বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক : বর্তমান বিশ্বে প্রযুক্তি যেভাবে এগিয়ে চলেছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে উড়ন্ত গাড়ি রাস্তায় চলাচল করবে তা আর আশ্চর্যের বিষয় নয়। এই স্বপ্নকে সত্যি করে দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার নির্মাতা সংস্থা ‘আলেফ অ্যারোনটিকস’। তারা বিশ্বের প্রথম বৈদ্যুতিক উড়ন্ত গাড়ি তৈরি করে এর একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে গাড়িটি রাস্তায় চলতে চলতে হঠাৎ করে অন্য গাড়ির ওপর দিয়ে উড়ে যাচ্ছে।
নির্মাতা সংস্থাটি তাদের এই মডেলের নাম দিয়েছে ‘আলেফ মডেল এ’। এটি সড়ক ও বিমান উভয় মাধ্যমেই চলতে সক্ষম। ভিডিও ক্লিপে যে উড়ন্ত গাড়ি দেখানো হয়েছে সেটি ছিল আলেফ মডেল জিরোর একটি হালকা সংস্করণ। ভবিষ্যতে বাজারে যে গাড়িটি পাওয়া যাবে সেটি হবে ‘আলেফ মডেল এ’। এই গাড়িতে দুইজন লোক বসতে পারবে। এটি একবার চার্জ দিলে ১১০ মাইল পর্যন্ত উড়তে পারবে এবং ২০০ মাইল পর্যন্ত চালানো যাবে। আশা করা হচ্ছে, এই গাড়ি অটো পাইলট মোড অর্থাৎ নিজে থেকেই উড়তে পারবে। চালকের প্রয়োজন হবে না।
আলেফ মডেল এ গাড়িটি সাধারণ গাড়ির মতোই রাস্তায় চলতে পারে। এর চারটি চাকায় চারটি ছোট ইঞ্জিন রয়েছে, যা এটিকে সাধারণ বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো চলতে সাহায্য করে। এটি অন্য সাধারণ গাড়ির মতোই পার্কিং করতে পারে।
অন্যান্য উড়ন্ত গাড়ি থেকে এটি আলাদা, কারণ এটি একই সঙ্গে রাস্তায় চলতে ও আকাশে উড়তে পারে। হোন্ডা, হুন্দাই, বিএমডব্লিউ এর মতো কোম্পানিগুলো এর আগে যে উড়ন্ত গাড়ি তৈরি করেছে, সেগুলো শুধু উড়তে পারত রাস্তায় সাধারণ গাড়ির মতো চলতে পারত না। সে জন্য তাদের এই গাড়িগুলোকে হেলিকপ্টারের সঙ্গে তুলনা করা হতো। কিন্তু এই নতুন মডেল এ গাড়িটি রাস্তায় চলতে পারার কারণে একটি বিশেষ সুবিধা পাবে।
তবে বলা হচ্ছে, এই উড়ন্ত গাড়িটি জার্মানির দ্রুতগতির হাইওয়েগুলোতে চালানোর জন্য যথেষ্ট দ্রুত নয়। এর সর্বোচ্চ গতি ঘণ্টায় ২৫ মাইল। যা শহরতলির জন্য ঠিক আছে। কিন্তু হাইওয়ের জন্য যথেষ্ট নয়। তবে এক বছরেরও কম সময়ের মধ্যে মডেল এ যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন থেকে বিশেষ এয়ারঅর্ডিনেস সার্টিফিকেশন পেয়েছে। এই ধরনের যানগুলোর মধ্যে এটিই প্রথম এই স্বীকৃতি পেল। এমনকি আলেফ একটি গাড়ি ডিলারশিপের মাধ্যমে গাড়ি বিক্রি করার জন্য প্রি-অর্ডার সহ প্রথম কোম্পানি হয়ে উঠেছে।
পাইলটের জীবন বাঁচাতে ইজেকশন পদ্ধতি
আলেফ জানিয়েছে, তাদের উড়ন্ত গাড়িটি শতভাগ বৈদ্যুতিক। গাড়িটি যেকোনো রাস্তায় চলতে পারে এবং খাড়াভাবে উড়তে ও নামতে পারে। বোয়িং এবং এয়ারবাসের মতো বড় কোম্পানিগুলো বিমান তৈরির জন্য যে যন্ত্রাংশ ব্যবহার করে, সেই একই যন্ত্রাংশ সরবরাহকারী কোম্পানি সঙ্গে এই গাড়িটি তৈরিতে কাজ করা হয়েছে।
বৈদ্যুতিক উড়ন্ত গাড়িটি ইতিমধ্যেই ৩ হাজার ৩০০টিরও বেশি প্রি-অর্ডার পেয়েছে। এই গাড়ির দাম প্রায় ৩ লাখ ডলার থেকে শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৩ কোটি ৬৪ লাখ ৬০ হাজার। কেউ যদি এখনই এই গাড়িটির প্রি-অর্ডার করতে চায় তাহলে আলেফের ওয়েবসাইটে গিয়ে ১৫০ ডলার জমা দিয়ে প্রি-অর্ডার করতে হবে। আর যদি কেউ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই গাড়িটি পেতে চায়, তাহলে ১ হাজার ৫০০ ডলার জমা দিয়ে অগ্রাধিকার সারিতে নিজের স্থান নিশ্চিত করতে হবে।
গাড়ি যুক্তরাজ্যে কেন বাঁয়ে, যুক্তরাষ্ট্রে কেন ডানে চলে
আলেফ অ্যারোনটিকস এই বছরের শেষের দিকে ‘মডেল এ’ তৈরি করা শুরু করার পরিকল্পনা করেছে। এর পরেই প্রথম গাড়িগুলো গ্রাহকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে। আলেফ এখন তাদের দ্বিতীয় উড়ন্ত গাড়ি ‘মডেল জেড’ নিয়ে কাজ করছে। এটি ২০৩৫ সালে বাজারে আসবে। এই উড়ন্ত গাড়িটিতে চারজন লোক বসতে পারবে। এটি একবার চার্জ দিলে রাস্তায় ৪০০ মাইল পর্যন্ত চলতে পারবে এবং আকাশে ২০০ মাইল পর্যন্ত উড়তে পারবে।
বডিবিল্ডার কনের বিয়ের ভিডিও ভাইরাল, প্রশংসায় মেতেছেন নেটিজেনরা!
এই উদ্ভাবনটি সত্যিই বিজ্ঞান কল্পকাহিনীকে হার মানিয়েছে। যানজটের সমস্যায় জর্জরিত শহরগুলোর জন্য এটি একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে। হয়তো খুব শীঘ্রই আমরা দেখব মানুষ উড়ন্ত গাড়িতে করে অফিসে যাচ্ছে। তবে এই প্রযুক্তি এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। এর নিরাপত্তা, পরিবেশের ওপর প্রভাব এবং সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্যতা নিয়ে আরও অনেক কাজ বাকি আছে।
সূত্র: নিউ ইয়র্ক পোস্ট, ইলেকট্রিক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।