আন্তর্জাতিক ডেস্ক : কাশ্মীরকে স্বর্গরাজ্য বানানোর নামে ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারের ‘নয়া কাশ্মীর’ নীতির অন্তরালে লুকিয়ে থাকা ভয়ংকর ষড়যন্ত্র অবশেষে আন্তর্জাতিক পরিসরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। সম্প্রতি আল জাজিরার একটি বিস্ফোরক প্রতিবেদন এই ষড়যন্ত্রের নানা দিক তুলে ধরেছে। এই প্রতিবেদনে মোদি সরকারের পরিকল্পনাগুলোর যে অভ্যন্তরীণ উদ্দেশ্য ও বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে তা নতুন করে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে – মোদির লক্ষ্য কি সত্যিই কাশ্মীরকে পর্যটন স্বর্গ বানানো, নাকি এটি কেবলমাত্র রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার একটি পাঁয়তারা?
Table of Contents
আল জাজিরা: মোদির কাশ্মীর নীতির আড়ালে দমননীতি ও জনমিতিক রূপান্তর
আল জাজিরার বিশ্লেষণে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে, মোদি সরকারের কাশ্মীর নীতি মূলত এক ধরনের জনমিতিক রূপান্তরের অংশ। বিজেপি সরকারের অধীনে কাশ্মীরে যে নজরদারি ও দমননীতির বিস্তার ঘটেছে, তা কোনো স্বাধীন অঞ্চলের চিত্র নয়, বরং একটি দখলদার প্রশাসনের পরিচয় বহন করে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইন্টারনেট সংযোগ নিয়মিত বন্ধ রাখা, রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেপ্তার, এবং নির্বাচনী সীমানা পুনর্নির্ধারণের মাধ্যমে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলোকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এসব কার্যক্রম কাশ্মীরের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক কাঠামো বদলানোর পরিকল্পিত প্রচেষ্টা।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে মোদি ঘোষণা দেন কাশ্মীরকে ‘সন্ত্রাসমুক্ত পর্যটন স্বর্গ’ বানানোর। সে অনুযায়ী বিশ্ববাসীর সামনে চমকপ্রদ রূপরেখা উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা একেবারে ভিন্ন। পেহেলগামে নারকীয় হামলার ঘটনা এবং তারপরে সরকারের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে দোষারোপ করা, একটি পরিচিত কৌশল মাত্র। আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই হামলার পেছনে পাকিস্তান নয়, বরং সরকারের ত্রুটিপূর্ণ নীতির প্রভাবই বড় কারণ।
কাশ্মীর সংকটে মোদির রাজনীতি: অভ্যন্তরীণ জাতীয়তাবাদ জোরদারের কৌশল
আল জাজিরার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মোদি সরকার কাশ্মীর সংকটকে দেশের অভ্যন্তরে উগ্র জাতীয়তাবাদ উসকে দেওয়ার কৌশল হিসেবে ব্যবহার করছে। হামলার পর কাশ্মীরি ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অংশে বৈরী মনোভাব প্রকট আকার ধারণ করেছে। কাশ্মীরি ভাড়াটিয়াদের উচ্ছেদ, চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা এবং সামাজিক মাধ্যমে ঘৃণার প্রচার এরই প্রমাণ।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক প্রবীণ দন্থীর মতে, কেন্দ্রীয় সরকার কাশ্মীরবাসীর বাস্তব চাহিদা ও দুঃখ-দুর্দশা সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। পেহেলগামের ঘটনা এই অজ্ঞতারই প্রতিফলন। তিনি মনে করেন, স্থায়ী সমাধান কখনোই কাশ্মীরবাসীকে উপেক্ষা করে সম্ভব নয়।
অন্যদিকে, ঐতিহাসিক সিন্ধু চুক্তি স্থগিত করে ভারত যে রাজনৈতিক প্রতিশোধ নিয়েছে, তা দুই দেশের সাধারণ মানুষের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এর ফলে কেবল রাজনৈতিক নয়, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত সংকটও সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিজেপির দৃষ্টিভঙ্গি: আদর্শিক লড়াই নাকি বাস্তব উন্নয়ন?
কাশ্মীরকে আদর্শিক রণক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিতকরণ
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী সুমানন্দ্র বোস আল জাজিরাকে বলেন, বিজেপি কাশ্মীরকে একটি আদর্শিক যুদ্ধক্ষেত্র মনে করে, যেখানে বাস্তব পরিবর্তনের চেয়ে আদর্শগত অবস্থানই মুখ্য। উন্নয়নের কথা বলা হলেও তার পেছনে কোনো সুনির্দিষ্ট রূপরেখা বা স্থানীয় মতামত গ্রহণের চিহ্ন নেই। বরং সরকারি নীতিমালাগুলো আরও বেশি দমনমূলক ও একপাক্ষিক হয়ে উঠছে।
‘নয়া কাশ্মীর’ নীতি: উন্নয়নের আড়ালে কৌশলী বিভাজন
বহির্বিশ্বে কাশ্মীরকে পর্যটনের কেন্দ্রে পরিণত করার প্রচার চালালেও, অভ্যন্তরীণ বাস্তবতায় সেখানে চলমান দমননীতি ও জনবিচ্ছিন্নতা প্রকট। এতে বোঝা যায়, ‘নয়া কাশ্মীর’ প্রকল্পটি আসলে উন্নয়নের আড়ালে একটি দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক প্রকল্প যা হিন্দুত্ববাদী আদর্শকে প্রতিষ্ঠা ও বিস্তার করতে সহায়তা করছে।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ
আল জাজিরার প্রতিবেদন প্রকাশের পর আন্তর্জাতিক মহলে প্রতিক্রিয়ার ঝড় উঠেছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো কাশ্মীরে ভারত সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসংঘের একাধিক প্রতিনিধিও এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন যে, কাশ্মীরে মানুষের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের কূটনীতিক ও মিডিয়াও এখন কাশ্মীর সংকট নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। এটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, মোদি সরকারের নীতিমালা শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্বার্থেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তার প্রভাব আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও পড়ছে।
এই সমস্ত তথ্যের আলোকে বলা যায়, আল জাজিরার প্রতিবেদনে যেভাবে মোদি সরকারের কাশ্মীর নীতির অন্তরালের বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি কেবল একটি প্রতিবেদন নয়, বরং কাশ্মীরের মানুষের বাস্তবতা এবং ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনৈতিক অভিসন্ধির চিত্রও প্রকাশ করে।
FAQs
- আল জাজিরা কাশ্মীর নিয়ে কী বলেছে?
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোদি সরকার কাশ্মীরে জনমিতিক রূপান্তর ও দমননীতি চালাচ্ছে। - পেহেলগামের হামলার জন্য কে দায়ী?
সরকার পাকিস্তানকে দায়ী করলেও বিশ্লেষকরা মনে করেন এটি সরকারের কৌশলগত ভুলের ফলাফল। - কাশ্মীর সংকটে বিজেপির ভূমিকা কী?
বিজেপি কাশ্মীরকে একটি আদর্শিক যুদ্ধক্ষেত্র হিসেবে দেখছে এবং বাস্তব উন্নয়নের পরিবর্তে আদর্শ প্রতিষ্ঠা করছে। - আন্তর্জাতিক মহলের প্রতিক্রিয়া কেমন?
বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংগঠন কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। - মোদি সরকারের কাশ্মীর নীতি কী সত্যিই পর্যটন উন্নয়নের জন্য?
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, এটি রাজনৈতিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট এবং জাতীয়তাবাদ উসকে দেওয়ার একটি কৌশল।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।