আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বিশ্ব মানচিত্রে আফগানিস্তান এমন একটি দেশ, যে দেশটির নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে ক্ষুধা, দারিদ্র ও যুদ্ধাহত এক জাতির ছবি। অর্থনৈতিক সংকটে আক্রান্ত একটি দেশ। ২০২১ সালে আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোট।এরপর থেকেই ক্ষমতা দখল করে আফগানিস্তান শাসন করছেন তালিবান সরকার।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা নানা নিষেধাজ্ঞার মধ্যে অর্থনৈতিক অবস্থা ফেরানোর চেষ্টা করছে তারা। এরই মধ্যে নানা প্রকল্প হাতে নিয়েছে তালেবান সরকার।সূত্র : দ্য ইকোনোমিস্ট
সম্প্রতি আফগানিস্তানের যে প্রকল্প বিশ্বব্যাপি আলোচনায় এসেছে, সেটি হচ্ছে কুষ্টেপাথার প্রকল্প।এটি শুধুমাত্র একটি প্রকল্পই নয়, এটি আফগানিস্তানের পুনরোজ্জীবন ও আত্মনর্ভরতার হাতিয়ার।নদীর পানি মরুভূমির ভেতর দিয়ে নিয়ে যেতে সেচের ব্যবস্থা করতে দীর্ঘ এই খাল খনন করা হয়েছে।বিদেশিদের কোনোপ্রকার সাহায্য বা ঋণ ছাড়াই সম্পূর্ণ দেশীয় খরচে এই বিশাল প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে আফগানিস্তান।খালটি প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ। মরুভূমির মধ্য দিয়ে খাল খনন করে কৃষিখাতের অভাবনীয় পরিবর্তন আনাই এই প্রকল্পের লক্ষ্য।প্রকল্পটির বাজেট ধরা হয়েছে ৩৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।এটি এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যাতে উত্তর আফগানিস্তানের শুষ্কসমগ্র জুড়ে আমুদড়িয়া নদীর ২০ শতাংশ পানি নিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে স্বল্পসময়ে প্রকল্পটির প্রথম ধাপের কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
সম্প্রতি ইউটিউবে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বালির ওপর গর্জন করছে একঝাঁক খননযন্ত্র। সেখানে কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর শ্রমিকরা। তালেবান সরকার বলছে, এই বিশাল প্রকল্পে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ ও তিন হাজারের বেশি যন্ত্রপাতি ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে। কাজ শেষ হলে কোশ টেপা খাল দিয়ে বয়ে যাবে আমু দরিয়া নদীর পানি। একসময় অক্সাস নামে পরিচিত নদীটি আফগানিস্তান-তাজিকিস্তান সীমান্তে সৃষ্টি হয়ে উজবেকিস্তানের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এটি মধ্য এশিয়ার অন্যতম দীর্ঘতম নদী। তালেবানের আশা, তাদের প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে আফগানিস্তানের সাড়ে পাঁচ লাখ হেক্টর মরুভূমি সবুজ কৃষিজমিতে পরিণত হবে।
তালেবান সরকারের এমন সাফল্য পুরো পুজিবাদী বিশ্বকে চমকে দিয়েছে।খালটি জোজনন প্রদেশের বিভিন্ন গ্রামের জন্য গেমচেঞ্জার হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।দেশের অন্যান্য জায়গার মতো এখানকার বাসিন্দারাও ক্রমবর্ধমান খাদ্য ঘাটতি, চার দশকের যুদ্ধ, টানা তিন মৌসুমের তীব্র ক্ষরায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আফগানিস্তানজুড়ে গড় তাপমাত্রা গত ৭০ বছর ধরে ১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে।খালখনন শেষ হলে এর মাধ্যমে মরুভূমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হবে এবং চাষের আওতায় আসবে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ হেক্টর জমি।এর মাধ্যমে আফগানিস্তানের আবাদযোগ্য জমির পরিমান এক তৃতীয়াংশ বেড়ে যাবে।প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে সংকটের চরম সীমায় থাকা আফগানিস্তান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।