জুমবাংলা ডেস্ক : রাজশাহীতে একটি বিয়েকে কেন্দ্র করে ১৯টি মামলা হয়েছে। বিয়ের আগে এবং বিচ্ছেদের পরে মামলাগুলো হয়েছে। রাজশাহীর ছাপাখানা ব্যবসায়ী আবুল কালাম আজাদ রিংকু (২৮) দাবি করেছেন, তার সাবেক স্ত্রী প্রিয়া খাতুন (২১) মামলা করেছেন ১২টি। আর প্রিয়া জানিয়েছেন, রিংকু তার নামে মামলা করেছেন ৭টি। যদিও পাঁচটি মামলা করার কথা স্বীকার করেছেন রিংকু।
ব্যবসায়ী রিংকুর বাড়ি রাজশাহী নগরীর ডিঙ্গাডোবা মহল্লায়। রাজশাহীর নিউমার্কেটের ষষ্ঠতলায় তার ছাপাখানার ব্যবসা আছে।
আর প্রিয়া খাতুনের বাবার বাড়ি দামকুড়া থানার জোতরাবন (ধুতরা বন) গ্রামে। তিনি শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন। তার দেওয়া মিথ্যা মামলায় হয়রানির শিকার হচ্ছেন দাবি করে রবিবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে রিংকু নিউমার্কেট এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে রিংকু দাবি করেন, তার সাবেক স্ত্রী প্রিয়া তাকে ছাড়াও আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবকে আসামি করছেন। তারা ২৫টি পরিবার ভুক্তভোগী হয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে রিংকু বলেন, প্রিয়াকে আগে তিনি চিনতেনই না। হঠাৎ ২০১৯ সালের জুন মাসে তিনি একটি ফোন পান। প্রিয়া তাকে প্রিন্টিংয়ের কাজ নেওয়ার জন্য রাজশাহী কলেজে ডাকেন। তিনি গেলে তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তিনি তা নাকচ করে চলে আসেন। এরপর ২০১৯ সালের জুনে ভুয়া কাবিননামা নিয়ে বাড়ি চলে আসেন প্রিয়া।
তখন তাকে মেনে নেওয়া না হলে প্রিয়া আদালতে যৌতুকের মামলা করেন। বাধ্য হয়ে রিংকু জাল কাবিননামা তৈরির অভিযোগে প্রিয়ার নামে মামলা করেন। পরে একদিন প্রিয়া ছাপাখানায় যান এবং কীটনাশক পান করেন। পরে কীটনাশক পান করিয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে অভিযোগ করে প্রিয়া মামলা করেন। এই মামলার পর তিনি উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন।
আপসের স্বার্থে তিনি ২০২০ সালে প্রিয়াকে বিয়ে করেন। ইতোমধ্যে রিংকুর দায়ের করা মামলায় প্রিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় পুলিশ। এতে উঠে আসে, প্রিয়া প্রথমে জাল কাবিননামা দিয়ে যৌতুকের মামলা করেছিলেন। তবে প্রিয়াকে বিয়ে করে নেওয়ার কারণে রিংকু ওই মামলাটি তুলে নেন। তারপর দুজনে সংসার করছিলেন। ২০২১ সালের দিকে তাদের একটি ছেলেসন্তান হয়। মুনতাসুজ্জামান প্রিন্স নাম রাখা হয় তার। প্রিন্সের বয়স এখন ৩ বছর।
রিংকু বলেন, ‘বিয়ের পর জানতে পারি ফজলে রাব্বী নামের একজনের সঙ্গে প্রিয়ার বিয়ে হয়েছিল। বনিবনাও হচ্ছিল না। তাই গত বছরের ডিসেম্বরে কাজি অফিসের মাধ্যমে প্রিয়াকে তালাক দিই। এরপর থেকেই একের পর এক মামলা দিয়ে যাচ্ছেন প্রিয়া। মোট মামলা করেছেন ১২টি। ২০১৯ সালের ৭ আগস্ট প্রথম মামলাটি করেছিলেন প্রিয়া। দ্বিতীয় মামলাটি ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর করেন। পরে ২০২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর একটি মামলা করেন। এরপর চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি, ৩০ জানুয়ারি, ৫ এপ্রিল, ২২ এপ্রিল, ৬ মে, ২০ মে, ১৯ আগস্ট, ৫ সেপ্টেম্বর ও ১৫ ডিসেম্বর একটি করে মামলা করেছেন প্রিয়া।’
তিনি আরও জানান, এসব মামলায় তাকে ছাড়াও তার আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবকে আসামি করা হয়েছে। একটি মামলার তদন্ত শেষ হওয়ার আগেই আরেকটি মামলা করা হয়েছে। একই রকম ঘটনা দেখিয়ে কখনও আদালতে, কখনও বিভিন্ন থানায় মামলাগুলো করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, সব মামলা মিথ্যা। ইতোমধ্যে চারটি মামলা আদালতে খারিজ হয়েছে। অন্য ৮ মামলায় ২৫টি পরিবার পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তিনি জানান, এক মামলায় জামিনের আগেই নতুন মামলা হচ্ছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিয়া খাতুন বলেন, ‘জোর করে বিয়ে করার অভিযোগ ঠিক না। রিংকুর সঙ্গে আমার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু বিয়ে করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। পরে মামলা-মোকদ্দমা হলে আদালতের নির্দেশেই বিয়ে করেন। কিন্তু রিংকু মাদক সেবন করেন। বন্ধুর বউকে নিয়ে কক্সবাজার ঘুরতে যান। ফলে দাম্পত্য কলহের সৃষ্টি হয়। এখন রিংকু আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।’
প্রিয়া দাবি করেন, রিংকুও তার নামে ‘ডজনখানেক’ মামলা করেছেন। এর মধ্যে সাতটি মামলার তারিখ জানাতে পারেন প্রিয়া। তার দেওয়া তথ্যমতে, বিয়ের আগে ২০১৯ সালের ৩০ জুন প্রথম মামলা করেন রিংকু। বিচ্ছেদের পর ২০২৩ সালের ২৯ ডিসেম্বর ও ৩১ ডিসেম্বর; চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি, ১৩ ফেব্রুয়ারি ও ৫ জুলাই এই ৭ মামলা করেন রিংকু।
প্রিয়া বলেন, ‘আমি নাকি তাকে শুধু মারধর আর হুমকিই দিই। এসব অভিযোগে মামলাগুলো করেছে।’ জানতে চাইলে রিংকু বলেন, ‘আমি মামলা করেছি ৫টি। এর মধ্যে দুটি চলমান। প্রিয়া ১২টা মামলা করার কথা বললেও কাগজ দেখাতে পারবে না। আমি ৫টা মামলাই করেছি।’
এদিকে দুইপক্ষের ‘মামলার বন্যা’ বইলেও বিষয়টির সমাধান হচ্ছে না। সম্প্রতি আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশন নামের একটি সংস্থার শরণাপন্ন হয়েছিলেন রিংকু। সংস্থাটি নোটিশ করে উভয়পক্ষকে ডাকে। গত ১৭ ডিসেম্বর সংস্থার সভাপতি খন্দকার মো. লিয়াকত আলী ও সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কিছু শর্তে প্রিয়া মামলাগুলো তুলে নিতে চান। প্রিয়ার শর্ত ছিল- দেনমোহর এক লাখ টাকা হলেও তাকে পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে। সন্তানের খোরপোশ বাবদ প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকা দিতে হবে। আর ছাপাখানার একটি প্রেস মেশিন বাচ্চার নামে লিখে দিতে হবে।
সংস্থাটি অন্য সব শর্ত অপরিবর্তিত রেখে শুধু পাঁচ লাখের বদলে দুই লাখ টাকা নিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানায়। কিন্তু তা মানেননি প্রিয়া। ফলে আপস-মীমাংসা আর হয়নি। সংস্থার ওই প্রতিবেদনের মন্তব্যে লেখা হয়েছে, ‘প্রিয়া খাতুন মামলাবাজ মেয়ে। আদালত কর্তৃক চারটি মামলা খারিজ হওয়া তা-ই প্রমাণ করে।’ তবে রিংকু যে মামলা করেছেন সে বিষয়টি প্রতিবেদনে নেই।
রিংকু দাবি করেন, চলমান আটটি মামলায় এখন অনেক আসামি। প্রত্যেক আসামির কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে মোটা অঙ্কের টাকা তুলে দেওয়ার নতুন প্রস্তাব দিয়েছেন প্রিয়া। তবে মামলাগুলোর অনেক আসামি বেকার, কেউ তার ছাপাখানার কর্মচারী। সবার টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নেই। ফলে তারা টাকা দিতে পারছেন না। মামলা নিয়ে হয়রানি হচ্ছেন।
টাকা চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে প্রিয়া বলেন, ‘আমি টাকা চাই না। আমি বিচার চাই। সে জন্যই মামলা করেছি। মামলা বিচারাধীন। এ অবস্থায় মিথ্যা মামলা বলার সুযোগ নেই।’
আগের বিয়ে প্রসঙ্গে প্রিয়া বলেন, ‘খালাতো ভাইকে বিয়ে করেছিলাম। পরিবার মেনে নেয়নি বলে বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। পরে রিংকুকে বিয়ে করি। অনেক টাকা বলে তার খুব অহংকার।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।