বিনোদন ডেস্ক : একদিন আগেই ছিল পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। আর বিশেষ এই দিনটিকে স্মরণীয় করতে অনেকেই অনেকভাবে উদ্যাপন করেছে। এদিকে বিশেষ এই দিন উপলক্ষে স্ত্রীর উদ্দেশে খোলা চিঠি লিখেছেন অভিনেতা আফজাল হোসেন।
বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক পেজে একটি পোস্ট করেছেন গুণী অভিনেতা আফজাল হোসেন। পোস্টে স্ত্রীর সঙ্গে একটি ছবি দিয়ে ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি।
ক্যাপশনে লেখেন, ‘কিছু কিছু প্রশ্নের স্বভাবই হচ্ছে, হঠাৎ হঠাৎ তিমি মাছের মতো ভুশ করে পানির উপর পিঠ ভাসিয়ে দেয়া। বসন্ত এসে গেছে। রাস্তাভরা ফাগুনের রঙ লাগা মানুষ দেখি। বাতাসে আনন্দের গন্ধ। কলকাতা আজ অন্যরকম। সুখী সুন্দর মানুষেরা ঝলমলাচ্ছে যেন। মনে একটা পুরানো প্রশ্ন জাগে। মনার প্রতি জন্মদিনেও এই প্রশ্নটা তিমি মাছের পিঠ দেখানোর মতো ভুশ করে জেগে ওঠে।’
নিজেকে প্রশ্ন করে অভিনেতা লেখেন, আমি স্বামী হিসাবে কেমন? উত্তরটা ভালো কিংবা মন্দ নয়- ভাবায়। তিনি আরও লেখেন, উন্নত স্বামী হওয়ার উপাদান আমার মধ্যে কম সেটা বুঝি। উপযুক্ত স্বামী হয়ে ওঠার জন্য কেমন কেমন গুণ থাকতে হয় জানলে- গুণে মানে অনন্য একখান স্বামী হয়ে ওঠার উদ্যোগ কি গ্রহণ করতাম? সোজা সাপটা উত্তর হচ্ছে- না।
আফজার হোসেন লেখেন, ‘আমি সৃষ্টিকর্তার সুনজরে থাকা মানুষ, তিনি কপালে লিখে দিয়েছেন, এই বান্দা চিরকাল তাইরে নাইরে জীবন কাটাইতে চায়, তাহা মনজুর করা হইলো। তারপর তিনি জোড়া বানানোর জন্য খাতা খুলে তালিকা দেখেন। খুঁজতে থাকেন বিপরীত পক্ষের অশেষ সহনশীল, ঠান্ডা মাথার, অতি গোছালো, কম কথা বলা, প্রেমময় কিন্তু মনে খুব জোর অলা কাকে পাওয়া যায়!’
অতঃপর নিজের জীবন সঙ্গীকে নিয়ে অভিনেতা লেখেন, ‘বিয়ের জন্য এমন পাত্রী ঠিক তখনই পাওয়া যায়নি। অতঃপর ঐসব উপাদানে সমৃদ্ধ একজনকে সৃষ্টি করার প্রয়োজন অনুভব করিলেন। সৃজন শেষ হইলে দেখিলেন পুরুষটি উত্তরের হইলে নারী রত্নটি দক্ষিণের- শুধু ধরণে নয়, দুইজনের বয়সের মধ্যেও বিস্তর তফাৎ হইয়া গিয়াছে। সৃষ্টিকর্তা ভাবিলেন, হউক। নারী রত্নটিকে অনেক গুণসমৃদ্ধ করিয়া প্রস্তুত করা হইয়াছে, সমস্যা হইবে না। সমস্যা হয়নি।’
https://www.facebook.com/ImAfzalHossain/posts/991962218996876?ref=embed_post
অভিনেতার ভাষ্য, ‘বত্রিশ বছরে আমার অস্থিরতা কমেছে, হঠাৎ মাথা গরম হওয়া কমেছে, ঠান্ডা মাথায় ভাববার অভ্যাস তৈরি হয়েছে। অনেক অনেক কিছু বিনা চেষ্টায় এইরকম ভালোর দিকে বদলে গেছে। অগোছালো স্বভাবটার কোনই উন্নতি হয়নি। হয়নি বলেই অপরপক্ষের ঠান্ডা মাথা প্রায়ই গরম হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। ভাগ্যিস হয়। হয় বলেই বোঝা যায়, সংসারে প্রাণ আছে।’
তিনি আরও লেখেন, কত মানুষকে বলতে শুনি, অবিবাহিত থেকে বিবাহিত হওয়া, শুধু অ এর পার্থক্য নয়- জীবন বদলাতে হয়। ঘরে আমরা প্রায়ই মিনতির সুরে গাওয়া ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও’ গানটা শুনি। শচীন দেব বর্মনের ‘তুমি আর নেই সে তুমি’ও বাজে। এগুলো মনের কথার প্রতিধ্বনী নয়, আমাদের প্রিয় গান। প্রিয় বলেই বারবার শুনতে ভালো লাগে।
শেষে আফজাল হোসেন বলেন, বিবাহিত জীবন নিয়ে কত মানুষের বিচিত্র রকমের হাসফাঁস রয়েছে। আমার বা মনার হাস নেই, ফাঁসও নেই। সে তার মতো, আমি আমার মতো। কেউ কখনোই কারো ঘাড়ে চড়ে বসতে চাইনি। বত্রিশ বছর ধরে আমাদের ঘাড় স্বাধীন। বত্রিশ বছর ধরে সে আমাকে বিশেষ কোনও পরিচয়ের নয়, মানুষ বিবেচনা করে- এ দুয়ের চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে! রোজ ঘরে ঘরে ঘুরঘুর করুক ফাগুনের রঙ, বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।