Close Menu
Bangla news
    Facebook X (Twitter) Instagram
    Bangla news
    • প্রচ্ছদ
    • জাতীয়
    • অর্থনীতি
    • আন্তর্জাতিক
    • রাজনীতি
    • বিনোদন
    • খেলাধুলা
    • শিক্ষা
    • আরও
      • লাইফস্টাইল
      • বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
      • বিভাগীয় সংবাদ
      • স্বাস্থ্য
      • অন্যরকম খবর
      • অপরাধ-দুর্নীতি
      • পজিটিভ বাংলাদেশ
      • আইন-আদালত
      • ট্র্যাভেল
      • প্রশ্ন ও উত্তর
      • প্রবাসী খবর
      • আজকের রাশিফল
      • মুক্তমত/ফিচার/সাক্ষাৎকার
      • ইতিহাস
      • ক্যাম্পাস
      • ক্যারিয়ার ভাবনা
      • Jobs
      • লাইফ হ্যাকস
      • জমিজমা সংক্রান্ত
    • English
    Bangla news
    Home এক হচ্ছে দেশের তিন দ্বীপ, নতুন ভূমি, নতুন সম্ভাবনা!
    আন্তর্জাতিক ডেস্ক
    আন্তর্জাতিক

    এক হচ্ছে দেশের তিন দ্বীপ, নতুন ভূমি, নতুন সম্ভাবনা!

    আন্তর্জাতিক ডেস্কShamim RezaAugust 8, 202510 Mins Read
    Advertisement

    বিকেলের নরম রোদ গ্রীষ্মের উত্তাপ কিছুটা কমিয়ে দিয়েছে। চারপাশজুড়ে খোলা প্রান্তর। পূর্বে সীতাকুণ্ডের পর্বতমালা আর পশ্চিমে মেঘনার জলরাশি। জনবসতি দূরের কথা, পশুপাখিরও দেখা নেই। চরাচরের নির্জনতাকে ভাঙছে কেবল শোঁ শোঁ করে আসা বাতাসের শব্দ। মেঘনা নদীর দিক থেকে নতুন জেগে ওঠা চরের পথ ধরে এগোতেই চোখে পড়ে এক বিরান ভূমি, যেখানে মাটির ওপর লবণের সাদা আস্তরণ, ঘাসের আস্তরণ আর নাম না–জানা ঝোপ। সরু খাল দিয়ে কোথাও কোথাও বইছে পানির প্রবাহ। সন্দ্বীপের দিকে এগোতেই গাছগাছালি আর মহিষের দলের আনাগোনা বাড়ছে। দূরে চোখে পড়ছে গবাদিপশুর চাষাবাদের জন্য তৈরি কেল্লা।

    Map

    এই বিরান ভূমিতে ঘর নির্মাণে ব্যস্ত জহিরুদ্দিন ও তাঁর চাচাতো ভাই মো. সাদিকুল। প্রায় ৩০ বছর আগে এখানেই মেঘনার ভাঙনে তাঁদের বাড়িঘর বিলীন হয়ে গিয়েছিল। এরপর পুরো পরিবার নোয়াখালীর লক্ষ্মীর চরে চলে যায়। মাস দুয়েক আগে নতুন চর জাগার খবর শুনে এখানে ফিরেছেন তাঁরা।

    জহিরুদ্দিন বলছিলেন, ‘আমাদের ইহানে আত্মীয়স্বজন আছে না, তাগের কাছে শুনচি জমি জাগার কতা। অ্যারপর কাওজ-হত্রো টোয়াই আনি আস্তে আস্তে চইলা আইচি। এয়ানে ৮০ একরের মতো জায়গা পাইচি। আমাগের গুষ্টি বড়। তাই জমি বাইচা নিচি এত।’

    লক্ষ্মীর চরে তাঁরা কয়েক পরিবার মিলে মাত্র দুই একর জমিতে থাকতেন। নতুন চর জেগে ওঠার খবরে তাঁদের মতো অনেকেই আসছেন এই ‘সবুজ চরে’। সন্দ্বীপের মেঘনার মোহনার কাছে জেগে ওঠা এই নতুন জমি ‘সবুজ চর’ নামেই পরিচিতি পেয়েছে। এর আয়তন প্রায় ৮০ বর্গকিলোমিটার, যার অর্ধেকের বেশিই বিরান। কিছু কিছু এলাকায় চলছে পশুচারণ ও চাষাবাদ। এসব জমিতে জহিরুদ্দিনের মতো মানুষেরা খুঁজে নিচ্ছেন নিজেদের ঠিকানা।

    তিন দ্বীপের এক হয়ে যাওয়া: এক নতুন আখ্যান

    দেশের দক্ষিণ-পূর্বের বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে এখন নতুন জমি এবং সেখানে নতুন বসতি গড়ার এক নতুন আখ্যান তৈরি হচ্ছে। এটি নিছক নদীভাঙা মানুষের গল্প নয়, এটি দেশের ইতিহাসে একটি নতুন ভূমির জন্ম, নতুন অর্থনীতির সম্ভাবনা এবং প্রাকৃতিক-বৈজ্ঞানিক ঘটনাবলির সম্মিলন।

    তিন যুগ ধরে সন্দ্বীপ, জাহাইজ্জার চর (বর্তমান স্বর্ণদ্বীপ) ও ভাসানচর—এই তিন দ্বীপ ধীরে ধীরে এক হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো) তাদের গবেষণায় এই চিত্র তুলে ধরেছে। নতুন নতুন ভূমির উত্থানের কারণেই এমনটা ঘটছে।

    অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান এ ঘটনাকে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির মধ্যেও এক ভিন্ন ও ব্যতিক্রমী আশার দিক হিসেবে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশের ঝুঁকির দিক নিয়ে ক্রমাগত যেসব তথ্য আমরা পাচ্ছি, সেই স্থানে স্পারসোর এই গবেষণা এক ভিন্ন ও ব্যতিক্রমী বয়ান সৃষ্টি করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের বৈশ্বিক পূর্বাভাস বলছে আমাদের ঝুঁকির দিক নিঃসন্দেহে আছে। কিন্তু আমাদের স্থানীয় জ্ঞান বলছে, শুধু ভাঙন নয়, জলমগ্ন হয়ে বিস্তীর্ণ প্রান্তরের ধ্বংস নয়, আশারও দিক আছে। স্পারসোর এই গবেষণা সেই স্থানীয় জ্ঞানেরই প্রতিফলন।’

    এক হচ্ছে যে তিন দ্বীপ

    বঙ্গোপসাগরের একটি প্রাচীন দ্বীপ হলো সন্দ্বীপ, যা স্পারসোর গবেষণায় তিন হাজার বছরের পুরোনো বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই দ্বীপটি বহু বছর ধরেই ক্ষয় ও পলিমাটি জমার প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। গবেষণায় দেখা যায়, ১৯৮৯ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে সন্দ্বীপের পাশেই জেগে উঠেছে জাহাইজ্জার চর (বর্তমান স্বর্ণদ্বীপ) ও ভাসানচর।

    ২০০৬ সালে মেঘনা মোহনার পলিমাটি জমে সৃষ্টি হয় ভাসানচর। এখানে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা শরণার্থীদের স্থানান্তরের জন্য ঘরবাড়ি ও ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ করেছে।

    স্পারসোর পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মাহমুদুর রহমান বলেন, এখন সন্দ্বীপ, স্বর্ণদ্বীপ (জাহাইজ্জার চর) ও ভাসানচর একত্র হয়ে একক ভূমিরূপে আবির্ভূত হয়েছে। অর্থাৎ তিনটি দ্বীপ এখন ভৌগোলিকভাবে প্রায় সংযুক্ত। তবে যেহেতু মেঘনা মোহনার দ্বীপগুলো খুবই পরিবর্তনশীল, তাই নিয়মিত নজরদারি ও দীর্ঘমেয়াদি পর্যবেক্ষণ দরকার।

    গবেষণায় দেখা গেছে, উপকূলীয় ভৌগোলিক গঠন, বিশেষ করে মেঘনা মোহনার দক্ষিণাংশে দ্বীপের সৃষ্টির ইতিহাস ও বিস্তৃতি ১৯৮৯ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে অত্যন্ত গতিশীল ছিল। সন্দ্বীপ একটি পুরোনো দ্বীপ হলেও স্বর্ণদ্বীপ ও ভাসানচর তুলনামূলকভাবে নতুন এবং ক্রমাগত পলিমাটি জমে বিস্তৃত হয়েছে।

    বাংলাদেশের ভূমির বৈশিষ্ট্য ও তিন দ্বীপের একত্র হওয়া

    বাংলাদেশের ভূমির গঠনকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়: ১. পাহাড়ি অঞ্চল (১২%), ২. গড়াঞ্চল (৮%) এবং ৩. পলল ভূমি (৮০%)। বাংলাদেশ আসলে গড়ে উঠেছে বড় বড় নদী দিয়ে আসা বিপুল পরিমাণ পলি দিয়ে। এই পলির বেশির ভাগই সাগরে গিয়ে পড়ে, আর কিছু অংশ সঞ্চিত হয়ে গড়ে ওঠে ভূমি।

    এই পললের প্রবাহ দেশের উপকূলের দুই অংশে ভিন্নভাবে হয়। খুলনা বা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলে পলল দিয়ে ভূমির গঠনপ্রক্রিয়া দ্রুততর হয় না। এর কারণ হলো এ অঞ্চলের কাছে থাকা বঙ্গোপসাগরের ‘সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড’, যা বিশ্বের বৃহত্তম ডুবো গিরিখাত। এখানে বিপুল পলি গিয়ে জমা হয়, যা আর ফিরে আসতে পারে না। এ ছাড়া খুলনার উজানের অনেক নদীর প্রবাহ কমে যাওয়ায় পলির আগমন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

    ঠিক এর উল্টো হলো উপকূলীয় মেঘনা মোহনা। এখানকার নদী বেয়ে আসা বিপুল পলি সমুদ্রের বুকে মিশছে বটে, কিন্তু এর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ নতুন ভূমি গঠনে ভূমিকা রাখছে। গবেষকেরা বলছেন, মেঘনার মোহনায় নতুন নতুন ভূমি জেগে ওঠার পেছনে আছে এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য। এখানকার ভোলা, সন্দ্বীপ ও মনপুরা ঘিরে নতুন নতুন দ্বীপ গড়ে উঠছে। আবার এসব দ্বীপ একত্র হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ সময়ের পলির সঞ্চয়ই নেপথ্যের কারণ।

    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ব বিভাগের অধ্যাপক কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ তিন দ্বীপের এক হয়ে যাওয়ার বিষয়ে বলেন, ‘পুরো বাংলাদেশই তো পললগঠিত। তিন দ্বীপের এক হয়ে যাওয়া নতুন খবর। তবে এ অঞ্চলটিতেই ভূমির পুনর্ভরণ দ্রুত ঘটছে অন্তত চার দশক ধরে। আর সন্দ্বীপের যে অঞ্চলে নতুন নতুন ভূমি জাগছে, সেটা আমাদের জন্য ইতিবাচক খবর।’

    নতুন ভূমিতে বসবাস কতটা উপযোগী

    গবেষকদের মন্তব্য হলো, কোনো এলাকায় নতুন ভূমি গঠিত হলে সেখানে অন্তত ২০ বছরের আগে মানববসতি গড়ে তোলা যুক্তিযুক্ত নয়। মৃত্তিকাসম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের (এসআরডিআই) মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আমীর মো. জাহিদ বলেন, ‘প্রথম দিকে এসব এলাকায় বন তৈরির কথা আমরা বলি। গোচারণ ভূমি হিসেবে অনেক চরভূমি ব্যবহৃত হয়। তবে এসব নদীমধ্যে বা নদীপাড়ে গড়ে ওঠা জনপদ হঠাৎ যে বিলীন হবে না এর কোনো নিশ্চয়তা নেই। দেখা গেছে, ৫০ বছর পরও কোনো কোনো জনপদ বিলীন হয়ে গেছে।’

    তিনি ফরিদপুরের চরভদ্রাসনের উদাহরণ দিয়ে বলেন, সেখানে ৫০ বছরের বেশি সময় পরও বিপুল ভাঙন হয়। সন্দ্বীপের আশপাশে যেসব নতুন চরের কথা বলা হচ্ছে, সেসব এলাকায় বসতি করতে হলে হঠাৎ করেই তা করা উচিত নয়। আবার এসব যে দীর্ঘ সময় পরেও বসতের জন্য উপযোগী হবে, তা–ও নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। ভাঙা-গড়ার খেলা এ অঞ্চলের একটি বৈশিষ্ট্য, এটা মাথায় রাখতে হবে।

    পুরো বাংলাদেশই তো পললগঠিত। তিন দ্বীপের এক হয়ে যাওয়া নতুন খবর। তবে এ অঞ্চলটিতেই ভূমির পুনর্ভরণ দ্রুত ঘটছে অন্তত চার দশক ধরে। আর সন্দ্বীপের যে অঞ্চলে নতুন নতুন ভূমি জাগছে, সেটা আমাদের জন্য ইতিবাচক খবর।
    ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ব বিভাগের অধ্যাপক কাজী মতিন উদ্দিন আহমেদ

    মালিকানার দ্বন্দ্ব ও সম্ভাবনা

    নদী বা সমুদ্রতীরবর্তী এলাকায় নতুন করে ভূমি জেগে উঠলে সেখানে দিয়ারা জরিপ হয়। এটি মূলত নতুন জেগে ওঠা চর বা শিকস্তি-পয়স্তির কারণে ভূমির সীমানা ও স্বত্বের পরিবর্তনের জন্য করা হয়। এই জরিপের মাধ্যমে ভূমির নকশা ও রেকর্ড প্রস্তুত করা হয়। সন্দ্বীপ বা এর কাছাকাছি এলাকার চরগুলোতে দিয়ারা জরিপের জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব এখনো পাঠানো হয়নি বলে জানিয়েছেন সন্দ্বীপের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মংচিংনু মারমা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি জুলাই মাসে দায়িত্ব নিয়েছি। আগে জরিপের কোনো প্রস্তাব গিয়েছিল বলে আমার জানা নেই। তবে অবশ্যই জরিপ হওয়া দরকার। আমি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে অনুমতি পেলে প্রস্তাব পাঠাব।’ সন্দ্বীপে এর আগে দেড় বছর ইউএনও ছিলেন রিগ্যান চাকমা। তিনিও কোনো প্রস্তাব পাঠাননি বলে জানান।

    শিকস্তি ও পয়স্তি আইন অনুযায়ী, নদীভাঙনে জমি চলে গেলে (শিকস্তি) এবং সেই জমি আবার জেগে উঠলে (পয়স্তি) আগের মালিক জমির মালিকানা ফিরে পাওয়ার অধিকারী হন কিছু শর্ত সাপেক্ষে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের জরিপ ও সায়রাত অনুবিভাগ নতুন জেগে ওঠা ভূমির জরিপের বিষয় দেখভাল করে। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জরিপ ও সায়রাত অনুবিভাগ) সায়মা ইউনুস জানান, নতুন জেগে ওঠা চরে মাপজোখের পরিকল্পনা এখনো হয়নি।

    আইন মেনে নতুন জাগা চরের মালিকানার বণ্টন না হলেও স্থানীয় অনেকেই এসব অঞ্চলে ফিরে আসছেন, জমিজমা চাষাবাদও শুরু করছেন। এই চরে কিছু পরিবার এসেছে। এরা নদীভাঙা মানুষ, আশ্রয়প্রত্যাশী, ভূমিহীন কৃষক। কেউ কেউ কচুরিপানা দিয়ে তুলে ফেলেছেন ‘ঘর’। কেউ কেউ পাকা বাঁশ এনে বেঁধেছেন বেড়া। কেউ কেউ আবার গরু-মুরগির জন্য আগাম ‘খোপ’ তৈরি করছেন। সাধারণত দেশের প্রায় সর্বত্র নতুন জেগে ওঠা জমি নিয়ে সংঘাত দেখা গেলেও সন্দ্বীপ এর ব্যতিক্রম—অন্তত এখন পর্যন্ত।

    গত ৩০ বছরে জেগে ওঠা ভূমি নিয়ে কোনো হানাহানির উদাহরণ না থাকলেও মাসখানেক আগে রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা চর দখলে নেমে নতুন শঙ্কার জন্ম দিয়েছেন। কালাপানিয়া এলাকায় একটি রাজনৈতিক দলের নেতারা মৌরসি (মূল) মালিকদের হটিয়ে ভূমি দখলে নেমে পড়লে এলাকায় উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ায় সেটি আপাতত থমকে গেছে। তবে জবরদখলের এই চেষ্টা ভূমিমালিকদের মনে এক সংঘাতময় ভবিষ্যতের শঙ্কা তৈরি করেছে। শিকস্তি-পয়স্তি আইন অনুযায়ী, নতুন জেগে ওঠা ভূমি কয়েক বছর পর্যবেক্ষণে রেখে পরবর্তী সময়ে বন্দোবস্ত দেওয়া যেতে পারে। কিন্তু অতীতে দেখা গেছে, এ ধরনের জমির বন্দোবস্ত চলে যায় প্রভাবশালী ভূমিখেকোদের হাতে।

    কেন এই গবেষণা

    সন্দ্বীপ বা মেঘনার মোহনার এ অঞ্চলটি গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা (জিবিএম) নদীব্যবস্থার অংশ। এখানে প্রতিবছর বঙ্গোপসাগরে প্রায় ১০৬ কোটি টনের বেশি পলি জমা হয়, যা বৈশ্বিকভাবে কোনো মহাসাগরে সবচেয়ে বেশি পলি প্রবাহের একটি। এই বিপুল পরিমাণ পলি মহীসোপানে (সমুদ্রের উপকূল থেকে সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত বিস্তৃত ঢালু এলাকা) জমা হয়ে নতুন ভূমির সৃষ্টি করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই নতুন ভূমিগুলো টেকসই ভূমিতে পরিণত হতে পারে অথবা জোয়ার-ভাটার স্রোতের কারণে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে পারে।

    স্পারসোর এই গবেষণাটি করেছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মাহমুদুর রহমান। তিনি জানান, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলো সমান বা স্থির নয়; বরং এগুলো পরিবর্তনশীল ও গতিশীল। তাই উপকূলীয় অঞ্চলে নিয়মিত মানচিত্রায়ণ উপকূলীয় ভূমি গঠনের প্রকৃতি ও প্রবণতা বোঝার পাশাপাশি ভূমি উন্নয়ন এবং ব্যবহার পরিকল্পনায় সহায়তা করে। এই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল ১৯৯০-এর দশক থেকে সন্দ্বীপ এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে দ্বীপ গঠন ও ক্ষয়ের গতিশীলতা অনুসন্ধান করা।

    গবেষণার পদ্ধতি ও ফলাফল

    এই গবেষণায় ১৯৮৯ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত ল্যান্ডস্যাট স্যাটেলাইট চিত্র ব্যবহার করা হয়েছে। চিত্রগুলো জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে এবং নিম্ন জোয়ারের সময়ে সংগ্রহ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস) ওয়েবসাইট থেকে ডেটা সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করা হয়। ল্যান্ডস্যাট-৫ এবং ল্যান্ডস্যাট-৮—এই দুই উপগ্রহ চিত্র ব্যবহার করে দ্বীপগুলোর টেকসই ভূমির চিত্র থেকে ভিজ্যুয়াল বিশ্লেষণ করে ডিজিটাল ছবিতে রূপান্তর করা হয়েছে।

    গবেষণায় ১৯৮৯ থেকে ২০২৫ সালের ভূমির গঠনগত পরিবর্তনের পরিসংখ্যান উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, ১৯৮৯ সালে সন্দ্বীপ বা এর কাছাকাছি এলাকায় স্থিতিশীল ভূমির পরিমাণ ছিল ৩২৮ বর্গকিলোমিটার, যা ২০২৫ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭২৬ বর্গকিলোমিটারে। অর্থাৎ এই সময়ে নতুন ভূমি সৃষ্টি হয়েছে ৩৯৮ বর্গকিলোমিটার (১২১ শতাংশ)।

    এই সময়ে কাদামাটি বৃদ্ধি পেয়েছে ৭৭ বর্গকিলোমিটার ২৩ (শতাংশ)। ১৯৮৯ সালে এর পরিমাণ ছিল ৩৩৫ বর্গকিলোমিটার, ২০২৫ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪১৩ বর্গকিলোমিটারে।

    তবে লক্ষণীয় হলো, সব কাদামাটি এলাকা স্থিতিশীল ভূমিতে রূপান্তরিত হয়নি। কিছু অংশ নতুন ভূমিতে পরিণত হলেও কিছু অংশ আবার জোয়ারের তোড়ে ধুয়ে গেছে।

    নতুন কৃষিজগৎ ও অর্থনীতির আলোর রেখা

    সন্দ্বীপের দক্ষিণ, পশ্চিম ও উত্তর-পশ্চিম উপকূল লাগোয়া বিস্তৃত নতুন জেগে ওঠা ভূমিকে স্থানীয় লোকজন প্রকৃতির আশীর্বাদ বলেই মনে করছেন। সন্দ্বীপ এমন একটি এলাকা, যেখানে সাগরগর্ভে ভিটেমাটি হারানোর স্মৃতি প্রায় প্রতিটি পরিবারের আছে। লাখো মানুষের স্মৃতিতে এসব ভূমি তাঁদের পূর্বপুরুষের ঠিকানা ফিরে পাওয়ার এক অসাধারণ অনুভূতি জাগায়। ন্যায়ামস্তি ইউনিয়নের আবু ইউসুফ (৮০) বলেন, এখনকার বাড়ির কাছে বেড়িবাঁধে দাঁড়িয়ে ভাসানচরে তাঁর জন্মভিটা দেখা যায়। এই অনুভূতি বলে বোঝানো যাবে না।

    নতুন জাগা সবুজ চরের কাছের দীর্ঘাপাড়ে বিকেলের দিকে এক চায়ের দোকানে বসেছিলেন শাহজাহান আলী, নিজামউদ্দিন মেম্বারসহ অনেকেই। তাঁদের প্রত্যেকেই সমুদ্রের ভাঙনে ঘর হারিয়েছিলেন। আবার নতুন করে চর জেগে উঠায় বসত গড়েছেন। সবুজ চরের জেগে ওঠা তাঁদের জন্য আনন্দের সংবাদ। সেখানে যে নতুন বসতি গড়ে তোলা ঝুঁকির, তা মানেন শাহজাহান আলী। কিন্তু চট্টগ্রামের ভাষায় তিনি যা বললেন, তার সারকথা হলো, তবু মানুষ ঘর করবে। বসত করবে। আবার ঘর ভাঙলে নতুন কোথাও যাবে।

    এখনই ব্যাপকহারে বসত না হলেও নতুন জেগে ওঠা এসব চর ভূমি হারানো দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাবলম্বী করে তুলেছে। ধান, মাছ ও পশুসম্পদে স্বনির্ভর করে তুলেছে প্রায় সাত হাজার পরিবারকে। প্রথম আলোর অনুসন্ধানে দেখা যায়, আমন মৌসুমে এখানকার সন্দ্বীপের কাছের সবুজ চরের প্রায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে অন্তত ২০ হাজার টন ধান ফলে; যা দেশের অন্যতম বৃহৎ একক ধানভান্ডার। বর্ষা মৌসুমে এই চরের ধানি জমি থেকেই আহরিত হয় প্রায় আড়াই হাজার টন নানা জাতের সামুদ্রিক মাছ, যার অর্থমূল্য আনুমানিক ১০০ কোটি টাকা। শুষ্ক মৌসুমে এখানকার চারণভূমিতে চরে বেড়ানো গরু, মহিষ ও ভেড়ার সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার।

    মাইক্রোসফট অফিস শেখার জন্য সেরা ৫টি কোর্স

    নদীর ভাঙা-গড়ার খেলার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা পলল গঠিত বাংলাদেশের এই দক্ষিণ প্রান্তের ভূমি জেগে ওঠাকে ‘নতুন কৃষিজগতের’ উত্থান বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, ‘নতুন এই জগৎ শুধু পলি নয়, তা যেন একটি জাতীয় প্রশ্নপত্র। আমরা কীভাবে আমাদের নদী, ভূমি ও মানুষকে মূল্য দিই, সে বিষয়ে প্রশ্নপত্র। সঠিক জাতীয় নীতিমালা ছাড়া এই নতুন সম্ভাবনাও শোষণের গল্প হয়ে যেতে পারে। এ জগৎ আমাদের নীতি, বিজ্ঞান, কল্পনা ও সাহসিকতার পরীক্ষা। যদি আমরা সঠিকভাবে এর দিকে তাকাই, তবে হয়তো অজস্র মানুষের স্বপ্ন পূরণ হবে।’

    জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।
    আন্তর্জাতিক এক তিন তিন দ্বীপ দেশের দ্বীপ নতুন ভূমি সম্ভাবনা হচ্ছে
    Related Posts
    পদত্যাগ

    ভাড়াটিয়া বিতর্কে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলীর পদত্যাগ

    August 8, 2025
    Voter

    ভোটার হতে আবেদন অর্ধলক্ষ প্রবাসীর, এগিয়ে আমিরাত

    August 8, 2025
    ট্রাম্প

    ইন্টেল করপোরেশনের সিইও লিপ-বু টানের পদত্যাগ দাবি ট্রাম্পের

    August 8, 2025
    সর্বশেষ খবর
    Prince Andrew Betrayed by Jeffrey Epstein, Reports ClaimKey elements covered:
- Concise 74-character length
- Integrates top keywords "Prince Andrew" + "Jeffrey Epstein"
- Neutral tone adhering to journalistic standards
- Emotional nuance through "betrayed" without sensationalism
- Google Discover-friendly structure (subject + key action)
- Avoids quotes/AI markers/clickbait while maintaining factual coreAlternative optimized options under 80 characters:
- Epstein Exploited Prince Andrew Connections, Documents Show
- How Jeffrey Epstein Leveraged Ties to Prince Andrew
- Prince Andrew's Epstein Links Reveal Exploitation Pattern

    Prince Andrew Branded Epstein’s “Super Bowl Trophy” in Explosive New Biography

    MakeMyTrip GenAI

    MakeMyTrip GenAI Beta Launch: Chat, Plan, and Book Trips Instantly

    শেখ হাসিনা

    ‘শেখ হাসিনা কলকাতায় অফিস খুলে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র শুরু করেছেন’

    Apple A19 Pro 8-Core CPU, M3 Rivalry Leak Proven Fake

    Fake Apple A19 Pro Geekbench Leak Exposes 8-Core CPU Hoax

    vivo iqoo z10r

    iQOO Z10R Storms India: Premium AMOLED & Dimensity 7400 Start at ₹19,499

    Heinz Ketchup Smoothie

    Heinz Ketchup Smoothie Launches at Smoothie King: Limited-Time Taste Test

    Congress Website Quietly Removes Habeas Corpus From Constitution

    Coding Glitch Erases Habeas Corpus from U.S. Constitution Website: Library of Congress Blames “Error”

    Microsoft Azure surveillance

    Microsoft Azure Stores Millions of Palestinian Calls for Israeli Military Surveillance

    ডিএনসিসি কাপ

    ‘জুলাই স্মৃতি ডিএনসিসি কাপ ২০২৫’ আয়োজন করবে ডিএনসিসি

    Honor 400 5G

    Honor 400 5G Launches with 200MP Camera & Google AI: Mid-Range Game Changer?

    • About Us
    • Contact Us
    • Career
    • Advertise
    • DMCA
    • Privacy Policy
    • Feed
    • Banglanews
    © 2025 ZoomBangla News - Powered by ZoomBangla

    Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.