উপমা গুহ যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নেব্রাস্কা মেডিকেল সেন্টার (ইউএনএমসি) কলেজ অব ডেন্টিস্ট্রির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর। ২০১৫ সাল থেকে শিক্ষকতা করছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে। গবেষণা ও শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি দীর্ঘদিন ইউএনএমসি কলেজ অব ডেন্টিস্ট্রির ক্লিনিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
উপমা গুহ ডেন্টাল ম্যাটেরিয়াল, ডিজিটাল ডেন্টিস্ট্রি ও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইন ডেন্টিস্ট্রি নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি ডেন্টাল ডিগ্রি নিয়েছেন বাংলাদেশ ডেন্টাল কলেজ থেকে। মাস্টার্স করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব নর্থ ক্যারোলাইনার চ্যাপেল হিল অ্যাডামস স্কুল অব ডেন্টিস্ট্রি থেকে।
তিনি বলেন, অনেক দেশ আছে, সেসব দেশের মানুষ দাঁত থাকতেই দাঁতের মর্ম বোঝেন। বলা হয়, দাঁতের ব্যথা বিশ্বের দ্বিতীয় যন্ত্রণাদায়ক ব্যথা। প্রথমটা মায়েদের সন্তান প্রসবের ব্যথা। আমাদের দাঁতের সবচেয়ে বাইরের যে গঠন, একে ‘অ্যানামেল’ বলি আমরা, ওটার মধ্যে অনুভব করার জন্য কোনো স্নায়ু নেই।
এটা মানবদেহের সবচেয়ে শক্ত অঙ্গ। হাড়ের চেয়ে শক্ত। একটা দাঁতের অ্যানামেল ক্ষয় হতে সাত-আট বছর লেগে যায়। কিন্তু তারপরও মানুষ বুঝতে পারেন না, তাঁর একটা সমস্যা হচ্ছে। পরে যখন ব্যথা শুরু হয়, তখন ডাক্তারের কাছে যান। কিন্তু এটা তো এক দিনে হয়নি। বহুদিন ধরে ক্ষয় হয়ে এই অবস্থায় এসেছে।
আরেকটা ব্যাপার বলি। আমাদের দেশে কোনো আর্টিস্টকে একজন দাদি বা নানির ছবি আঁকতে বললে তাঁরা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে একজন ফোকলা দাঁতের দাদি বা নানি আঁকবেন। কারণ, আমরা ভাবি, ৭০ বছর বয়সে একজনের চার-পাঁচটি বা সব কটি দাঁত পড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু বৈজ্ঞানিকভাবে যদি বলি, এটা ঠিক নয়। আপনি দাঁতের সামান্য যত্ন নিলে ৭০-৮০ বছর বয়সেও দাঁত পড়বে না। আমাদের দেশে দাঁতের যত্ন করা হয় না বলেই বৃদ্ধ ব্যক্তিদের দাঁত থাকে না।
বাংলাদেশেও অনেকে এআই নিয়ে কথা বলছেন, কাজ চলছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে এটা ভবিষ্যতের প্রযুক্তি নয়, বর্তমান। শিক্ষাক্ষেত্র থেকে শুরু করে সব জায়গায় এআই ব্যবহৃত হচ্ছে। আমার গবেষণার মূল চিন্তা হলো এআইকে সাহায্যকারী হিসেবে ব্যবহার করা। আমরা রোগীদের এক্স-রে করি। সেগুলো এত দিন মানুষ পর্যবেক্ষণ করতেন। কিন্তু এই ডেটা পর্যবেক্ষণের কাজটা আমি এআই দিয়ে আরও দ্রুত করতে পারি। শেষে অবশ্যই একজন মানুষ তা আবার বিশ্লেষণ করে দেখবেন, সব ঠিক আছে কি না; অর্থাৎ অবশ্যই সেটা আমাকে আবার চেক করতে হবে।
এআই দিয়ে এখন আমরা আরও একটা কাজ করি। ধরুন, একজন রোগী প্রথমবার আমাদের কাছে এলেন। তখন আমরা তাঁর দাঁত, মাড়ি ও গামের হেলথ (স্বাস্থ্য) দেখি। এই হেলথ দেখার জন্য মাড়ির সঙ্গে দাঁতের একটা জয়েন্ট (জোড়া) থাকে সাধারণভাবে। কিন্তু মাড়ি নষ্ট হয়ে গেলে দাঁতের সঙ্গে মাড়ির একটা গ্যাপ (ফাঁকা) তৈরি হয়। ওই গ্যাপ কতটুকু বা কতটা গভীর, তা পরীক্ষা করে দেখতে হয়। এটা অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।
প্রতিটি দাঁতের গোড়ায় গিয়ে একটু একটু করে পরীক্ষা করতে হয়। এখানে আমরা এআই ব্যবহার করি। আপনি দেখে দেখে গ্যাপ কতটুকু তা বলবেন এবং এআই তা নোট করবে। পরে আপনি শুধু চেক করবেন। এআই এটা খুব কম সময়ে ছক আকারে তৈরি করে দেয়। তবে আমরা কিন্তু পরে তা আবার পরীক্ষা করে দেখি যে এটা ঠিক আছে কি না। ভবিষ্যতে হয়তো রোবটের সাহায্যেই এ চিকিৎসা সম্পূর্ণভাবে করা যাবে। এমনও হতে পারে যে আমি হয়তো যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশি কারও দাঁতের চিকিৎসা করলাম একটা রোবোটিক আর্মের মাধ্যমে। ভবিষ্যতে এমনটা হবে বলে আশা করি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।