ইসলামে ইবাদতের প্রতিটি আমলই মর্যাদাপূর্ণ; তবে কিছু আমল আছে, যেগুলো ব্যক্তিগত সাওয়াবের গণ্ডি ছাড়িয়ে সমষ্টিগত কল্যাণের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। নামাজের আহ্বান বা আজান তেমনই এক মহান ইবাদত, যা আল্লাহর তাওহীদের ঘোষণা এবং মুসলিম সমাজের হৃদস্পন্দন। এই পবিত্র দায়িত্ব যাঁরা পালন করেন, তাদের মকলা হয় মুওয়াযযিন, তাঁদের মর্যাদা ও আখিরাতের সম্মান সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একাধিক সুসংবাদ প্রদান করেছেন।

তার একটি হচ্ছে-
عَنْ طَلْحَةَ بْنِ يَحْيَى، عَنْ عَمِّهِ، قَالَ كُنْتُ عِنْدَ مُعَاوِيَةَ بْنِ أَبِي سُفْيَانَ فَجَاءَهُ الْمُؤَذِّنُ يَدْعُوهُ إِلَى الصَّلاَةِ فَقَالَ مُعَاوِيَةُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ “ الْمُؤَذِّنُونَ أَطْوَلُ النَّاسِ أَعْنَاقًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ ”
‘তালহাহ ইবনু ইয়াহইয়া তার চাচার সূত্রে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি মুআবিয়াহ ইবনু আবূ সুফইয়ান (রাযিঃ) এর কাছে উপস্থিত ছিলাম। এমন সময় মুওয়াযযিন তাকে সালাতের জন্য ডাকতে আসল। মু’আবিয়াহ (রাযিঃ) বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ কিয়ামতের দিন মুওয়াযযিনদের গর্দান সবচেয়ে বেশি উচু হবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৮৭)
হাদিসের ব্যাখ্যা
এই হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুওয়াযযিনদের মর্যাদা ও আখিরাতের বিশেষ সম্মানের কথা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভাষায় তুলে ধরেছেন।
“কিয়ামতের দিন মুওয়াযযিনদের গর্দান সবচেয়ে বেশি উঁচু হবে” এ কথার মাধ্যমে তাদের সম্মান, মর্যাদা ও স্বাতন্ত্র্যকে রূপক অর্থে প্রকাশ করা হয়েছে। অর্থাৎ কিয়ামতের ভয়াবহ ও লজ্জাজনক পরিবেশে, যখন অধিকাংশ মানুষ ভীত, নতশির ও উদ্বিগ্ন থাকবে, তখন মুওয়াযযিনরা থাকবে সম্মানিত, দৃঢ় ও মর্যাদার সঙ্গে দৃশ্যমান।
আলেমগণ ব্যাখ্যা করেছেন, ‘গর্দান উঁচু হওয়া’ বলতে শুধু শারীরিক উচ্চতাই বোঝানো হয়নি; বরং এটি ইঙ্গিত করে তাদের মর্যাদার উচ্চতা, আল্লাহর নিকট তাদের বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা এবং জান্নাত লাভের দৃঢ় আশা। দুনিয়াতে তারা আল্লাহর ঘরের দিকে মানুষকে আহ্বান করেছেন, তাঁর ইবাদতের ডাক পৌঁছে দিয়েছেন।
এই মহান দায়িত্ব পালনের পুরস্কারস্বরূপ আখিরাতে তাদের অবস্থানও হবে সবার উপরে ও আলোকোজ্জ্বল। এই হাদিস আমাদের আরও স্মরণ করিয়ে দেয় যে আজান কেবল একটি ঘোষণা নয়; এটি তাওহীদের প্রকাশ, রাসূলের রিসালাতের সাক্ষ্য এবং সালাতের দিকে ডাকার এক পবিত্র দায়িত্ব।
যে ব্যক্তি নিষ্ঠা, ইখলাস ও আল্লাহভীতির সঙ্গে এই দায়িত্ব পালন করে, সে মূলত প্রতিদিন বহু মানুষকে সাওয়াবের পথে আহ্বান করে; আর সেই আহ্বানের প্রতিদান সে নিজেও পেয়ে থাকে।
সুতরাং এই হাদিস মুসলিম সমাজকে মুওয়াযযিনদের সম্মান করতে, আজানের মর্যাদা উপলব্ধি করতে এবং যাদের এই দায়িত্ব পালন করার সুযোগ রয়েছে, তাদেরকে আন্তরিকতা ও ধারাবাহিকতার সঙ্গে তা আদায় করতে উদ্বুদ্ধ করে। কারণ দুনিয়ার এই ক্ষুদ্র দায়িত্বই আখিরাতে হতে পারে চিরস্থায়ী সম্মানের কারণ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।


