জুমবাংলা ডেস্ক : রাজধানীসহ সারাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ে চলছে ভর্তি আবেদন। প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন নেওয়া শুরু হয়েছে গত ২৪ অক্টোবর থেকে।
মূলত নভেম্বরের শেষের দিকে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হলেও এবার একটু আগে থেকেই ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে এবার একটু আগেই আবেদন নেওয়া হচ্ছে। তবে অনেকের ছয় বছর পূর্ণ না হওয়ায় এবং ডিজিটাল নিবন্ধন জটিলতায় এ কার্যক্রমের বাইরে থাকছে অসংখ্য শিক্ষার্থী। ফলে এসব শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে তৈরি হয়েছে শঙ্কা।
অভিভাবকরা বলছেন, বাচ্চাদের ডিজিটাল নিবন্ধনের জন্য বাবা মায়ের ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক। এ কারণে অনলাইনে আবেদন করতে তৈরি হয়েছে নতুন জটিলতা। কিন্তু জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন করা যেত তবে কোনো বিড়ম্বনা থাকত না। তাছাড়া অনেকের বয়স ছয় বছর পূর্ণ না হওয়ায় অভিভাবকদের মাঝেও দুশ্চিন্তা দেখা দিয়েছে।
বেসরকারি চাকরিজীবী আলতাফ আহমেদ বলেন, এবার আগে আবেদন শুরু হয়েছে। অন্যদিকে জন্ম নিবন্ধন সনদ বাবা মা দুজনেরই ডিজিটাল করতে হচ্ছে। গ্রামপর্যায়ে নিবন্ধন ফি ৫০টাকা করা হলেও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় নেওয়া হচ্ছে বেহিসেবে।
তিনি বলেন, ছেলেকে ভর্তি করাতে এখন তিনটা জন্ম নিবন্ধন লাগতেছে। শুধু ছেলের জন্ম নিবন্ধন ডিজিটাল করলেই হচ্ছে না আমার ও আমার স্ত্রীর জন্ম নিবন্ধনও ডিজিটাল করতে হচ্ছে। এতে সময় ও টাকা দুটিই যাচ্ছে।
ফরিদ উদ্দিন নামের আরেক চাকরিজীবী বলেন, আমার গ্রামের বাড়ির ঠিকানায় নিবন্ধন করা। ভর্তির আবেদন করতে গিয়ে দেখি বাচ্চার এখনো ছয় বছর পূর্ণ হতে আরও দুই মাস বাকি। এখন নির্দিষ্ট বয়স পূর্ণ না হওয়ায় আবেদন নিচ্ছে না।
ফারুক হোসেন নামের একজন ব্যবসায়ী বলেন, আমি পরিবার নিয়ে থাকি ঢাকায়, বাড়ি নোয়াখালী। ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন পদ্ধতি থাকায় মেয়ের জন্য জন্ম নিবন্ধন করতে হবে। তাই আমাকে গ্রামের বাড়ি যেতে হবে। সবকিছু বন্ধ রেখে এলাকায় যাওয়া আবার আসা এক বিড়ম্বনা।
আরেকজন অভিভাবক বলেন, গেলো বছর আমার ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করতে পারিনি। সরকারের নতুন নিয়মে ভর্তি আবেদনেই জটিলতায় পড়েছি। সে স্কুলে ভর্তি হতে পারবে কী না তা আমি বুঝতে পারছি না।
জানা গেছে, আগামী ২২ থেকে ৩০ নভেম্বরের মধ্যে শিক্ষার্থী বাছাইয়ে ডিজিটাল লটারি করার পরিকল্পনা রয়েছে। ২৬ নভেম্বর এই লটারি হতে পারে। তবে আবেদন করতে না পারায় অনেকে অভিভাবক এখনো দুশ্চিন্তায় আছেন।
সার্বিক বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (স্কুল) অধ্যাপক মো. বেলাল হোসাইন বলেন, আমরা স্কুল ভর্তির আবেদনে যে ফর্মূলা নির্দিষ্ট করে দিই সেটিই অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে মানতে হবে। এক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর ডিজিটাল সনদ লাগবে। সেটা কারো কাছে না থাকলে বা থাকে বা কেউ যদি আবেদন না করতে পারলে আমাদের কিছু করার নেই।
তিনি বলেন, আবেদনের পুরো প্রক্রিয়াটি সফটওয়ারনির্ভর। এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের যে শর্ত দেওয়া হয়েছে এটা তাকে মানতেই হবে। এক্ষেত্রে আমাদের করণীয় থাকে না।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) তথ্যমতে, প্রতিটি আবেদনে পছন্দের ক্রমানুসারে শিক্ষার্থীরা সর্বোচ্চ পাঁচটি বিদ্যালয়ের নাম দিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পালায় (ডাবল শিফট) চলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে উভয় পালা পছন্দক্রমে দিলে দুটি পছন্দক্রম বলে বিবেচিত হবে।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন দেশের সব সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং মহানগর ও জেলা সদর উপজেলায় অবস্থিত বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে আগামী শিক্ষাবর্ষের (২০২৪) জন্য প্রথম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে ডিজিটাল লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।
ভর্তির নীতিমালা অনুযায়ী প্রথম বর্ষে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীর বয়স হতে হবে ছয় বছরের বেশি। আর প্রতি শ্রেণি শাখায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা সর্বোচ্চ ৫৫ জন।
তবে কিছু প্রতিষ্ঠান নীতিমালা মেইন্টেন করে লটারি কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে না। তাদের ভর্তি প্রক্রিয়া কেমন হবে সে বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক বেলাল হোসাইন বলেন, এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান মাউশি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিয়ে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করবে। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় সার্বিক বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।