বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি উত্থানে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ব্যাংক টেলার, ক্যাশিয়ার, পোস্টাল কর্মী, প্রশাসনিক সহকারীসহ বেশ কিছু চাকরি দ্রুত বিলুপ্ত হবে বলে জানিয়েছে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)। সংস্থাটির ‘ফিউচার অব জবস রিপোর্ট’-এ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এ মাসের শেষের দিকে সুইজারল্যান্ডের দাভোসে ডব্লিউইএফ বার্ষিক সভার আগেই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে নতুন চাকরি সৃষ্টি এবং কাজের ধরন পরিবর্তনের মাধ্যমে বর্তমানের মোট চাকরির ২২ শতাংশ পরিবর্তিত হবে। এর মধ্যে ১৭০ মিলিয়ন নতুন চাকরি সৃষ্টি হবে, যা বর্তমান কর্মসংস্থানের ১৪ শতাংশের এর সমান। তবে একই সময়ে ৯২ মিলিয়ন চাকরি হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে। নতুন চাকরি সৃষ্টি এবং কিছু চাকরি বিলুপ্ত হওয়ার ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে মোট ৭৮ মিলিয়ন চাকরি বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশ্বের ৫৫টি দেশের ২০টিরও বেশি শিল্পের ১৪ মিলিয়ন কর্মীর ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদনটি তৈরি হয়েছে। কীভাবে প্রযুক্তিগত উন্নতি, জনসংখ্যাগত পরিবর্তন, অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং সবুজ রূপান্তর বৈশ্বিক চাকরি ও দক্ষতার ওপর প্রভাব ফেলবে তা এই প্রতিবেদনে বিশ্লেষণ করা হবে।
যেসব চাকরি দ্রুত হ্রাস পাবে
ডব্লিউইএফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেরানি, ক্যাশিয়ার, টিকিট ক্লার্ক, প্রশাসনিক সহকারী, এবং এক্সিকিউটিভ সেক্রেটারির মতো কর্মীদের চাকরি বিলুপ্ত হওয়ার শঙ্কা সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে পোস্টাল সার্ভিস কর্মী, ব্যাংক টেলার ও ডেটা এন্ট্রি কর্মীদের চাকরির সংখ্যা দ্রুত কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
যেসব চাকরি বাড়বে
কৃষক, ডেলিভারি ড্রাইভার, নির্মাণশ্রমিক, বিক্রয়কর্মী, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ কর্মীসহ কেয়ার ইকোনমি (মানুষের যত্ন নেওয়ার সেবা) সম্পর্কিত চাকরিগুলোর চাহিদা বাড়বে। এর মধ্যে নার্স, সমাজকর্মী, কাউন্সিলর ও ব্যক্তিগত যত্নসহায়কদের চাকরির সুযোগ ব্যাপকভাবে বাড়বে। এ ছাড়া শিক্ষকদের চাহিদাও বাড়বে আগামী পাঁচ বছরে।
এআই যুগে প্রযুক্তি সম্পর্কিত চাকরি
প্রযুক্তি সম্পর্কিত চাকরি, বিশেষত বিগ ডেটা স্পেশালিস্ট, ফিনটেক ইঞ্জিনিয়ার, এআই ও মেশিন লার্নিং বিশেষজ্ঞ এবং সফটওয়্যার ডেভেলপারদের চাহিদা দ্রুত বাড়বে। এ ছাড়া ‘সবুজ ও শক্তি রূপান্তর’ সম্পর্কিত চাকরিগুলোর মধ্যে স্বয়ংক্রিয় ও বৈদ্যুতিক যানবাহন বিশেষজ্ঞ, পরিবেশ প্রকৌশলী এবং নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকৌশলীদের চাহিদা বাড়বে।
কর্মীদের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, নিয়োগের ক্ষেত্রে চাহিদার শীর্ষে থাকবে এআই, বিগ ডেটা ও সাইবার নিরাপত্তা সম্পর্কিত প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং নিয়োগকর্তা ইতিমধ্যেই এআই এর মাধ্যমে বিভিন্ন কাজের অটোমেশন (স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ সম্পাদন) শুরু করেছে। তবে, মানবিক দক্ষতা যেমন: সৃজনশীল চিন্তাভাবনা, স্থিরতা, অভিযোজনশীলতা এবং গতিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা হিসেবে বিবেচিত হবে। বিশেষত, নিয়োগকর্তাদের জন্য সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন দক্ষতা হিসেবে উঠে এসেছে—বিশ্লেষণাত্মক চিন্তা, যেখানে ৭০ শতাংশ কোম্পানি এটিকে অপরিহার্য হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
দক্ষতার পরিবর্তন
কর্মীরা আশা করতে পারেন যে, আগামী পাঁচ বছরে তাদের বর্তমান দক্ষতার ৩৯ শতাংশ পরিবর্তিত হবে বা অপ্রয়োজনীয় হয়ে যাবে।
তবে, আগের বছরগুলোর তুলনায় দক্ষতা পরিবর্তনের হার কিছুটা কমেছে। ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এটি ছিল ৪৪ শতাংশ। কারণ কর্মীরা নিজেদের দক্ষতা উন্নত করার জন্য অতিরিক্ত প্রশিক্ষণের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের এই রিপোর্ট স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এবং সামাজিক পরিবর্তনের প্রভাবে আগামী দশকে চাকরির বাজারে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।
তথ্যসূত্র: ফাস্ট কোম্পানি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।