আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মাসের পর মাস ধরে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে একই ধরনের বিভিন্ন প্রশ্নের মাধ্যমে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে, আপনি কবে পদত্যাগ করবেন? খবর বিবিসি
যদিও তিনি জনমত জরিপে শক্তিশালী বিরোধী দলের উত্থান এবং ভোটারদের ক্রমাগত চাপের মধ্যে লিবারেল পার্টির প্রধান হিসেবে থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার দলের নেতাদের মধ্যে কোন্দল এবং অব্যাহত চাপের ফলে শেষ পর্যন্ত পদত্যাগের ঘোষণা দিলেন।
গতকাল সোমবার তিনি তার নিজ বাসভনের সামনে, ‘পদত্যাগের ঘোষণা দেয়ার সময় বলেন- আগামী নির্বাচনের জন্য তার দেশ একজন শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি দেখতে চায়। সুতরাং আমাকে যদি দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের সঙ্গে লড়াই করতে হয়, তাহলে আমার পক্ষে নির্বাচনে শক্তভাবে প্রতিদ্বন্দ্বি করা সম্ভব নয়।’
ট্রুডোর দল নতুন কোনো নেতা নির্বাচিত করার আগ পর্যন্ত কানাডার প্রধানমন্ত্রী এবং দলের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে আগামী ২৪ মার্চ পর্যন্ত পার্লামেন্ট স্থগিত থাকবে। এর মধ্যেই নতুন নেতা নির্বাচন করা হবে।
কে হতে পারে ট্রুডোর বিকল্প?
ট্রুডো গত এক দশক আগে কানাডার ক্ষমতা গ্রহণ করেছিলেন। প্রগতিশীল রাজনীতিবিদ হিসেবে তিনি বেশ সুনাম অর্জন করেন। ২০১৫ সালে তার রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি এবং যুবকদের দৃষ্টি কাড়ার ফলে তৃতীয় স্থানে থাকা লিবারেল পার্টিকে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতায় বিজয়ী করে ভোটাররা। যা কানাডার রাজনীতিতে বিরল।
৫৩ বছর বয়সী জাস্টিন ট্রুডো কানাডার দায়িত্ব গ্রহণের পর কাজ করেছেন- বারাক ওবামা, অ্যাঙ্গেলা মরকেল, শিনজো অ্যাবে এবং ডেভিড ক্যামেরুনের সঙ্গে। এসব রাজনীতিবিদরা রাজনীতি থেকে বিদায় নিলেও টিকে আছেন শুধু ট্রুডো। জি-৭ ভূক্ত সদস্য রাষ্ট্রের নেতা হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছেন ট্রুডো।
তবে গত বছর থেকে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে তার অবস্থার দুর্বল হতে থাকে। বিশেষ করে দুটি নির্বাচনের পর। এখন ট্রুডো ও তার দল একটি বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
কানাডার রাজনীতি নিয়ে কাজ করা সাংবাদিক এবং ‘জাস্টিন ট্রুডো অন দ্য রোপস’ বইয়ের লেখন পল ওয়েলস বিবিসিকে বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন ট্রুডোকে একজন সম্মানিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্মরণ করা হবে। কারণ তিনি জলবায়ু নীতি এবং উপজাতিদের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন।
তবে এটাও সত্য যে, বর্তমান পরিবর্তীত সময়ের সঙ্গে তিনি নিজেকে খাপ খাওয়াতে ব্যর্থ হয়েছেন।
এ সপ্তাহে ক্ষমতাসীন লিবারেল পার্টির জাতীয় নির্বাহী সদস্যরা বৈঠকে বসবেন। তারা দলের নেতৃত্বের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। খুব সম্ভবত বুধবারের পূর্বনির্ধারিত জাতীয় সম্মেলনের (ককাস) পর এই বৈঠক আয়োজিত হবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, নতুন নেতা বেছে নেওয়ার জন্য দল যাতে যথেষ্ঠ সময় পায়, সে জন্যই পার্লামেন্ট স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সম্ভাব্য বিকল্পদের মধ্যে আছেন ব্যাংক অব ইংল্যান্ড ও ব্যাংক অব কানাডা, উভয়ের সাবেক গভর্নর মার্ক কার্নি ও বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেলানি জোলি। পাশাপাশি, সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডও আছেন বিবেচনায়।
মন্ত্রিসভা থেকে ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ডের আকস্মিক পদত্যাগকে বিশ্লেষকরা ট্রুডোর পতনের অন্যতম কারণ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কানাডার পণ্য আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ কর আরোপের প্রতিক্রিয়া নিয়ে ট্রুডোর সঙ্গে মতভেদের জেরে তিনি পদত্যাগ করেন। এতে ট্রুডো বেশ বেকায়দায় পড়ে যান। এর পর মন্ত্রিসভায় বড় আকারে রদবদল করেও শেষরক্ষা হয়নি তার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।