বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে পরিবেশ বান্ধব ও টেকসই বিমান পরিচালনার জন্য গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সংস্থা। তবে এবার পাখির ওড়ার কৌশল অনুসরন করে জ্বালানি সাশ্রয়ের নতুন এক পদ্ধতি উদ্ভাবনের পথে এগোচ্ছে বেশকিছু এয়ারলাইন্স। এই কৌশল শুধু বিমান চলাচলে খরচ কমাবে না, এর পাশাপাশি কার্বন নির্গমন হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে পারবে বলে বিশেষজ্ঞরা ধারনা করছেন।
প্রাচীনকাল থেকেই প্রকৃতি অনুসরন করে বিভিন্ন প্রযুক্তি উন্নয়ন করেছে মানুষ। ইতালির চিত্রশিল্পী ও বিজ্ঞানী লিওনার্দো দা ভিঞ্চি ১৫০০ সালে প্রথমবারের মতো পাখির ওড়ার কৌশল নিয়ে গবেষণা করেন, যার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তীতে আধুনিক বিমান নির্মাণের ধারণা আসে। এই ধারাবাহিকতায়, ২০১৯ সালে এয়ারবাস ‘ফেলোস ফ্লাই’ (পাখির ঝাঁক-বদ্ধ উড়ান) নামে একটি প্রকল্প চালু করে। এটি মূলত পাখির ঝাঁক-বদ্ধ উড়ান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ওয়াক এনার্জি রিট্রাইভাল (ডব্লিইউইআর) নামে একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবনের পথে এগোচ্ছে।
এই প্রযুক্তিটি বিমানের জ্বালানি খরচ কমানোর একটি উদ্ভাবনী কৌশল। সাধারণত, যখন একটি বিমান আকাশে উড়ে, তখন এর পেছনে একটি শক্তিশালী বায়ুচলাচল পথ তৈরি হয়, যা প্রচুর পরিমাণে শক্তি নষ্ট করে। ডব্লিইউইআর প্রযুক্তিটি এই বাতাসের শক্তি পুনরুদ্ধার করে তা পুনরায় বিমানের গতির জন্য ব্যবহার করে। যার ফলে জ্বালানির ব্যবহার ৫-১০% পর্যন্ত কমানো সম্ভব হবে বলে ধারনা করছেন গবেষকরা।
২০২৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের গবেষণা সংস্থা (এসইএসআআর) এ প্রকল্পের জন্য ১০ মিলিয়ন ইউরো অনুদান দিয়ে গিস প্রজেক্ট নামে নতুনভাবে চালু করে। ২০২৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে পরীক্ষামূলক কৌশল প্রয়োগ করা হবে ডেল্টা এয়ারলাইন্স ও এয়ারবাস। আটলান্টিক মহাসাগরের ওপরে পরিচালিত একটি পরীক্ষামূলক ফ্লাইটে, এয়ার ফ্রান্সে একটি বিমান নিউইয়র্ক থেকে এবং ডেল্টা এয়ারলাইন্সে একটি বিমান মায়ামি থেকে লন্ডনের দিকে উড়বে।
পরীক্ষায় বিমান দুটি ১০০০ ফুট (৩০৩ মিটার) উচ্চতা ব্যবধানে থাকবে এবং ১ দশমিক ২ নটিক্যাল মাইল (২ দশমিক ২ কিলোমিটার) দূরত্ব বজায় রাখবে। যা পরীক্ষাগারে জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য উপযুক্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে।
এ বিষয়ে ডেল্টা এয়ারলাইন্সের প্রধান টেকসই উন্নয়ন কর্মকর্তা অ্যামেলিয়া ডেলুকা জানান, ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নির্গমন শূন্য করার লক্ষ্য নিয়ে, ডেল্টা কার্বন কাউন্সিল ২০২৪ সালে ৪১ মিলিয়ন গ্যালন (৬৫,৮০০ টন) জেট জ্বালানি সাশ্রয় করার রিপোর্ট করেছে।
এছাড়াও, তিনি জ্বালানি সাশ্রয়ে বেশ কিছু কৌশলের কথা বলেছেন। যেমন, মাটিতে থাকার সময় ইঞ্জিন চালানোর পরিবর্তে গ্রাউন্ড পাওয়ার ব্যবহার করা। গ্রাউন্ড পাওয়ার এমন একটি শক্তির উৎসকে বোঝায়, যেটি বিমানের ইঞ্জিনের পরিবর্তে, বিমানটি মাটিতে অবস্থান করার সময় চালিত করে। এছাড়া বিমানটিকে ইঞ্জিন চালানো ছাড়াই বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে সাহায্য করে। এতে জ্বালানি সাশ্রয় হয় এবং পরিবেশের ওপর এর প্রভাব কমায়।
এছাড়া, বিমানের ল্যান্ডিংয়ের সময় ছোট এবং সরল পথ বেছে নেওয়া, যাতে জ্বালানি সাশ্রয় ও সময়ও কম লাগে। এবং উইংয়ের টিপের ওপরের দিকে পয়েন্ট করা উইং-লেট ইন্সটল করা। কেননা এই উইং-লেটগুলি বিমান চলার সময় বায়ুর প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে জ্বালানি সাশ্রয় করতে সাহায্য করে।
পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানি ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
জ্বালানি সাশ্রয়ের পাশাপাশি সাসটেইনেবল এভিয়েশন ফুয়েল (সাফ) ব্যবহারের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছে এভিয়েশন শিল্প। যদিও এটি প্রচলিত জ্বালানির তুলনায় তিনগুণ বেশি ব্যয়বহুল, তবুও এয়ারবাস ও ডেল্টা এয়ারলাইন্স ২০২৫ সাল থেকে টেকসই জ্বালানি কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সাফ ব্যবহারের মাধ্যমে বিমান শিল্পের কার্বন নির্গমন উল্লেখযোগ্যভাবে কমানো সম্ভব। এরই মধ্যে প্রাকৃতিক নকশা অনুকরণ করে পরিবেশবান্ধব এভিয়েশন প্রযুক্তি বিকাশে কাজ করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
যেমন নতুন এক্সটা পারফমেন্স উইং তৈরি করে। যা পাখির ডানার মতো পরিবর্তনশীল হবে। এছাড়া নাসার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে এমন আবরণ তৈরির গবেষণা করছে, যা জল-পদ্ম পাতার মতো পানি শোষণ প্রতিরোধ করতে পারবে। এমনকি, এরোসার্ক নামে এক প্রযুক্তি উদ্ভাবনের চেষ্টা করছে, যা হাঙরের চামড়ার মতো হবে এবং জ্বালানি খরচ কমাবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।