অনিন্দ্য সুন্দর পার্বত্য জেলা রাঙামাটির সিম্বল ‘ঝুলন্ত সেতু’। রূপ, বৈচিত্র্যে ভরপুর পার্বত্য জেলাটিকে তৎকালীন সরকার পর্যটন শহর হিসেবে ঘোষণা করেছিল।
পর্যটকদের আকর্ষণ করতে আশির দশকের গোড়ার দিকে পর্যটন করপোরেশন জেলা শহরের তবলছড়ি এলাকায় দুই পাহাড়ের সংযোগ ঘটিয়ে কাপ্তাই হ্রদের ওপর ‘ঝুলন্ত সেতু’ নির্মাণ করেছিল।
টানা বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢলের কারণে চলতি বছরের ৩০ জুলাই ঝুলন্ত সেতুটি কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ডুবে যায়। বর্তমানে সেতুটি একটানা এক পক্ষকাল হ্রদের পানিতে ডুবে আছে। অনেক পর্যটক এসময়ে ভুলবশত রাঙামাটিতে ভ্রমণে এসে ঝুলন্ত সেতুর এমন হাল দেখে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন।
সেতুটি নির্মাণের চার দশকেরও বেশি সময় পার হলেও এখনো দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এতটুকু আকর্ষণ কমেনি। এ সেতুটি দেখতে বছরে কয়েক লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটে পার্বত্য এ জনপদে। সেতুটি যিনি একবার দেখেছেন, সেতুর ওপর হেঁটেছেন তিনি বারবার এখানে ছুটে এসেছেন। বলা যায় সেতুর প্রেমের মায়ায় নিজেকে জড়িয়েছেন।
বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে পর্যটকরা নিজেদের স্মৃতি ধরে রাখতে নিজের, প্রিয়জন-স্বজনদের ছবি প্রিয় মোবাইল ফোনে ধারণ বা সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজেদের ছবিগুলো পোস্ট করছে। অনেকে আবার ঝুলন্ত সেতুর ভিডিও ধারণ করে ব্লগিং কিংবা ইউটিউবে আপলোড করেও পয়সা তুলছেন ঘরে।
যে সব পর্যটক রাঙামাটিতে আসেন তারা আগেই ছুটে যান ‘ঝুলন্ত সেতু’ এক পলক, এক নজরে দেখতে। রাঙামাটিতে বেড়াতে আসবেন আর ঝুলন্ত সেতু দেখা হবে না তাহলে তার ভ্রমণটা বৃথা গেল এমন ধারণা পর্যটকদের।
যে মায়াবী ‘ঝুলন্ত সেতু’ নিয়ে পর্যটকদের মাঝে এত শত আলোচনা, আকর্ষণ, সেই সেতুর উন্নয়ন নিয়ে ভাবছে না খোদ পর্যটন করপোরেশন।
ভরা বর্ষা মৌসুমে রাঙামাটির প্রকৃতি যখন নবরূপে ধরা দেয় ঠিক সেই সময়ে ঝুলন্ত সেতুটি কাপ্তাই হ্রদের অথৈ জলে হাবুডুবু খায়। যে কারণে পর্যটকরা বর্ষা মৌসুমে রাঙামাটির জল-পাহাড়ের সৌন্দর্য উপভোগ এবং স্মৃতি ধরে রাখতে পারলেও শেষ বেলায় ঝুলন্ত সেতু দেখার অতৃপ্ত বাসনা নিয়ে হতাশ হয়ে ফিরতে হয় তাদের।
ঝুলন্ত সেতুটি ডুবে যাওয়ার মূল কারণ হলো কাপ্তাই হ্রদের ড্রেজিং। বেশ কয়েক দশক ধরে বর্ষা মৌসুমে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে পলিমাটি এসে কাপ্তাই হ্রদে পড়ে। যে কারণে কাপ্তাই হ্রদের তলদেশ ভরাট হয়ে পড়েছে। এক দশক ধরে কাপ্তাই হ্রদের ড্রেজিং নিয়ে আলোচনা করা হলেও সেই আলোচনা ফাইল বন্দি রয়েছে।
বেশ কয়েক বছর ধরে সেতুটি সংস্কার করার ব্যাপারে রাঙামাটি জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে আওয়াজ উঠেছিল। তবে সেই আওয়াজও বন্ধ হয়ে গেছে।
পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঝুলন্ত সেতুটি একটু উঁচু করে তৈরি করলে হ্রদের পানিতে ডুববে না। সংস্কারের বাজেটও এত লাগবে না।
রাজশাহী থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক মো. মাসুদ রানা বলেন, সূদর রাজশাহী থেকে বউ-বাচ্চাসহ পুরো পরিবার নিয়ে এখানে বেড়াতে এসেছি। কিন্তু এসে দেখি যেটা টিভিতে দেখেছি, পত্রিকায় ছবি দেখি সেই আকর্ষণীয় ঝুলন্ত সেতুটি কাপ্তাই হ্রদের পানিতে ডুবে আছে। সেতুটির ওপর হাঁটার অনেক ইচ্ছে ছিল পরিবারের সবার। কিন্তু হতাশ হলাম।
এ পর্যটক আরও বলেন, এখানকার কর্তৃপক্ষ পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে সেতুটি যেন পানিতে না ডোবে এমন ব্যবস্থা করলে পর্যটকরা যেমন হতাশ হবে না তেমনি পর্যটন করপোরেশনও ভাল রাজস্ব পাবে।
মাসুদ রানার স্ত্রী রুবিনা বেগম বলেন, অনেক আনন্দ ও উৎফুল্ল মন নিয়ে রাঙামাটিতে বেড়াতে আসলাম স্বামী, সন্তান নিয়ে। কিন্তু সেতুটি ডুবে থাকায় শত আশা হতাশায় নিমজ্জিত হলো।
একই জেলা থেকে বেড়াতে আসা মো. রাহুল বলেন, সেতুটি ডুবে যাওয়া দুঃখের বিষয়। এসে ছবি তুলতে পারলাম না, সেতুতে উঠতে পারলাম না। নৌকা দিয়ে ঘুরে সময়টা কাটালাম।
রাঙামাটি পর্যটন ঘাটের ম্যানেজার ফখরুল আলম বলেন, কাপ্তাই হ্রদের ড্রেজিং না হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে ঝুলন্ত সেতুটি ডুবে যায়। যে কারণে এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকরা হতাশ হয়ে ফিরে যান। আমাদের বোট ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। তবে ঝুলন্ত সেতুটি সংস্কার করা গেলে পর্যটক সারা বছর এখানে আসবে।
রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ম্যানেজার আলোক বিকাশ চাকমা বলেন, পর্যটন করপোরেশনের পক্ষ থেকে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডকে একটি ডিউ লেটার দিয়েছি। কর্তৃপক্ষ যদি আধুনিক নতুন ‘ঝুলন্ত সেতু’ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে তাহলে আমরা আধুনিক ‘ঝুলন্ত সেতু’ পাবো, পর্যটকরা নব উদ্যমে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।