বিজ্ঞান ও প্রযক্তি ডেস্ক : স্মার্টফোন বর্তমানে অতিপ্রয়োজনী একটি ডিভাইস। মোবাইল ফোনের ব্যবহারে এটি এনেছে ব্যাপক পরিবর্তন। অল্প সময়ে বিশ্বজুড়ে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ডিভাইসটি। কেননা, এই একটি মাত্র ডিভাইসে অনেক ধরনের ফিচার পাওয়া যায়। একইভাবে স্মার্টওয়াচও একটি জনপ্রিয় ডিভাইস। এটিতেও বেশ কিছু ফিচার পাওয়া যায়।
এবার স্মার্টফোন, স্মার্টওয়াচ ও স্মার্ট টিভির মতো এবার আসছে স্মার্ট গান তথা স্মার্ট বন্দুক। আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রের এই দুনিয়ায় যা যুগান্তকারী আবিষ্কার।
কিন্তু কেন স্মার্ট বন্দুক নাম? কেননা, বন্দুকের মালিক ছাড়া এটি আর কেউ চালাতে পারবেন না। কাজ করবে কেবলমাত্র মালিকের আঙুলের ছাপ (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) ও মুখচ্ছবি দিয়ে। অন্য কেউ বন্দুকটি নিয়ে শত টানাহেঁচড়া করলেও গুলি চালাতে পারবে না।
১৯৯০ সালে স্মার্ট বন্দুক তৈরির ভাবনা প্রথম মাথায় আসে বিজ্ঞানীদের। অনেক বিতর্কের মধ্যে দিয়েও যেতে হয়েছিল সেই ভাবনাকে।
বিজ্ঞানীদের সেই স্বপ্ন সত্যি হল আমেরিকার কলোরাডোর একটি সংস্থার হাত ধরে। ওই সংস্থা ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই স্মার্ট বন্দুক বাজারে আনতে চলেছে বলে গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে।
স্মার্ট বন্দুকের বাজারমূল্য কত হবে, তা নিয়ে ইতোমধ্যেই মানুষের মধ্যে কৌতূহলের অন্ত নেই। জানা গেছে, স্মার্ট বন্দুকের দাম হতে পারে এক হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার, বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।
কলোরাডোর ওই সংস্থাটি ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বহু কোটির তহবিল সংগ্রহ করে সেই বছর থেকেই স্মার্ট বন্দুক তৈরির কাজ শুরু করে এটি।
কলোরাডোর ব্রুমফিল্ডের এই সংস্থা জানিয়েছে, তারা বিশ্বের প্রথম বায়োমেট্রিক স্মার্ট বন্দুক তৈরি করে ফেলেছে। বন্দুকটিতে ‘ফিঙ্গারপ্রিন্ট আনলকিং সিস্টেম’ রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে ফেসিয়াল রিকগনিশন বা মুখচ্ছবি দিয়ে আনলকিং সিস্টেম। এই প্রযুক্তি বন্দুকজনিত অপরাধের সংখ্যা কমাবে বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে।
সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা কাই ক্লোইফফার জানিয়েছেন, ইতোমধ্যেই সারা বিশ্বের হাজার হাজার মানুষ বন্দুকটি হাতে পাওয়ার জন্য অগ্রিম বুকিং শুরু করেছেন। যদিও তার মধ্যে আমেরিকার বাসিন্দাদের সংখ্যাই বেশি।
উল্লেখ্য, বায়োফায়ারের ৯ এমএম স্মার্ট বন্দুকটি শুধুমাত্র তখনই কাজ করবে, যদি এটি তার মালিককে ‘চিনতে’ পারে। অর্থাৎ, মালিকের আঙুলের ছাপ ও চেহারার ছবির সাহায্যেই একমাত্র বন্দুকটির ‘লক’ খোলা যাবে। ঠিক যেমনটা দেখা যায় স্মার্ট ফোনের ‘লক’ খোলার ক্ষেত্রে।
ওই সংস্থার পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, বন্দুকের পিছনে একটি ক্যামেরাও লাগানো থাকবে। সেই ক্যামেরা মালিকের মুখ চিনতে পারলে বন্দুকের লক নিজে থেকে খুলে যাবে।
সংস্থার ওয়েবসাইটে লেখা রয়েছে, “আমাদের ৯ এমএম স্মার্ট বন্দুকটিকে হাত থেকে নামালেই সেটি লক হয়ে যায়। মালিকের অনুমতি ছাড়া সেই বন্দুক থেকে অন্য কেউ গুলি চালাতে পারবে না। গুলি চালাতে পারবেন শুধুমাত্র বন্দুকের মালিক। ওই আগ্নেয়াস্ত্র ভুল করে কখনও কোনও শিশু বা অপরাধীর হাতে পড়লেও ক্ষতির আশঙ্কা নেই।”
সংস্থার ওয়েবসাইটে এ-ও লেখা রয়েছে, “যেকোনও পরিস্থিতিতে পরিচয় যাচাই করার জন্য ‘ইন্টিগ্রেটেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট’ এবং ‘থ্রিডি ফেসিয়াল রিকগনিশন সিস্টেম’ রয়েছে এই বন্দুকে। তাই কোনও ভুল হওয়ার সম্ভাবনা নেই।”
স্মার্ট বন্দুকের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলেও ওই সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
সংস্থাটি এর আগে কৃত্তিম উপগ্রহের যন্ত্রাংশ, স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার যন্ত্র, সুপারসনিক জেট তৈরি করেছে। ওই সংস্থা আরও নতুন নতুন অস্ত্র প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে বলেও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।
বন্দুক সংক্রান্ত অপরাধ এবং আগ্নেয়াস্ত্র চুরি কমানোর জন্যই প্রথম স্মার্ট বন্দুক তৈরির ভাবনা মাথায় আসে বিজ্ঞানীদের।
এর আগেও স্মার্ট বন্দুক বাজারে আনার চিন্তা করা হলেও বিভিন্ন কারণে তা ফলপ্রসূ হয়নি।
স্মার্ট বন্দুক বাজারে চাহিদা তৈরি করে ফেলতে পারলে আমেরিকায় বন্দুকবাজদের দৌরাত্ম্য কিছুটা কমতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি, বন্দুক ব্যবহারের কারণে আমেরিকার বিভিন্ন স্কুল চত্বরে যেভাবে অপরাধের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে, তা-ও খানিকটা কমতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আবার বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, স্মার্ট বন্দুক হ্যাক করার পদ্ধতি জানা থাকলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে। সূত্র: ডেইলি মেইল, সিবিএস নিউজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।