আন্তর্জাতিক ডেস্ক : চীনের বিয়ে-অর্থনীতির ক্ষেত্রেও এবার নতুন মাত্রা যোগ করতে শুরু করেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই। যেখানে একসময় রোবট ও পণ্য উৎপাদনের মাধ্যমে প্রযুক্তি দখল করেছিল বাজার, এখন সেখানে ঢুকে পড়েছে বিয়ের আয়োজনের সেবাও। চীনের শীর্ষ বিয়ের সেবা প্রদানকারী প্ল্যাটফর্ম হানলিচি নতুন ডিজিটাল সেবার মাধ্যমে তরুণ যুগলদের জন্য একেবারে নতুন ধরনের অভিজ্ঞতা তৈরি করছে।
হানলিচির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও ইয়ু চ্য জানালেন, নতুন প্রযুক্তি তরুণ যুগলের বিয়ের প্রস্তুতির ধরন বদলে দিচ্ছে, বিশেষ করে বিভিন্ন এআই সেবার মাধ্যমে, এখন করা যাচ্ছে ভার্চুয়াল ড্রেস ফিটিং এবং অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা।
ইয়ু বলেছেন, ‘এআই মানুষের জায়গা নেবে না। তবে এটি মানুষকে আরও ভালোভাবে সেবা দেবে এবং দক্ষতার সঙ্গে অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা তৈরি করে এ শিল্পকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করবে।’
হানলিচি এ কাজ সহজ করতে চালু করেছে আধুনিক এআই টুলস। এর মধ্যে রয়েছে ম্যাজিক মিরর (মুহূর্তের মধ্যে ছবি এডিটিং), ২৪/৭ এআই সেলস অ্যাসিস্ট্যান্ট, ভার্চুয়াল বিয়ের ড্রেস ফিটিং টুল এবং স্মার্ট বিয়ের পরিকল্পনা।
গত পাঁচ বছরে, চীনের বিয়ের শিল্প বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, যেমন বুকিং হ্রাস, বাজেট সংকোচন। অন্যদিকে, নতুন প্রজন্মের যুগলরা এমন বিয়ে চায় যা তাদের ভালোবাসার গল্পের মতো অনন্য হবে।
ইয়ুর মতে, এই ব্যাপারটিই হানলিচিকে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে এবং এই পরিবর্তনের অগ্রদূত হিসেবে বিয়ের পরিকল্পনাকে সহজ করার জন্য ডিজিটাল উদ্ভাবন এবং সৃজনশীল সমাধান দিয়ে এগিয়ে আসছে তার প্রতিষ্ঠান।
তিনি আরও বলেছেন, হানলিচি তার গ্রাহকদের জন্য ইনস্পাইরেশন বোর্ড, ভেন্ডর ম্যাচিং টুলস, এবং ব্যক্তিগত বিয়ের উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করে।
২০২৩ সালে, চীন ৭৬ লাখ ৮০ হাজার নতুন দম্পতির বিয়ে হয়েছে, যা আগের বছরের চেয়ে ১৩.৫২ শতাংশ বেশি। শিল্প বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই পরিসংখ্যানও বিয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্পের প্রতি আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন।
ইয়ু আরও উল্লেখ করেছেন, চীনের বিয়ের শিল্পের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি চীনের জনসংখ্যাগত চ্যালেঞ্জ যেমন জন্মহার হ্রাস এবং বয়স্ক জনসংখ্যা মোকাবিলায় সহায়তা করছে।
সম্প্রতি, চীনের কর্তৃপক্ষ ‘মিষ্টি অর্থনীতি’ এবং আধুনিক বিয়ের সংস্কৃতি প্রচারে নীতিও চালু করেছে, যা পরিবারের ওপর অর্থনৈতিক চাপ কমাতে এবং স্থায়ী জনসংখ্যা বৃদ্ধিকে সমর্থন করছে। এমনকি বিয়ের সেবা, খুচরা ও ক্যাটারিংয়ের মধ্যে সংযুক্তি বাড়াতে ওই নীতিগুলো বিয়ের শিল্পকে স্থানীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হিসেবে গড়ে তুলেছে।
ইয়ুর মতে, ‘বিয়ের ভবিষ্যত নির্ভর করছে গ্রাহকদের অভিজ্ঞতার ওপর। এআই হলো সেই গেম চেঞ্জার, যা এই শিল্পকে নিয়ে যাবে পরবর্তী স্তরে।
চীনের ইঞ্জিনিয়ারিং একাডেমির একাডেমিশিয়ান উ হেকুয়ান একটি পৃথক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘চীনের ইন্টারনেট খাতকে নতুন যুগে তার স্থান খুঁজে বের করতে হবে, যাতে এটি সত্যিই উচ্চমানের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে পারে।
বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিসিআইডি কনসালটিং-এর তথ্য অনুযায়ী, চীনের এআই শিল্প আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে আরও বড় ধরনের অগ্রগতি দেখবে। এই বাজারের আকার ২০৩৫ সালের মধ্যে ১.৭৩ ট্রিলিয়ন ইউয়ান হতে পারে, যা বিশ্বের মোট বিয়ে-অর্থনীতির ৩০.৬ শতাংশ হবে।
সূত্র: সিএমজি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।