বিনোদন ডেস্ক : ডিউন-এর গল্প মূলত ভবিষ্যতের পৃথিবী ও মহাবিশ্বের। কল্পিত সেই বাস্তবতাতে দেখা যায়, পুরো মহাবিশ্বেই বিভিন্ন গোত্রে বা বংশে বিভক্ত মানবসমাজ ছড়িয়ে আছে। বিভিন্ন বাসযোগ্য গ্রহের মালিকানা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হতে থাকে।
সদ্যই হয়ে গেল অস্কারের ৯৬তম আসর। তাতে কে পুরস্কার পেল, না পেল—তাই নিয়ে এখনও মেতে আছে হলিউড এবং বাকি বিশ্ব। অথচ এরই মধ্যে আগামী বছরের অস্কার প্রতিযোগিতার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হাজির হয়ে গেছে হলিউডে! কীভাবে? আসুন, সেই কাহিনিই জানা যাক।
এই ভাবনাটি আসছে মূলত ‘ডিউন: পার্ট টু’ নামের সিনেমাটি মুক্তি পাওয়ার পর থেকে। এর প্রথম পর্বটি ২০২১ সালে করোনার পরপরই মুক্তি পেয়ে হলিউডকে ব্যবসায়িক সাফল্যের স্বাদ দিয়েছিল। এবারের পার্ট টু ওই একই পথে হেঁটেছে। ১৯০ মিলিয়ন ডলার বাজেটে তৈরি ছবিটি এরই মধ্যে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ব্যবসা করে ফেলেছে। আশার কথা হলো, বাণিজ্যের সেই জয়রথ এখনও পূর্ণ বেগেই চলছে। এভাবে চলতে থাকলে, ‘ডিউন: পার্ট টু’ ব্যবসায় নতুন রেকর্ড গড়েও ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এবার আসা যাক সিনেমাটির নির্মাণশৈলী ও গল্পে। দানি ভিলনাভ পরিচালিত ‘ডিউন: পার্ট ওয়ান’ ও ‘ডিউন: পার্ট টু’-এর গল্প মূলত নেওয়া হয়েছে ফ্রাংক হারবার্টের লেখা ১৯৬৫ সালের উপন্যাস ‘ডিউন’ থেকে। ফ্র্যাঞ্চাইজির দুটি সিনেমাই একই পরিচালক নির্মাণ করায় গল্পের অসামঞ্জস্য অনুভব করার কোনো সুযোগ মেলেনি। পার্ট ওয়ান যেখানে শেষ, ঠিক সেখান থেকেই শুরু হয় পার্ট টু। ফলে ধারাবাহিকতা মেলাতে কষ্ট হয়নি একেবারেই।
ডিউন-এর গল্প মূলত ভবিষ্যতের পৃথিবী ও মহাবিশ্বের। কল্পিত সেই বাস্তবতাতে দেখা যায়, পুরো মহাবিশ্বেই বিভিন্ন গোত্রে বা বংশে বিভক্ত মানবসমাজ ছড়িয়ে আছে। বিভিন্ন বাসযোগ্য গ্রহের মালিকানা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তিত হতে থাকে। আর এই পরিবর্তন হয় একজন মহাশক্তিধর সম্রাটের অঙ্গুলিহেলনে। সিনেমার পার্ট ওয়ানে দেখা যায়, তেমনই এক নির্দেশে অ্যাট্রেইডিস নামের এক রাজপরিবার বুঝে পায় অ্যারাকিস গ্রহের মালিকানা। সেখানে ইন্টারস্টেলার ট্রাভেলের জন্য অতি প্রয়োজনীয় পদার্থ স্পাইস উৎপাদন হয়। তাই সেই গ্রহ সম্রাটের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আবার রাজপরিবারগুলোর কাছেও ওই গ্রহের ইজারা পাওয়া হলো রোজগার বাড়ানোর উপায়। কিন্তু যেখানে অর্থ প্রবলভাবে উপস্থিত, সেখানে অনর্থও থাকে চুপিসারে। অ্যাট্রেইডিস পরিবারের আগে অ্যারাকিসের ইজারা ছিল হারকোন্যান পরিবারের হাতে। তারাই শুরু করে ষড়যন্ত্র। আর তাতে সামিল হন সম্রাট স্বয়ং। কারণ ক্ষমতার চক্রই তার কাছে মূল বিবেচ্য বিষয়!
প্রথম পর্বে এই অ্যাট্রেইডিস পরিবারের ওপর হারকোন্যানদের হামলা এবং অ্যাট্রেইডিস পরিবারের বংশধর পল অ্যাট্রেইডিস ও তার মায়ের পালিয়ে জীবনযাপনের ঘটনাই মূলত দেখানো হয়েছিল। সেই সঙ্গে ছিল পলের নেতা হয়ে ওঠা এবং হামলাকারীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আভাস। ফলে পার্ট টু নিয়ে সব শ্রেণির দর্শকদের মধ্যেই এক ধরনের চাপা উত্তেজনা ছিল। এর মূল কারণ অবশ্যই অসাধারণ সিনেম্যাটোগ্রাফি ও দুর্দান্ত সাউন্ড ডিজাইনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা খুবই আকর্ষণীয় একটি গল্প। আর তাই ডিউন সিনেমার পার্ট ওয়ান দর্শকদের মধ্যে একটি অসমাপ্ত গল্প দেখার আকর্ষণকে দুর্বার করে তুলতে পেরেছিল। সেটিরই ফলাফল এখন দেখা যাচ্ছে বক্স অফিসে, বিশ্বজুড়ে।
‘ডিউন: পার্ট টু’ শুরু হয়েছে পল ও তার মা লেডি জেসিকার ফেরারি জীবনের ঘটনা দিয়ে। এভাবেই অ্যারাকিসের ফ্রিমেন জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ধীরে ধীরে মিশে যেতে থাকে পল ও লেডি জেসিকা। ফ্রিমেনরা স্বাভাবিকভাবেই নিপীড়িত জনগোষ্ঠী। তারা নিজেদের স্বাধীনতার আশায় থাকে, ভাবে কোনো একদিন কোনো এক নেতা এসে তাদের বাঁচাবে। সব হারানো পল ও লেডি জেসিকা সেখানে প্রথমে অপাঙক্তেয়ই থাকে। কিন্তু ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে থাকে দৃশ্যপট। কিন্তু সেই পরিবর্তনও কি পূর্বলিখিত? পরিকল্পিত? পল আর জেসিকা কি সাজানো খেলা পাল্টে দিতে পারবে? এসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে এগোতে থাকে সিনেমাটি।
পলের চরিত্রে টিমোথি শ্যালামে ও লেডি জেসিকার চরিত্র রেবেকা ফার্গুসন ছিলেন দুর্দান্ত। অসাধারণ অভিনয় করেছেন দুজনই। বিশেষ করে টিমোথি। অনূর্ধ্ব ৩০ বছরের এই অভিনেতা হলিউডের ভবিষ্যৎ হতে পারেন। চরিত্রের মধ্যে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা তাঁর আছে। ওদিকে রেবেকা ফার্গুসনের অভিনয় নিয়ে আলাদা বিশেষণ ব্যবহারের কিছু নেই। বরাবরের মতোই তিনি কোনো ঘাটতি রাখেননি। এর বাইরে উল্লেখ করা যায় ফ্রিমেন তরুণীর চরিত্রে অভিনয় করা জেনদায়ার কথা। তাঁর অভিনয় ছিল অত্যন্ত পরিমিত ও প্রশান্তিদায়ী।
সাই-ফাই সিনেমা হওয়ায় ‘ডিউন: পার্ট টু’র সিনেম্যাটোগ্রাফি ও ভিজ্যুয়াল ইফেক্টসে আলাদা নজর দিয়েইছিলেন পরিচালক। সেটি যে উপভোগ্যও হয়েছে, তা স্বীকার করতেই হবে। তবে দর্শকদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ থাকবে কান খাড়া রাখার জন্য। এই ছবিতে মিউজিক করেছেন বিখ্যাত হাইন্স জিমা। এবং উপভোগ্য সিনেম্যাটোগ্রাফি ও ভিজ্যুয়াল ইফেক্টসের সঙ্গে মিশে সেই সুর যে আপনাকে ক্ষণে ক্ষণে রোমাঞ্চিত করে তুলবেই, সেই নিশ্চয়তা এই অধমের পক্ষ থেকে অগ্রিম রইল।
এবার শিরোনামের প্রশ্নের উত্তর দেওয়া যাক। ২০২১ সালে মুক্তি পাওয়া ডিউনের প্রথম পর্বটি ৯৪তম অস্কার আসরে সবচেয়ে বেশি ৬টি পুরস্কার বগলদাবা করেছিল। ফ্র্যাঞ্চাইজির এবারের পর্বটি ছাড়িয়ে গেছে প্রথমটিকেও। গল্প, অভিনয়, মিউজিক, সিনেম্যাটোগ্রাফি বা ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস—যাই বলুন না কেন, ‘ডিউন: পার্ট টু’ এগিয়ে আছে সবকটিতেই। এমনকি সিনেমার শেষে দিয়েছে তৃতীয় পর্বের আশাবাদও। এবং গল্পের এমন জায়গাতেই দাড়ি টানা হয়েছে যে, তৃতীয় পর্বের জন্য দর্শকের মনে আগ্রহ জাগবেই। এত কিছু করে ফেলা পরিচালক দানি ভিলনাভের সিনেমা যে আগামী অস্কারে ঝড় তুলবে না, সেই সিদ্ধান্ত আপনি নিঃশঙ্ক চিত্তে নেবেন কীভাবে?
রেটিং: ৪.৬/৫
পরিচালক: দানি ভিলনাভ
চিত্রনাট্য: জন স্পাইটস ও দানি ভিলনাভ
অভিনয়শিল্পী: টিমোথি শ্যালামে, রেবেকা ফার্গুসন, লেয়া সিদু, অস্টিন বাটলার, ফ্লোরেন্স পিউ, জেভিয়ার বার্ডেম প্রমুখ
ভাষা: ইংরেজি
ধরন: সাই-ফাই, অ্যাকশন, অ্যাডভেঞ্চার
মুক্তি: ১ মার্চ ২০২৪
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।