আন্তর্জাতিক ডেস্ক : আজ ৩১ মে, পালিত হচ্ছে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য— “তামাক কোম্পানির কূটকৌশল উন্মোচন করি, তামাক ও নিকোটিনমুক্ত বাংলাদেশ গড়ি।” এই প্রতিপাদ্য ধারণ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সংগঠনগুলো তামাকের বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধিতে নানা কর্মসূচির আয়োজন করছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী অন্তত ৩ কোটি ৭০ লাখ কিশোর-কিশোরী নিয়মিত তামাকপণ্য ব্যবহার করে। এই বিপুল সংখ্যক তরুণকে নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের প্রতি আসক্ত করতে তামাক কোম্পানিগুলো চালায় নানা রকম কূটকৌশল।
এর মধ্যে রয়েছে সুগন্ধিযুক্ত তামাকপণ্য বাজারজাতকরণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় সেলিব্রেটিদের দিয়ে প্রচার চালানো, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া অনুষ্ঠানে পৃষ্ঠপোষকতা এবং শক্তিশালী আইন ও কর ব্যবস্থা প্রণয়নের বিরোধিতা করা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল (CDC)-এর গবেষণায় দেখা গেছে, যারা ২১ বছর বয়সের আগেই তামাকে আসক্ত হয়, তাদের মধ্যে নিকোটিন নির্ভরতা গড়ে ওঠে প্রবলভাবে, এবং এই আসক্তি আমৃত্যু বহমান থাকে।
তামাকপণ্যের প্রভাব শুধু স্বাস্থ্যগত ক্ষতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এটি পরিবেশ ও কৃষি ব্যবস্থাকেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। টোব্যাকো অ্যাটলাসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের বন উজাড়ের প্রায় ৩১ শতাংশ দায়ী তামাক চাষ।
গবেষণায় দেখা গেছে, কক্সবাজার ও বান্দরবানের তিনটি উপজেলায় তামাকপাতা শুকাতে (কিউরিং) এক বছরে ব্যবহার করা হয়েছে প্রায় ৮৫ হাজার মেট্রিক টন জ্বালানি কাঠ।
বর্তমানে পৃথিবীর ১২৫টিরও বেশি দেশের প্রায় ৪ মিলিয়ন হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে, যার বেশিরভাগই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশ। বিশ্বজুড়ে উৎকৃষ্ট কৃষিজমি তামাকচাষে ব্যবহৃত হওয়ায় খাদ্য ফসলের জমি হ্রাস পাচ্ছে। অথচ এই জমিতে খাদ্য উৎপাদন করা গেলে লাখ লাখ মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যেত।
বাংলাদেশে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ মাত্র ৩ কোটি ৭৬ লাখ ৭ হাজার একর। কিন্তু তামাকচাষে ব্যবহৃত জমির পরিমাণের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১৩তম। বিশ্বের মোট উৎপাদিত তামাকের ১.৩ শতাংশই আসে বাংলাদেশ থেকে।
তবে এই উৎপাদন ক্ষমতার পেছনে লুকিয়ে আছে করুণ বাস্তবতা। বাংলাদেশে তামাকজনিত অসুস্থতায় প্রতিবছর মারা যান প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ। তামাক মৃত্যু ও পঙ্গুত্বের প্রধান চারটি কারণের একটি। শুধু চিকিৎসা ব্যয় ও কর্মক্ষমতা হ্রাসজনিত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণই প্রায় ৩০ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, তামাকের বিরুদ্ধে লড়াই কেবল স্বাস্থ্য রক্ষার বিষয় নয়, এটি একটি অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও নৈতিক লড়াইও। এ বছরের বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস তাই তামাক কোম্পানির কূটকৌশল উন্মোচন ও প্রতিহত করার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। একমাত্র সুসংহত নীতিমালা, কঠোর আইন প্রয়োগ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেই তামাকমুক্ত ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।