ধর্ম ডেস্ক : মানুষ সৃষ্টির সেরা জীব। মানুষ তার এ বৈশিষ্ট্যের জন্য আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে মহান স্রষ্টা তেমনই চান। আল্লাহ চান মানুষ আল্লাহ ছাড়া কারোর মুখাপেক্ষী হবে না। মানুষ হবে আত্মমর্যাদাশীল। আল্লাহ মানুষসহ জীবজগতের সব প্রাণীর রিজিকদাতা। তবে ।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৭০) আল্লাহ রিজিক দেন ভেবে মানুষ তার জীবিকার অন্বেষণ থেকে বিরত থাকবে, অন্যের কাছে হাত পাতবে এমনটি আল্লাহর পছন্দনীয় নয়। মহানবী (সা.) নিজে জীবিকার জন্য ব্যবসাবাণিজ্য করেছেন। হজরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে রসুল (সা.) পর্যন্ত ১ লাখ ২৪ হাজার বা ২ লাখ ২৪ হাজার নবী-রসুলের সবাই জীবিকার জন্য পরিশ্রম করেছেন। নবী জাকারিয়া (আ.) কাঠমিস্ত্রির কাজ করে পরিবারের জীবিকার ব্যবস্থা করতেন। সাহাবি আবদুর রহমান আওফ ইবনে মালেক বলেন, ‘আমরা রসুল (সা.)-এর দরবারে তখন সাত-আটজন কিংবা নয়জন ছিলাম।
মহানবী (সা.) আবারও বললেন, তোমরা কি আল্লাহর রসুলের হাতে বায়াত গ্রহণ করবে না? আমরা তখন হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, ইয়া রসুলুল্লাহ! আমরা তো আপনার হাতে বায়াত গ্রহণ করেছি। এখন আবার কীসের বায়াত গ্রহণ করব? নবীজি বললেন এই মর্মে শপথ নাও- কেবল আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সঙ্গে কাউকে শরিক করবে না। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে, নেতার কথা মেনে চলবে। তারপর নবীজি নিচু স্বরে একটি গোপন কথা বললেন, আর মানুষের কাছে কিছুই চাইবে না।
সাহাবি বলেন, আমি তাঁদের কাউকে কাউকে দেখেছি, হাতের ছড়িটি পড়ে গেলেও অন্যকে তুলে দেওয়ার জন্য বলতেন না।’ (রিয়াজুস সালেহিন, মুসলিম) মানুষ অন্যের কাছে তখনই হাত পাতে যখন সে নিজের প্রয়োজন মেটাতে ব্যর্থ হয়। অন্যের কাছে হাত পাতা কোনোমতেই আত্মমর্যাদার প্রতি সুবিচার করে না। সাওবান (রা.) বলেন, ‘একবার হজরত রসুল (সা.) বললেন, কে আমার জন্য এ মর্মে দায়িত্ব নেবে যে মানুষের কাছে চাইবে না আর আমি তার জন্য বেহেশতের দায়িত্ব নেব। বললাম, আমি। (তারপর থেকে হজরত সাওবান (রা.) কারও কাছে কিছু চাইতেন না)।’ (রিয়াজুস সালেহিন) ইসলামে মানুষের আত্মমর্যাদার প্রতি কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তার উদাহরণ রসুল (সা.)-এর একটি হাদিস। সাহল ইবনে সাদ থেকে বর্ণিত, হজরত জিবরাইল (আ.) রসুল (সা.)-কে বলেছেন, ‘মোমিনের মর্যাদা তাহাজ্জুদের রাতজাগরণে আর তার সম্মান মানুষ থেকে অমুখাপেক্ষিতার মধ্যে নিহিত।’ (মুসদাতরাকে হাকেম) রসুল (সা.) অনুসারীদের স্বাবলম্বী হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। অন্যের কাছে হাত পাতাকে নিরুৎসাহ করেছেন। ভিক্ষার হাতকে কাজের হাতে পরিণত করার তাগিদ দিয়েছেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত;
তিনি বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তি ছাড়া আর কারও হাত পাতা জায়েজ নয়। ১. সর্বনাশা অভাবে পতিত ব্যক্তি ২. ঋণে জর্জরিত ব্যক্তি ও ৩. পীড়াদায়ক রক্তপণে (দিয়াত) দায়বদ্ধ ব্যক্তি।’ (আবু দাউদ থেকে মিশকাতে)। স্মর্তব্য এক আনসার এসে রসুল (সা.)-এর কাছে ভিক্ষাপ্রার্থনা করে। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার ঘরে কি কিছুই নেই? সে বলল, একটি দামি কম্বল আছে, যার একাংশ আমার গায়ে দিই, অন্য অংশ বিছিয়ে থাকি এবং একটি কাঠের পেয়ালা আছে, যাতে আমরা পানি পান করি। রসুল (সা.) বললেন, দুটি জিনিসই আমার কাছে নিয়ে আসো। সে তা নিয়ে এলে রসুল (সা.) কম্বল ও পেয়ালা হাতে নিয়ে বললেন, এ দুটি জিনিস খরিদ করতে কেউ প্রস্তুত আছ? এক ব্যক্তি বলল, আমি এক দিরহামে কিনতে রাজি আছি।
রসুল (সা.) দুই অথবা তিনবার বললেন, কে এক দিরহামের বেশি দিতে পারে? এক ব্যক্তি উঠে বলল, আমি দুই দিরহাম দিতে রাজি আছি। রসুল (সা.) জিনিস দুটি তাকে দিয়ে দিরহাম দুটি গ্রহণ করলেন। তিনি তা আনসার ব্যক্তির হাতে দিয়ে বললেন, যাও এক দিরহাম দিয়ে খাদ্য কেনো এবং নিজের পরিবারপরিজনকে খাওয়াও।
আর অন্যটি দিয়ে একটি কুঠার কিনে তা আমার কাছে নিয়ে আসো। আনসার ব্যক্তিটি কুঠার কিনে রসুল (সা.)-এর কাছে নিয়ে এলো। তিনি নিজ হাতে তাতে কাঠের হাতল লাগিয়ে দিয়ে বললেন, যাও কাঠ কেটে তা বিক্রি কর। লোকটি চলে গেল এবং রসুল (সা.)-এর কথামতো কাঠ কেটে বিক্রি করতে লাগল। ১৫ দিন পর সে রসুল (সা.)-এর কাছে উপস্থিত হলো। তখন সে ১০ দিরহামের মালিক। সে তার কিছু দিয়ে কাপড়চোপড় কিনল এবং কিছু দিয়ে খাদ্যদ্রব্য কিনল। রসুল (সা.) তাকে বললেন, (শ্রমের মাধ্যমে উপার্জন) তোমার জন্য অন্যের কাছে সাহায্য চাওয়া অপেক্ষা অধিক উত্তম। কারণ ভিক্ষাবৃত্তির লাঞ্ছনাকর চিহ্ন কেয়ামতের দিন চেহারার ওপর দাগস্বরূপ হবে। (আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ ও ইবনে মাজা)। রসুল (সা.) জীবিকার জন্য নিজেও কঠোর পরিশ্রম করেছেন। মোমিনরা যাতে পরনির্ভর না হয় সেজন্য তাদেরও হালাল পথে উপার্জনের পরামর্শ দিয়েছেন। আমাদের সবারই উচিত তাঁর আদর্শ অনুসরণ করা।
লেখক :এম এ মান্নান
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।