বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : ডিজিটাল, সোশাল মিডিয়া ও ওটিটি প্লাটফর্মের জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন বিটিআরসি’র নতুন রেগুলেশনের (বিধিমালা) খসড়া নিয়ে সমালোচনা চলছে দিনভর। বলা হচ্ছে, ফেসবুক স্ট্যাটাসে ‘আজ আমার মন খারাপ’ লিখলেও শাস্তি হতে পারে। আসলে কি তাই? খসড়া সংশ্লিষ্টরাই মনে করতে পারছেন না, এমন কথা কোথায় লেখা আছে।
বিটিআরসি বলছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশে কমিশন একটি নীতিমালা তৈরি করছে। খসড়া করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে তাতে আগ্রহীদের মতামত নেওয়া হয়েছে।
নীতিমালার উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘ফেসবুকে যে কেউ একটা স্ট্যাটাস দিলো এবং সেটা নিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বেঁধে গেলো। এর দায় কে নেবে? ওটিটি-নির্ভর প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করে যেহেতু এ ধরনের সমস্যা তৈরির সুযোগ রয়েছে, ফলে এগুলো নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনও আছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমার অনুরোধ—আপনাদের পরামর্শগুলো বিটিআরসি-কে পাঠান। সেসব পর্যালোচনা করা হবে।’
ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অন্যান্য ডিজিটাল মাধ্যমের জন্য যে রেগুলেশন তৈরি করছে বিটিআরসি তার কয়েকটি ধারা মানুষের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
তাদের অভিমত, নীতিমালা এমন হওয়া উচিত—যা দিয়ে ক্ষতিকর কন্টেন্ট নিয়ন্ত্রণ করা যাবে অন্যদিকে জনগণও নির্দ্বিধায় এই প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারবে।
বিটিআরসি বলছে, উচ্চ আদালতের নির্দেশে কমিশন একটি নীতিমালা তৈরি করছে। এটি তৈরি করতে ভারত ও সিঙ্গাপুরের এ বিষয়ক নীতিমালা দেখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ওটিটি (ওভার দ্য টপ) নির্ভর বিভিন্ন ওয়েব প্ল্যাটফর্মে ‘অনৈতিক ও আপত্তিকর’ ভিডিও কনটেন্ট পরিবেশনের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এসব নিয়ন্ত্রণে উচ্চ আদালতের নির্দেশে একটি গাইডলাইন তৈরি করছে টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি।
ওটিটিতে অনৈতিক ও আপত্তিকর ভিডিও কনটেন্ট পরিবেশন তদারকি, শনাক্তকরণ এবং এ থেকে রাজস্ব আদায় বিষয়ে কার্যপদ্ধতি নির্ধারণেও কাজ করছে বিটিআরসি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী বলেন, বিটিআরসি-কে ওটিটি বিষয়ক একটি নীতিমালা তৈরির নির্দেশনা দিয়েছেন উচ্চ আদালত। সেই আলোকে বিটিআরসি খসড়া তৈরি করেছে।
তিনি বলেন, সেই নীতিমালা কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে মতামতও নেওয়া হয়েছে। এখনও মতামত দেওয়ার সুযোগ আছে। বিটিআরসি অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক করে মতামত নিচ্ছে। পরে খসড়া চূড়ান্ত হলে সেটার ভিত্তিতে উচ্চ আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন।
তিনি আরও বলেন, ‘এখনই নীতিমালা নিয়ে উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই। অপেক্ষা করুন। দেখুন উচ্চ আদালত কী সিদ্ধান্ত দেয়।’
নতুন নীতিমালায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা ব্যাহত হতে পারে কিনা প্রশ্নে মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘সংবিধানই মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছে। উচ্চ আদালত কি সংবিধানের বাইরে গিয়ে কাজ করবে?’
তিনি আরও বলেন, ‘শুধু বিটিআরসি কেন, তথ্য মন্ত্রণালয়ও খসড়া করেছে। দুটো মিলিয়ে হয়তো সিদ্ধান্ত আসবে।’
নীতিমালার বিষয়ে জানতে চাইলে বিটিআরসির এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, উচ্চ আদালত কমিশনকে নীতিমালা তৈরির নির্দেশ দেন। আমরা খসড়া করে কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছি। ওয়েবসাইটে মতামত নেওয়া শেষ। এখন অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠক হচ্ছে। তাদের মতামত, পরামর্শ পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত খসড়া হবে। সেটা উচ্চ আদালতে জমা দেওয়া হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আগামী ২৪ মে এটি জমা দেওয়া হবে। তারপর উচ্চ আদালত সিদ্ধান্ত দেবেন নীতিমালায় কী থাকবে, কী থাকবে না।
‘আজ আমার মন খারাপ’ এমন স্ট্যাটাস বিষয়ক খবর গণমাধ্যমে প্রকাশের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তারা কোথায় যে এসব পায় জানি না। খসড়ার কোথায় এসব বলা আছে?’
গত ৩ এপ্রিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে দ্য বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের খসড়া নীতিমালা—রেগুলেশন ফর ডিজিটাল, সোশাল মিডিয়া অ্যান্ড ওটিটি প্লাটফর্মস-২০২১ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে।
সম্মেলনে টিআইবি বলে, নীতিমালার খসড়ার কয়েকটি ধারা সংবিধান পরিপন্থী। খসড়ার বেশ কয়েকটি ধারা বাকস্বাধীনতাকে মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ন করবে। সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন।
https://inews.zoombangla.com/aj-amar-mon-kharap/
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।