আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বেনেট ক্যাসপার উইলিয়ামস (৩৭) একজন পুরুষ হিসেবে জন্মগ্রহণ করেছেন। লস অ্যানজেলেসের এই পুরুষটি এক পর্যায়ে নিজের পেটে সন্তান ধারণ করেছেন। সেই হিসেবে তিনি ওই সন্তানের মা। কিন্তু তাকে মা বলে আখ্যায়িত করলে তিনি তাতে আহত হন। তার মুখে দাড়ি। পুরুষ হিসেবে আছে পরিচয়। তা সত্ত্বেও কেন নার্সরা তাকে ‘মা’ বলে সম্বোধন করেছেন- এতে মনোকষ্ট পান উইলিয়ামস। এ খবর দিয়েছে লন্ডনের একটি ট্যাবলয়েড পত্রিকার অনলাইন সংস্কারণ।
২০১১ সালে তিনি প্রথম বুঝতে পারেন তিনি উভলি”ঙ্গে”র মানুষ। এর তিন বছর পরে তিনি বহুলি”ঙ্গে”র মানুুষ হিসেবে আচরণ শুরু করেন। এর ৬ বছর পরে ২০১৭ সালে তিনি মালিক নামে একজনের সাক্ষাত পান। তাকে তিনি ভবিষ্যত স্বামী হিসেবে বাছাই করেন।
২০১৯ সালে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। সিদ্ধান্ত নেন তারা সন্তান ধারণ করবেন। উইলিয়ামস তার টেস্টোস্টেরন হরমোন বন্ধ করার চিকিৎসা নেন। গর্ভাশয় যাতে ঠিকমতো কাজ করে সে জন্য কয়েক বছর এমনভাবে চলল তার চিকিৎসা।
উইলিয়ামস তার শরীরের উপারের অর্ধেক অংশ সার্জারি করালেন। কিন্তু লিঙ্গগত কোনো অপারেশন করাননি। এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত নিলেন যে, তিনি সন্তান ধারণ করতে সক্ষম। ফলে তিনি সেই চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন। বেশ তাড়াতাড়িই তিনি প্রাকৃতিক উপায়ে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লেন। ২০২০ সালের অক্টোবরে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে তিনি জন্ম দিলেন একটি পুত্রসন্তান হাডসনকে।
হরমোনের চিকিৎসা শুরুর দুই বছর পরে ২০১৫ সালের গ্রীষ্মে তিনি সার্জারি করিয়ে স্তন ফেলে দেন। এতে তার খরচ পড়ে ৫ হাজার ডলার। মেয়েদের মতো বক্ষযুগল নিয়ে তিনি কেমন বোধ করতেন- এমন জিজ্ঞাসায় অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, তিনি চলাফেরায় অসুখী মনে করতেন নিজেকে। অপারেশন করিয়ে তা ফেলে দেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, এতে আমি বাস্তবেই মুক্ত হতে পেরেছি। আমি এমন মুক্ত হতেই চেয়েছি।
তাই বলে আমি কখনোই আমার নিজের স্তনকে ঘৃণা করতাম না। অন্য বহুলি”ঙ্গে”র মানুষদের মতোই আমার কাছে মনে হতো। শরীরের সুনির্দিষ্ট কোনো অংশ নিয়ে আমার কোনো অসন্তোষ ছিল না। এখনও নেই। তবে বক্ষযুগল ফেলে দিলে কেমন স্বস্তি হবে তা কখনো কল্পনাও করিনি। আসলে বক্ষযুগল আমার কাঁধে বেশ চাপ সৃষ্টি করছিল। বেশ ওজন মনে হচ্ছিল ‘শরীরকে’। যখন সার্জারি করালাম, শরীরের নিচের অংশ তাতে বাদ রাখলাম। শরীরের নিচের অঙ্গ নিয়ে আমার কোনো হতাশা ছিল না।
যা হোক নিজের সন্তান গর্ভে ধারণ এবং তার জন্ম দেয়া উইলিয়ামসের জন্য কোনো সহজ বিষয় ছিল না। তার ভাষায়, সব সময়ই আমি জানতাম যে, সন্তান ধারনের উপযোগী আমার শরীর। যতক্ষণ পর্যন্ত আমার লিঙ্গগত বিষয়কে আলাদা করার চিন্তা করলাম, ততক্ষণ পর্যন্ত সন্তান ধারণ করতেও চাইনি। যখন নিজের শরীরকে একটি হাতিয়ার মনে হলো, তখনই মনে হলো একটি সন্তান নিতে চাই এবং তাকে এই বিশ্বে বড় করতে চাই।
২০২০ সালের মার্চে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন উইলিয়ামস। এক্ষেত্রে শুধু হরমোনগত চিকিৎসা নেয়া ছাড়া অন্য কোনো চিকিৎসা নেননি তিনি। ফলে স্বাভাবিক উপায়ে তিনি সন্তান ধারণ করেন। কিন্তু চারদিকে তখন করোনা মহামারিতে উদ্বেগ। চিন্তার রেখা দেখা দেয় তার কপালে। বলেন, চিন্তায় পড়ে গেলাম কিভাবে নিজেকে এবং সন্তানকে সুস্থ রাখবো তা নিয়ে।
২০২০ সালের অক্টোবরে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে সন্তান হাডসনের জন্ম দেন উইলিয়ামস। এ সময় হাসপাতালের নার্সরা তাকে সন্তানের ‘মা’ বলে ডাকতে থাকেন। কিন্তু উইলিয়ামসের মুখে তখনও দাড়ি। বক্ষদেশ সমতল। তা সত্ত্বেও তাকে মা বলে সম্বোধন করার কারণে তিনি হতাশ। তিনি বলেন, আমাকে একটিই জিনিস হতাশ করেছে। তা হলো আমাকে ভুল লি”ঙ্গে”র বলে সম্বোধন করা হয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আমাকে চিকিৎসা দেয়ার সময় মা বলে সম্বোধন করা হয়েছে। আমাকে কেউ ‘মম’, ‘মাদার’ বা ‘ম্যাম’ বলে সম্বোধন করলে তাতে কষ্ট পাই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।