স্পোর্টস ডেস্ক : গোটা দেশে ছিল না কোনো ঘাসের মাঠ। একটিও ছিল না টার্ফ উইকেট। অন্তত রশিদ খানের দাবি এরকমই। সেই আফগানিস্তানই এখন সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বিশ্বের সমীহ জাগানিয়া শক্তি। সেই দেশের বেশ কজন ক্রিকেটার দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন বিশ্বজুড়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে। পেছন ফিরে তাকিয়ে সেই উত্থানের প্রেক্ষাপটের কথা শোনালেন রশিদ খান। তবে গল্পের শেষ এখানেই মনে করেন না তিনি। ভবিষ্যতে তাদের ক্রিকেট অন্য পর্যায়ে পৌঁছে যাবে বলেও বিশ্বাস আফগান ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় তারকার।
হাজারও প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের এগিয়ে চলার গল্প অবশ্য বিশ্ব ক্রিকেটে নতুন কিছু নয়। নানা সময়েই এসব নিয়ে চর্চা হয়েছে অনেক, হচ্ছে এখনও। রশিদ খানের পূর্বসূরিরাও নানা সময়ে নিজেদের দেশের চিত্র তুলে ধরেছেন। রশিদ নিজে, তার সমসাময়িক ও উত্তরসূরিদেরও এসব নিয়ে কথা বলতে হয় প্রায়ই। তবে এত দ্রুত আফগানদের এমন উত্থান এতটাই অবিশ্বাস্য যে, কখনোই যেন এসব পুরনো হওয়ার নয়।
সীমিত ওভারের ক্রিকেটে আফগানিস্তানের দাপটের স্বাক্ষী বাংলাদেশও। এবার এখানে এসে ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিয়েছে আফগানরা। টি-টোয়েন্টিতে তো মুখোমুখি লড়াইয়ে বাংলাদেশের চেয়ে আফগানিস্তানের জয় দ্বিগুণ।
দুই দলের আরেকটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু শুক্রবার সিলেটে। এই লড়াইয়ে কোনো এক দলকে ফেভারিট বলা কঠিন। তবে নানা বাস্তবতায় খানিকটা এগিয়ে রাখা যায় হয়তো আফগানদেরই।
আফগানদের টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের সংবাদ সম্মেলনে উঠল এই প্রসঙ্গই। আফগানরা এখনও নিজ দেশে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে পারে না। নিকট ভবিষ্যতেও সেই সম্ভাবনা নেই। সুযোগ-সুবিধা সেখানে এখনও অপ্রতুল। তার পরও কীভাবে তারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আপন জায়গা করে নিতে পেরেছে! রশিদ খানের উত্তর, প্রতিভার জোরে।
“আফগানিস্তানের ব্যাপারটি হলো আমাদের সহজাত প্রতিভা এবং এটিই আমাদেরকে আরও বেশি স্পেশাল করে তুলছে। বাচ্চা বয়সে ক্রিকেট শুরুর সময় মৌলিক ব্যাপারগুলিই শিখতে ইচ্ছে করে, এরপর আস্তে আস্তে উন্নতি করতে করতে ভালো ক্রিকেটার হয়ে উঠতে হয়। কিন্তু কম বয়সেই যদি বোঝা যায় যে সহজাত প্রতিভা ও স্কিল আছে এবং সেসব নিয়ে আরও কাজ করা যায়, তাহলে সেরা হয়ে ওঠা যায়।”
“দেশে আমাদের খুব বেশি সুযোগ-সুবিধা নেই। অনেক তরুণ ক্রিকেটার বের করে আনার মতো ঘরোয়া ক্রিকেটও আমাদের নেই। তবে ভালো ব্যাপার হলো, আমাদের অনেক সহজাত প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছে। এই কারণেই আফগানিস্তান এই পর্যায়ে উঠে এসেছে।”
২০০৮ সালে ওয়ার্ল্ড ক্রিকেট লিগ ডিভিশন ফাইভ জয়ী দল অবিশ্বাস্য দ্রুততায় একের পর এক সিঁড়ি বেয়ে এগিয়ে যায় ওপরের দিকে। ২০০৯ সালে প্রথমবার আন্তর্জাতিক ওয়ানডে ক্রিকেটে পা রাখে তারা, ২০১০ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়ে অভিষেক হয়ে যায় বিশ্ব আসরে। ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলতে না পারলেও ওয়ানডে মর্যাদা পেয়ে যায় তখনই। এরপর তো ২০১৭ সালে পায় টেস্ট মর্যাদা।
এই লড়াইয়ের শুরু যাদের হাত ধরে, তাদের সেই সময়ের ভোগান্তি আর প্রতিজ্ঞার কথা আরও একবার তুলে ধরলেন রশিদ।
সুযোগ-সুবিধা না পেয়েও আফগানিস্তানের ‘স্পেশাল’ হয়ে ওঠার গল্প শোনালেন রশিদ
“১০-১৫ বছর আগে, আমাদের সিনিয়ররা যখন ক্রিকেট শুরু করেছেন, সেই সময় আমাদের সুযোগ-সুবিধা ছিল শূন্য, ছিল না কোনো মাঠ। গোটা আফগানিস্তানে কোনো ঘাসের মাঠ ছিল না। সারা দেশে কোনো টার্ফ উইকেট ছিল না। তারা সিমেন্টের উইকেটে খেলতেন। তারা ওই সময় অনেক লড়াই করেছেন। কিন্তু তাদের ভাবনায় ছিল আফগানিস্তানের ক্রিকেটকে পরের ধাপে নিয়ে যাওয়া।”
“তাদের সেই স্কিল ও প্রতিভা ছিল। টেনিস বলের ক্রিকেট থেকে ক্রিকেটারদের এনে সরাসরি তারা এই পর্যায়ে খেলিয়েছেন। তবে তাদের মানসিকতা এরকম ছিল যে, দলের জন্য সেরাটা দিতে তারা সক্ষম। তাদের সেই ধৈর্য ছিল। আমার মতে, সেটিই আফগানিস্তানকে আরও স্পেশাল করে তুলেছে এই পর্যায়ে।”
এখন আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট না হলেও মাঠ আছে বেশ কিছু। ঘরোয়া ক্রিকেটের মান খুব উন্নত না হলেও চলছে নিয়মিত। সামনে আরও পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে তারা। রশিদের বিশ্বাস, এই পথ ধরে এগিয়ে নিত্য নতুন উচ্চতায় পৌঁছতে পারে আফগানিস্তান।
“এখন আমরা সেরা সুযোগ-সুবিধা ও কোচসহ সবকিছু পাই, নিজেদের দেখভাল করতে পারি ও সেরা ক্রিকেটার হয়ে উঠতে পারি। আফগানিস্তান প্রিমিয়ার লিগ ফিরে এলে, ভালো ঘরোয়া কাঠামো পেলে… আমি খুবই রোমাঞ্চিত যে, আমাদের ক্রিকেট অন্য পর্যায়ে চলে যাবে।”
“নানা ধরনের ক্রিকেটার উঠে আসছে আমাদের। সহজাত প্রতিভার অভাব নেই সেখানে। শুধু তাদেরকে ঘষেমেজে তৈরি করতে হবে এবং সুযোগ করে দিতে হবে যেন নিজেদের মেলে ধরতে পারে এবং প্রতিভার ছাপ রাখতে পারে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।