বাক্য লেখা ছিল– যার অর্থ, ‘স্বপ্নালোকে ছোঁটার জন্য জীবন খুবই ছোট’। জীবন যে আসলেই ছোট এবং তা এমন অদ্ভুত স্বপ্নালোকের পেছনে ছুটে কাটিয়ে দেওয়ার জন্য না, তা হয়তো লুসিডি টের পেয়েছিলেন। কিন্তু তার পরও তা থামাননি।
প্রায়ই এমন ঘটনার খবর পাওয়া যায়। তবে প্রতি বছর এভাবে কতজনের মৃত্যু হয়, তার সঠিক পরিসংখ্যান মেলেনি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই এমন দুঃসাহসিক কাজের ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হয়। রাশিয়ায় এ ধরনের ভিডি করতে গিয়ে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ দুঃসাহসিক ইন্টারনেট ভিডিও দিয়ে টাকা কামাতে গিয়ে চীনা তরুণ উ ইয়ংনিং ৬২ তলা ভবন থেকে পড়ে মারা যাওয়ার পর এ নিয়ে নানা আলোচনা হয়। ২০১৭ সালে চীনের চাংশা শহরে একটি ৬২ তলা ভবনে নিরাপত্তা যন্ত্রপাতি ছাড়াই ওঠেন তিনি। এর পর সেখান থেকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়।
অনুমতি ছাড়া আকাশচুম্বী ভবনে ওঠা বেশির ভাগ জায়গাই অবৈধ। কারণ এটি অনুপ্রবেশ হিসেবে বিবেচিত এবং বিপজ্জনক। উপরন্তু অনেক আকাশচুম্বী ভবনে অননুমোদিত প্রবেশ ঠেকাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। যে কোনো ভবনে আরোহণের আগে সবসময় অনুমতি নেওয়া এবং ঝুঁকি এড়াতে নিরাপত্তা নির্দেশনা অনুসরণ করা জরুরি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।