বিনোদন ডেস্ক : ‘মাসুম’ ছবিতে শিশু অভিনেতা হিসাবে কাজ করেছিলেন যুগল হংসরাজ। তার পর ‘মহব্বতে’ ছবিতে কাজ করে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। প্রায় চার দশক ধরে বলিপাড়ার সঙ্গে জড়িত যুগল হংসরাজ। কখনো বড়পর্দার সামনে, কখনোবা ক্যামেরার পেছনে পরিচালক হিসাবে কাজ করেছেন তিনি।
নাসিরুদ্দিন শাহ, অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খানের মতো মহাতারকাদের সঙ্গেও অভিনয় করেছেন তিনি। বলিপাড়ার অধিকাংশ অনুমান করেছিলেন, শাহরুখ খানের পর যদি হিন্দি সিনেমা জগতে কোনো ‘রোম্যান্টিক হিরো’ আসেন, তা হলে তিনি যুগল ছাড়া অন্য কেউ হতে পারেন না।
অভিনয়ের পাশাপাশি রূপের জন্যও প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু অভিনয় নিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে ব্যর্থ হন তিনি। এমনকি বলি জগতের আলোর রোশনাই থেকেও নিজেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন যুগল। ১৯৭২ সালের ২৬ জুলাই মুম্বাইয়ে জন্ম যুগলের। ক্রিকেটার প্রবীণ হংসরাজ তার বাবা। তিনি বেশ কয়েকটি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন। মুম্বাইয়েই পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। স্কুলের গণ্ডি পার করার আগেই অভিনয়ে নামেন যুগল।
১৯৮৩ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় শেখর কাপুর পরিচালিত ‘মাসুম’ ছবিটি। এই ছবির মাধ্যমেই শেখর পরিচালনায় হাতেখড়ি। ছবিতে অভিনয় করেছিলেন নাসিরুদ্দিন শাহ, শাবানা আজমি ও সুপ্রিয়া পাঠক। ‘মাসুম’ ছবিতে শিশু অভিনেতা হিসাবে কাজ করেছিলেন ঊর্মিলা মাতণ্ডকর, আরাধনা শ্রীবাস্তব ও যুগল হংসরাজ। ১১ বছর বয়সে ক্যামেরার সামনে প্রথম অভিনয় করেছিলেন যুগল। শিশু অভিনেতা হিসাবে তার অভিনয় দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছিল।
‘মাসুম’ ছবিতে অভিনয়ের পর যুগলকে গুটিকয়েক হিন্দি ছবিতে কাজ করতে দেখা গেছে। ১৯৮৪ সালে ‘ঝুটা সচ’-এ অভিনয়ের পর ১৯৮৬ সালে ‘কর্ম’ এবং ‘সুলতানাত’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন তিনি। তার এক বছর পর ‘লোহা’ ও ‘হুকুমত’ ছবিতে শিশু অভিনেতা হিসাবে কাজ করেন যুগল। ছবিতে অভিনয়ের পাশাপাশি টেলিভিশন এবং খবরের কাগজের বিজ্ঞাপনের জন্য মডেলিং করতেন তিনি।
বিভিন্ন নামি সংস্থার বিজ্ঞাপনের প্রচারের মুখ হিসাবে কাজ করা শুরু করেছিলেন যুগল। তার পর বহু বছরের বিরতি। ১৯৯৪ সালে আবার বলিপাড়ায় ফিরে আসেন তিনি। ‘আ গালে লাগ যা’ ছবিতে ঊর্মিলার বিপরীতে অভিনয় করতে দেখা যায় যুগলকে। যুগলের প্রথম ছবিতে ঊর্মিলার সঙ্গেই কাজ করেছিলেন তিনি। ক্যারিয়ারের মাঝপথে আবার তার সঙ্গেই পর্দা ভাগ করে নতুন করে যাত্রা শুরু করেছিলেন তিনি। যদিও এই ছবিটি বক্স অফিস থেকে ভালো উপার্জন করতে পারেনি।
১৯৯৬ সালে ‘পাপা কেহতে হ্যায়’ ছবিতে ময়ূরী কঙ্গোর সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন তিনি। ছবিটি হিট না হলেও ছবির গানগুলো বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল। তার এক বছর পর ‘গুদগুদি’ নামের একটি হিন্দি ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন যুগল। কিন্তু তিন বছর একটানা কাজ করেও প্রচারে আসতে পারছিলেন না অভিনেতা। কাজের জন্য বহু জায়গায় অডিশন দিয়ে বেড়াচ্ছিলেন তিনি।
হঠাৎ যুগল খোঁজ পান, পরিচালক আদিত্য চোপড়া তার পরবর্তী ছবির জন্য নতুন মুখ খুঁজছেন। অডিশন দেওয়ার পর যুগলের ডাক আসে। ‘মহব্বতে’ ছবিতে অভিনয় করবেন বলে বহুদিন প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন তিনি। ২০০০ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত মহব্বতে ছবিতে শাহরুখ খান, অমিতাভ বচ্চন এবং ঐশ্বর্য রাই বচ্চনের মতো তারকাদের সঙ্গে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন যুগল। এই ছবিতে অভিনয়ের সূত্রেই যুগলের সঙ্গে আলাপ হয় অভিনেত্রী কিম শর্মার।
কিমের সঙ্গে যুগলের বন্ধুত্ব ক্রমশ গভীর হতে থাকে। বলিপাড়ায় কানাঘোষা শোনা যায় যে, একে অপরকে ডেট করতেও শুরু করেছিলেন তারা। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে কিমের সঙ্গে সম্পর্ক ভেঙে যায় অভিনেতার। যুগলের কাছে একের পর এক ছবির প্রস্তাব আসতে থাকে। কানাঘোষা শোনা যায় যে, প্রায় ৪০ ছবির প্রস্তাব একসঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন অভিনেতা। অভিনয় নিয়ে ক্যারিয়ারে এক লাফে অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে ফেলেছিলেন তিনি। কিন্তু অকালেই তার স্বপ্নভঙ্গ হয়।
যে ৪০টি ছবির জন্য যুগলকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, তার মধ্যে ৩৫টি ছবি তৈরির পরিকল্পনা গোড়াতেই নষ্ট হয়ে যায়। বাকি ৪-৫টা ছবির মধ্যে কোনো ছবির কাজ শুরু হওয়া মাত্রই থেমে গেছে বা কোনো ছবির কাজ মাঝপথে এসে আর এগোয়নি। যুগলের ক্যারিয়ারের ঝুলিতে ৪০ ছবির মধ্যে একটি ছবিও ঢোকেনি।
মুক্তি না পাওয়া ছবির কাজের জন্য যুগল এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে, টানা এক বছর তিনি অন্য কোনো নতুন ছবির জন্য অভিনয় করতে পারেননি। পরে ‘কভি খুশি কভি গম’, ‘সালাম নমস্তে’, ‘আজা নাচলে’ এবং ‘কহানি ২’র মতো বিভিন্ন ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন যুগল। ২০০৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘রোডসাইড রোমিও’ নামে একটি অ্যানিমেটেড ছবির চিত্রনাট্য লিখেছিলেন যুগল। এই ছবির পরিচালনার দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। এই ছবিতে কণ্ঠশিল্পী হিসাবে কাজ করেছিলেন জাভেদ জাফরি, সাইফ আলি খান এবং কারিনা কাপুর খান।
আন্তর্জাতিক স্তরে পুরস্কারের পাশাপাশি বহু পুরস্কার পেলেও ‘রোডসাইড রোমিও’ ছবিটি দেশে ভালো ব্যবসা করতে পারেনি। ২০১০ সালে ‘প্যার ইম্পসিবল’ নামে একটি রোম্যান্টিক ঘরানার ছবি পরিচালনা করেন যুগল। এই ছবিতে অভিনয় করেছিলেন প্রিয়াংকা চোপড়া জোনাস এবং উদয় চোপড়া। এই ছবিটিও বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। বলিপাড়া থেকে প্রশংসা না পাওয়ার কারণে যুগল নিজেকে ইন্ডাস্ট্রি থেকে দূরে সরিয়ে নেন। ২০১৪ সালে জ্যাসমিন ধিলোঁর সঙ্গে চারহাত এক করেন তিনি। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে দূরদূরান্তে কোনো সম্পর্ক ছিল না জ্যাসমিনের।
টাইটানিকের লোহা খাচ্ছে ভ.য়ঙ্কর প্রাণী, গভীর সমুদ্রে ঘটছে রহস্যজনক কাণ্ড
নিউইয়র্কের বাসিন্দা ছিলেন জ্যাসমিন। ব্যাংকে কর্মরত জ্যাসমিনের সঙ্গে যুগলের আলাপ হয় তাদের এক বন্ধুর সূত্রে। সেই আলাপ ধীরে ধীরে প্রেমে গড়ায়। বহু বছর তারা দুজন একে অপরকে ডেট করেছিলেন। তার পর ২০১৪ সালে বিয়ে করেন এই জুটি। তাদের এক পুত্রসন্তানও রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।