বিনোদন ডেস্ক : প্রথম ধারাবাহিকেই মুঠোভর্তি উপার্জন। অঢেল প্রচার। এসবই তো আজকের প্রজন্মের তারকারা পেয়ে অভ্যস্ত। আমরা দায়ী করছি কাকে?
শ্রীলেখা মিত্রকে অনেক বিষয়েই সরব হতে দেখা যায়। টালিউডের অভিনেত্রীদের আত্মহত্যা নিয়েও তিনি কথা বলেছেন, এখনো বলে চলেছেন। ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, “রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য পড়েছি। তার যুক্তিগুলো একেবারে অগ্রাহ্য করা যায় না। পাশাপাশি এটাও ঠিক, ভেঙে পড়া, বিপর্যস্তের কাছে এই যুক্তি খাটে না। রচনা আসলে খুব দুঃখ, রাগ থেকে কথাগুলো বলে ফেলেছেন। তার আফসোস হয়েছে, কত সম্ভাবনা ছিল তাদের মধ্যে। জীবনে আরও কত কিছু করার ছিল। পাওয়ার ছিল। সেসব না দেখেই চলে গেলেন পল্লবী দে, বিদিশা দে মজুমদার, মঞ্জুষা নিয়োগী! তারপরও বলব, নিজেকে শেষ করে দেওয়ার আগের মুহূর্ত বড় ভয়ানক। তখন যুক্তি, বুদ্ধি, বিচার-বিবেচনা কিচ্ছু কাজ করে না।
কোনোভাবে ওই ব্যক্তি যদি সময়টাকে পেরিয়ে যেতে পারেন তাহলে তিনিই পরে নিজের ভাবনা নিয়ে লজ্জিত হন। তারও মনে হয়, ‘এ বাবা! আমি কী করতে যাচ্ছিলাম?’ এখনকার বড় সমস্যা কী জানেন? আমরা সবাই খুব একা। পুরোটাই সোশ্যাল মিডিয়ার সৌজন্যে। আমাদের সত্যিকারের বন্ধুর সংখ্যা কমে গিয়েছে। আমরা এখন ভার্চুয়াল দুনিয়ার বাসিন্দা। আমাদের যে সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলো ছিল, সেসব ধীরে ধীরে মরে যাচ্ছে। আগে বাড়িতে বাড়িতে আত্মীয়র আনাগোনা লেগেই থাকত। এখন আর কেউ কারো বাড়ি যান না! বন্ধুদের সঙ্গে বসে আড্ডা নেই। প্রযুক্তির মাধ্যমে পুরোনো বন্ধুত্ব ফিরে এসেছে। ফোন দিয়ে এখন অনেক কাজ করা যায়। কিন্তু এসবের জন্য আমরা কতটা তৈরি ছিলাম? তথাকথিত শিক্ষিতরাও কি এর যথাযথ ব্যবহার করে উঠতে পারছেন?
এখনকার মানুষজন যেন বড্ড ভোঁতা, অনুভূতিহীন। আমি যে লিখেছি, মৃত্যুর কথা শুনেও ‘হা হা’ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন! সেখানেও কিছুজন ওই হাসির ইমোজিই ব্যবহার করেছেন। ঈশ্বর না করুন, আজ যারা হা হা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন, তাদের বাড়িতে যদি এ রকম কিছু ঘটে? তখনো তারা হা হা প্রতিক্রিয়া জানাতে পারবেন তো? একই সঙ্গে সংবাদমাধ্যমকেও কিছু অংশে দায়ী করব। নাম না করেই বলছি, বিক্রি, পাঠকসংখ্যা বাড়াতে কিছু এমন মুখরোচক খবর তৈরি করা হয়, যা মানুষের মনে কিন্তু গভীর ছাপ ফেলে। এ ধরনের খবর পড়তে পড়তেও মানুষের মনুষ্যত্ব যেন কমে যাচ্ছে। প্রত্যেকটি খবর একে অন্যের সঙ্গে জড়িত। তাই শুধুই যারা আত্মহত্যা করছেন, তাদের দায়ী করলে চলবে না। আমাদের সমাজব্যবস্থা এর জন্য দায়ী। যারা কিছু না জেনে মন্তব্য করেন তারা দায়ী।
নিজের মেয়েকে মানুষ করতে গিয়ে আরও একটি উপলব্ধি হয়েছে। এখন আর আগের মতো কড়া শাসন করলে চলবে না। সময় বদলেছে। শাসনের ধারাও বদলাতে হবে। কখনো কড়া তো কখনো নরম হতে হবে। সবার আগে ছেলে-মেয়ের বন্ধু হয়ে উঠতে হবে। অভিভাবক কোনো ভুল করলে বা সঠিক সিদ্ধান্ত না নিলে তাদের কাছে নত হতে হবে। বলতে হবে, এটা আমার ভুল। তবেই সন্তান মা-বাবাকে ভরসা করতে পারবে। বাবা কঠোর হলে মাকে নমনীয় হতে হবে। আমি তো কিছু ভুল করে ফেললে আমার মেয়ে মাইয়্যাকে বলি, তোর হাত ধরেই আমার প্রথম মা হওয়া। তোর সঙ্গেই তাই আমিও বড় হচ্ছি। ভুল তো আমারও হতেই পারে।
আমরা ধাপে ধাপে অভিনয় দুনিয়ায় বড় হয়েছি। ধীরে ধীরে পারিশ্রমিক বেড়েছে। আমরা তাতেই অভ্যস্ত। এখনকার ছেলেমেয়েরা প্রথম ধারাবাহিকেই ৭০ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পাচ্ছেন। রাস্তাজুড়ে তাদের কাটআউট। বিজ্ঞাপনী প্রচারে রাতারাতি তারকা। যার জৌলুসে চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে। সেগুলো তো রক্ষা করতে হবে! সেই চাপ কিন্তু প্রবল। ফলে তারা শুরু থেকেই না চাইতে পেয়ে অভ্যস্ত। এতে কি তারা দায়ী?”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।